- এই মুহূর্তে দে । শ
- জানুয়ারি ১৭, ২০২৪
রামমন্দির উদ্বোধনে গেরুয়া কর্মসূচীর পাল্টা, ২২ জানুয়ারি নিজেদের মতো করে উদযাপন পরিকল্পনা বিরোধীদের
২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধনে ইন্ডিয়া জোট শরিক নেতারা যাচ্ছেন না, তবে ইন্ডিয়া জোটের বেশিরভাগ শরিক দলই ২২ জানুয়ারি দিনটিকে নিজেদের মতো করে উদযাপন করছেন। এই তালিকায় রাহুল গান্ধি থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উদ্ধব ঠাকরে সহ অনেকেই আছেন, যাঁরা ২২ জানুয়ারি নরেন্দ্র মোদির রামমন্দির উদ্বোধন করাকে ধর্মের রাজনীতিকরণ বলে সমালোচনা করেছেন। এই কারণেই ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন ও রামলালার মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার, ২২ জানুয়ারি, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের বিতর্কিত ‘প্রাণ প্রতিষ্টা’ বা পবিত্রীকরণ অনুষ্ঠানের সূচনা করবেন। ক্ষমতাসীন বিজেপি কর্তৃক একটি ঐশ্বরিক স্বপ্নের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তি হিসাবে দিনটি উদযাপন করবে। অযোধ্যা শহরে এই কারণে একটি নতুন বিমানবন্দর তৈরি এবং রেলওয়ে স্টেশন সংস্কার করা হয়েছে৷
অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রিতদের তালিকায় ১০ হাজারের বেশি অতিথির নাম আছে। যদিও আমন্ত্রণ পেয়েও কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধি এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সহ প্রবীণ বিরোধী নেতারা কেউই এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না।
‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’-র প্রতি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যে সংবাদ শিরোনামে এসেছে। বিরোধী ইন্ডিয়া জোট শরিকদের অভিযোগ, একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে। কংগ্রেস “ধর্ম একটি ব্যক্তিগত বিষয়” বলে রামমন্দির উদ্বোধনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে; সাংসদ রাহুল গান্ধি মঙ্গলবার রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে “নরেন্দ্র মোদির অনুষ্ঠান” বলেছেন কটাক্ষ করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি নিজেকে বিজেপির অদম্য শত্রু বলে দাবি করে বলেছেন, বিজেপি ধর্ম-রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে।
এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার, আরজেডি প্রতিষ্ঠাতা লালু প্রসাদ যাদব, এবং শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা উদ্ধব ঠাকরে সকলেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে অন্যদের চেয়ে আরও সূক্ষ্মভাবে বিজেপির সমালোচনা করে বলেছেন, একটি নির্মাণাধীন মন্দির উদ্বোধন করার জন্য বিজেপির তাড়াহুড়ো পড়ে গিয়েছে। আসলে এই রামমন্দিরকে সামনে রেখে বিজেপি তার ভোটব্যাংক শক্তিশালী করতে উদ্যোগী হয়েছে।
তবে রামমন্দির উদ্বোধন ইস্যুতে বিরোধীরা জানে যে তারা রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ বা রাম মন্দিরকে পুরোপুরি অবহেলা করতে পারবে না; তা করলে এই বছর বিজেপিকে পরাজিত করার জন্য অনেক বেশি ভোটার তাদের দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে৷ অতএব, কংগ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মউদ্ধব ঠাকরে এবং অন্যরা ২২ জানুয়ারী তাঁদের নিজস্ব পদ্ধতিতে দিনটিকে উদযাপন করে খবরের শিরোনামে থাকার উদ্যোগ নিয়েছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে ২২ জানুয়ারি হাজরা থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত সম্প্রীতি মিছিল করবেন। বিভিন্ন মন্দির সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “এ সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই… ধর্ম একটি ব্যক্তিগত বিষয়”।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সম্প্রীতি মিছিল দক্ষিণ কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানে শেষ হবে এবং সেখানে একটি সভা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ” সম্প্রীতি মিছিলে সমস্ত সম্প্রদায়ের লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং মিছিলের যাত্রাপথে মন্দির, গীর্জা, গুরুদ্বার এবং মসজিদের পবিত্র স্পর্শ থাকবে।”
রাহুল গান্ধি ১৪ জানুয়ারি তাঁর দ্বিতীয় ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা করছেন ভারত জোড়ো যাত্রার একটি ফলোআপ হিসাবে, প্রথম যাত্রা থেকে কংগ্রেসকে গত বছর তেলেঙ্গানা এবং কর্ণাটক নির্বাচনে জয়ী হয়ে যাত্রার ডিভিডেন্ড ঘরে তুলেছে।
২২ জানুয়ারি রাহুল গান্ধি এই ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার জন্য আসামে থাকবেন এবং দিনের কার্যক্রমের অংশ হিসাবে একটি মন্দির পরিদর্শন করবেন। শরদ পাওয়ার, অখিলেশ যাদব সতর্কতা অবলম্বন করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, এমনকি আমন্ত্রণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কিন্তু বলেছেন যে রামমন্দির উদ্বোধনের ঐতিহাসিক ঘটনার পরে দর্শনে যাবেন, কারণ তখন দর্শন করা সহজ হবে। তখন রাম মন্দির নির্মাণও শেষ হয়ে যাবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল এখনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে জাতীয় রাজধানী জুড়ে রামায়নের “সুন্দর কাণ্ড” এবং “হনুমান চালিসা” পাঠ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন অরবিন্দ।
উদ্ধব ঠাকরে ও তাঁর দলের নেতারা ২২ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের নাসিকে কালারাম মন্দির পরিদর্শন করবেন এবং একটি “মহা আরতি” করবেন।
ভগবান রামকে উৎসর্গীকৃত, কালো পাথর দিয়ে খোদাই করা মূর্তির জন্য মন্দিরটির নামকরণ করা হয়েছে কালারাম মন্দির। বিশ্বাস যে রাম তাদের বনবাসের সময় সীতা ও লক্ষ্মণের সাথে পঞ্চবতীতে অবস্থান করেছিলেন, যা নাসিক অঞ্চলে অবস্থিত।
আমন্ত্রণ পাওয়ার পর লালু প্রসাদ যাদব বুধবার বলেছেন যে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না এবং তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন ডিএমকে নেতা ইতিমধ্যেই আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান হাইজ্যাক করার জন্য বিজেপির নিন্দা করেছে বলেছেন, নির্বাচনের আগে ভোটকে প্রভাবিত করার জন্য ধর্মের নামে বিজেপি রাজনীতি করছে রামমন্দির উদ্বোধন নিয়ে।
এই প্রসঙ্গে সিপিআইএম নেতৃত্ব সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাতরা তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমরা মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান করি। কিন্তু বিজেপি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করছে, তাই আমরা এই অনুষ্ঠানে যাবো না।”
এদিকে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সময়ই ওড়িশায় জগন্নাথ হেরিটেজ করিডোর উন্মোচনের জন্য বড় পরিকল্পনা রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের এই পদক্ষেপ একটি কৌশলী পদক্ষেপ, তবে তা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুভূতিকে বাড়িয়ে তুলতে নয়, রাজ্যে বিজেপিকেও প্রতিহত করার প্রয়াস।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পরিকাঠামো পরিবর্তনের লক্ষ্যে ‘আমা ওডিশা, নবীন ওড়িশা’ প্রকল্পের অধীনে একটি স্মরণীয় প্রচেষ্টায় রাজ্য ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে। রামমন্দির নির্মাণে এখনও পর্যন্ত যা অনুদানের হিসেব পাওয়া যাচ্ছে তাতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আগামী এপ্রিল/মে মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন হতে চলেছে। এই মন্দিরকেই ভারতীয় জনতা পার্টি ভোট প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলে ধরবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই রামমন্দিরকে কেন্দ্র করেই নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় বারের জন্য দেশের ক্ষমতায় আসবে বলে দাবি করছে বিজেপি। বিজেপি মনে করে নিশ্চিতভাবেই এই তৃতীয়বার মেদির ক্ষমতায় আসা একটি অভূতপূর্ব ঘটনা হয়ে উঠবে।
সোমবারের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই অযোধ্যায় শুরু হয়েছে শাস্ত্রীয় আচার মেনে মন্দির উদ্বোধনের সূচনা। নরেন্দ্র মোদি ওই দিন রামমন্দির উদ্বোধন করে, রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন এবং ভাষণ দেবেন।
❤ Support Us