Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • জানুয়ারি ২৩, ২০২৪

বিনা বিচারেই জেলে আটক গণআন্দোলন কর্মীরা, প্রতিবাদ উমরের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
বিনা বিচারেই জেলে আটক গণআন্দোলন কর্মীরা, প্রতিবাদ উমরের

২০২০-র জানুয়ারিতে একটি সাক্ষাৎকারে উমর খালিদ নিজের সম্বন্ধে বলেছিলেন, তিনি একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আদিবাসীদের উপর গবেষণা করা একজন গবেষক হয়েছেন, তবে তিনি একজন ৩২ বছর বয়সী বেকার, ভারতীয় নাগরিক।

উমর খালিদ বলেছিলেন, “আদর্শগতভাবে, আপনি বলতে পারেন, আমি একজন উগ্র গণতন্ত্রী। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং আমি এমন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি যা একজন নাগরিকের ভোট না দেওয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। গণতন্ত্রকে দৈনন্দিন জীবনে এমনভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে যাতে আপনি গণতান্ত্রিক কাজকর্মের সাথে আপনার সমস্যা এবং উদ্বেগের কথা বলতে পারেন।”

২০১৩ সালে একজন কাশ্মীরি ব্যক্তির ফাঁসিকে কেন্দ্র করে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রতিবাদ সংগঠিত করার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত পাঁচজন ভারতীয় ছাত্রের একজন হিসাবে উমর খালিদ ২০১৬ সালে বিশিষ্টতা অর্জন করেছিলেন।

উমর খালিদ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রের সাথে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং কয়েক মাস পরে জামিনও পেয়েছিলেন। ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্ট সাময়িকভাবে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রদ্রোহ আইন স্থগিত করে, যতক্ষণ না আইনের বৈধতা আদালত দ্বারা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারকে সমস্ত বিচার বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।

চার বছর পর, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে উমর খালিদকে আবার গ্রেপ্তার করা হয় এবং দিল্লিতে সহিংস সংঘর্ষে ৫৩ জন নিহত হওয়ার জন্য “মূল ষড়যন্ত্রকারী” হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মাসব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে ভারতের রাজধানীতে ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল।

এরপর থেকে শহরের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে বন্দি রয়েছেন উমর খালিদ। ৩৬ বছর বয়সী উমর খালিদ বলেছেন যে তিনি শুধুমাত্র একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন।

উমর খালিদের বিরুদ্ধে থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। একটি মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে, অন্যটিতে, তাঁকে এখনও আদালতে অভিযুক্ত করা হয়নি এবং সেই মামলার বিচার শুরু হয়নি। দ্বিতীয় মামলায় দুবার তাঁর জামিন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তিনি দীর্ঘ কারাবাসের সম্মুখীন হয়েছেন কারণ তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন বা ইউএপিএ ধারায় মামলা চালু করেছে, যা একটি কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইন, এই আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় জামিন পাওয়া তাঁর পক্ষে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এর ফলেই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বছরের পর বছর তাঁকে জেলে আটকে থাকতে হবে।

দিল্লি হাইকোর্ট বলে যে অজ্ঞাতনামা প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের জানিয়েছে যে জনাব উমর খালিদ নরেন্দ্র মোদি সরকারকে উৎখাত করতে উস্কানিমূলক বক্তৃতা করেছিলেন। তাঁকে জামিন দিতে অস্বীকার করার সময়, দিল্লি হাইকোর্ট আরও বলেছিল যে জনাব খালিদ একটি বৈপ্লবিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, যা কখনই রক্তপাতহীন হতে পারে না। তবে জনাব খালিদ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ধারাবাহিকভাবে কোনও উস্কানিমূলক বক্তৃতা বা সহিংসতা উসকে দেওয়ার কথা  অস্বীকার করেছেন।

তবে ট্রায়াল কোর্ট এবং দিল্লি হাইকোর্ট তাঁকে জামিন অস্বীকার করে, তারা উমর খালিদের বক্তব্যে আশ্বস্ত নয়; তারা বিশ্বাস করে জনাব খালিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য। তবে আইনী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনাব খালিদের বিরুদ্ধে যে প্রমাণ পাওয়া গেছে তা “দুর্বল”।

২০২২ সালের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রাক্তন বিচারক, হাইকোর্টের তিনজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং একজন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র সচিব দিল্লির সংশ্লিষ্ট সহিংসতার ঘটনার উপর একটি বৃহত্তর প্রতিবেদনের অংশ হিসাবে জনাব খালিদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ মামলাটি পরীক্ষা করেছিলেন। তাতে তাঁরা লিখেছেন যে তাঁরা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আরোপ করার পরোয়ানা জারি করার জন্য কোনও প্রামাণ্য তথ্য-প্রমাণ পাননি।
তাঁরা লিখেছিলেন, প্রসিকিউশন এমন উপাদানের উপর নির্ভর করে যা আইনে অন্তর্নিহিতভাবে অবিশ্বস্ত। তাঁরা তাঁদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, পুলিশের দাবির মধ্যে তাঁরা অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছেন, এমনকি সাক্ষীদের জবানবন্দিও অতিরঞ্জিত।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে যে জনাব খালিদকে জামিন দিতে অস্বীকার করা দেশে স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য একটি বড় আঘাত। সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরের জন্য দ্রুত সঙ্কুচিত স্থান প্রতিফলিত করে এবং ভিন্নমতের মানুষদের জন্য একটি শীতল নজির স্থাপন করেছে।

কারাগারে জনাব খালিদ উদাসীনভাবে  পড়ছেন, সহবন্দীদের জন্য আবেদনপত্র লিখে দিচ্ছেন এবং টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখছেন। উমর খালিদের এই কারাগারের ডায়েরি প্রকাশের লক্ষ্যে প্রকাশকদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে।

“তবে উমর খালিদের জন্য এটি খুব একটা আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি নয়। তবে উমর ভালো আছেন, তাঁর মনোবল বজায় রেখেছেন,” বলে জানিয়েছেন উমট খালিদের দীর্ঘদিনের সঙ্গী বনজ্যোৎস্না লাহিড়ী। দুজন ২০০৮ সালে ছাত্র হিসাবে পরিচিত হন এবং পাঁচ বছর পরে ডেটিং শুরু করেছিলেন।

বনজ্যোৎস্না লাহিড়ী স্পষ্টভাবে লিখেছেন, কীভাবে তাঁরা দু’জনে একই শহরে থাকাকালীন দীর্ঘ দূরত্বের সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন, কারাগারে একটি কাঁচের ব্যবধানের বাইরে থেকে খালিদের সঙ্গে  সাক্ষাত করেছেন এবং ইন্টারকমে কথা বলেছেন।
বনজ্যোৎস্না লাহিড়ি লিখেছেন, “আমরা হাসাহাসি করি, ঠাট্টা করি এবং দুঃখজনক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি না। তিনি আমাকেও কল করেন। আদালতে আমরা সাংকেতিক ভাষায় কথা বলি।”

গত সপ্তাহে, বনজ্যোৎস্না লাহিড়ি ছয়টি নতুন বই নিয়ে কারাগারে জানাব খালিদের সাথে দেখা করেন, যার মধ্যে রয়েছে পল লিঞ্চের বুকার-বিজয়ী প্রফেট গান, উইলিয়াম স্টাইরনের সোফি’স চয়েস এবং সাদাত হাসান মান্টোর লেখা বই এবং উর্দু কবি মির্জা গালিবের একটি বই। তিনি মনে করেন যে জনাব খালিদ কারাগারে প্রায় ২০০টি বই পড়েছেন এবং বইগুলি পড়ার পরে তিনি তা ফেরত দেন এবং সেগুলি সংরক্ষণ করার জন্য তিনি একটি বইয়ের তাক কিনেছেন।

কারাগারের ওয়ার্ডে উমর খালিদকে দিনের বেলা তাঁর সেল থেকে বাইরে বার হবার অনুমতি দেওয়া হয়। জনাব খালিদ দোষী সাব্যস্ত অপরাধীদের সাথে জায়গা ভাগ করে নেন, এই অপরাধীদের মধ্যে খুনি এবং অন্যান্য জঘন্য অপরাধে অভিযুক্ত দোষীরাও আছে।  জানাব খালিদ প্রায়শই বনজ্যোৎস্না লাহিড়িকে কথা বলার সময় জিজ্ঞাসা করেন, “এখানে এই সব মানুষের মধ্যে আমি কেন?”


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!