Advertisement
  • বৈষয়িক
  • এপ্রিল ৩০, ২০২২

কোভিডের ধাক্কা সামলে অর্থনীতি চাঙ্গা হতে আরও ১২ বছর, জানাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

অর্থনীতির হাল ফেরাতে, বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে মূল্যবৃদ্ধি বা জিনিসপত্রের দামও থিতু হওয়া প্রয়োজন।

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
কোভিডের ধাক্কা সামলে অর্থনীতি চাঙ্গা হতে আরও ১২ বছর, জানাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার বার্ষিক ‘কারেন্সি অ্যান্ড ফিনান্স’ রিপোর্টে আজ জানিয়েছে, এখনও কোভিড জনিত লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারে নি দেশ । ধীরে ধীরে আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি এলেই আবার দোসর করোনা চোখ রাঙাতে শুরু করে। এখন যা আর্থিক পরিস্থিতি, তা সবেমাত্র কোভিডের আগের পর্যায়ে পৌঁছেছে দেশ । কিন্তু সব ক্ষেত্রে অর্থনীতি সমান ভাবে ঘুরে দাঁড়ায়নি।

কোভিডের ফলে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হতে আরও ১২ বছর লাগবে। অর্থাৎ ২০৩৪-৩৫-এ গিয়ে ভরাট হবে ক্ষত।অতিমারির প্রথম ধাক্কাতেই দেশের অর্থনীতি বা জিডিপি-র ৬.৬ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। এ সময়ে কৃষিতে তেমন প্রভাব না পড়েনি, কারখানার উৎপাদন, নির্মাণ ঘুরে দাঁড়ানোর পথে। হোটেল, পরিবহণ, যোগাযোগ, ব্যবসায়িক লেনদেনের মতো ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও, এখনও এই ক্ষেত্রগুলি সমস্যায় জর্জরিত। সামগ্রিক ভাবে আর্থিক সমস্যা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ । অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে যুদ্ধ । ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি হামলায় বাজারে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে বৃদ্ধির করুণ ছবি এবং লগ্নির অভাবের মতো সমস্যা তৈরি হয়েছে। ভারতের মতো আমদানি করা তেল নির্ভর দেশে সমস্যা আরও বড় হয়ে উঠছে। কারণ এমনিতেই অতিমারির পরে মানুষের জন্য সুরাহার বন্দোবস্ত করতে গিয়ে সরকারের রাজকোষে টানাটানির দশা চলছে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতে, গৃহস্থের আয়ে টান পড়েছে। মধ্যবিত্তদের পকেট শূন্য, সংসার খরচের পরে হাতে কম টাকা থাকছে। শ্রমিকেরা শহর থেকে গ্রামে ফিরেছেন। তার ফলে বাজারে কেনাকাটা কমেছে। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যবসা লাটে উঠেছে। ছোটো-ছোটো কলকারাখানা নতুন করে খুললেও ছাঁটাই চলছে অহরহ। বেকারত্বের হার দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মূলধনের অভাবে নতুন করে লগ্নি করতে পারছে না।

ফলে আর্থিক বৃদ্ধির গতিপথই নীচের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আপাতত দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ৬.৫ থেকে ৮.৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। তবে তা অর্থনীতিতে একগুচ্ছ সংস্কারের উপরে নির্ভর করছে। জিডিপি-র তুলনায় সরকারি দেনার পরিমাণ কমিয়ে আনা জরুরি। জিডিপি-র তুলনায় সরকারি দেনার হার এখন ৯০ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতে, এই হার আগামী পাঁচ বছরে ৬৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। অর্থনীতির হাল ফেরাতে, বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে মূল্যবৃদ্ধি বা জিনিসপত্রের দামও থিতু হওয়া প্রয়োজন।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাঁধেই বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণের গুরু দায়িত্ব। কিন্তু এখন তা বিপদসীমার উপরে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ দিনের রিপোর্টে যে ভাবে বাজারদর থিতু হওয়ার প্রয়োজনের কথা বলেছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতে, বৃদ্ধি ধরে রাখতে কম খরচে জমির বন্দোবস্ত, শিক্ষা ও কর্মী প্রশিক্ষণে বেশি খরচ করে শ্রমিকদের মানোন্নয়ন, শহরের পরিকাঠামো উন্নতিতে সংস্কার একান্তভাবে জরুরি।

কোভিডের প্রথম বছর, ২০২০-২১-এ আর্থিক বৃদ্ধির বদলে জিডিপি-র ৬.৬ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। শেয়ার বাজার সহ সর্বত্র নেমেছিল ধ্বস। মন্দার কবলে চলে গিয়েছিল আর্থিক সূচক।আরবিআই বলছে, ২০২১-২২-এ ৮.৯ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি, চলতি অর্থ বছর, ২০২২-২৩-এ ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি এবং তার পরে ৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে নিয়ে এগোলে ভারত কোভিডের ক্ষয়ক্ষতি ২০৩৪-৩৫-এ কাটিয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান অনুযায়ী বিগত তিন অর্থবর্ষে, অর্থাৎ ২০২০-২১-এ অর্থনীতির উৎপাদনে লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৯.১ লক্ষ কোটি, ২১-২২-এ লোকসানের পরিমাণ ১৭.১ লক্ষ কোটি আর ২২-২৩-এই লোকসান গিয়ে দাঁড়াবে ১৬.৪ লক্ষ কোটি টাকা।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!