- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- অক্টোবর ১৩, ২০২৩
প্যালেস্টাইন ইস্যুতে ভারসাম্যের নীতি নিল ভারত ! তাহলে মোদির অবস্থান কী ছিল? প্রশ্ন কূটনৈতিক মহলের !

ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নিজের সাম্প্রতিক অবস্থান পরিবর্তন করল ভারত । প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশের যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের পক্ষে সওয়াল করলেও ভারতের বিদেশ মন্ত্রক অন্য কথা বলছে। আসলে আরব বিশ্বের আবেগের গতিমুখ বুঝেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এই মত পরিবর্তন করল বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে।
প্যালেস্টাইনের জঙ্গি সংগঠন ইসরায়েলে গত শনিবার রকেট হামলার পরই তীব্র ভাষায় এই সন্ত্রাসের নিন্দা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তখনই ঘরোয়া বিরোধী মহলে এই বিতর্ক শুরু হয়েছিল যে, সরাসরি প্যালেস্টাইন-বিরোধিতায় নেমেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার যা ভারতের দীর্ঘদিনের বিদেশনীতির পরিপন্থী হয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের হাইফা বন্দরের মালিকানা আদানিদের হাতে থাকাটা দিল্লির অবস্থানকে প্রভাবিত করছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছিল। দেশের বামপন্থী নেতা ও ব্যাক্তিত্ত্বরা বলতে শুরু করেছিলেন ইসরায়েলের পাশা মোদি নিজে আছেন বলতে পারেন কিন্তু ভারতের সবকটি মানুষ আছে এটা বলার যুক্তিটা কী? মোদির এই ইসরায়েলের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বিতর্ক চলার মধ্যেই নয়াদিল্লি আরব বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়েছে। সম্প্রতি আরব আমিরশাহির বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ইসরায়েল পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও। তারই ফলস্বরূপ আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, “এই বিষয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের নীতি ধারাবাহিক ভাবে একই রকম রয়েছে। সার্বভৌম, স্বাধীন এবং টেকসই প্যালেস্টাইন গড়ার জন্য সরাসরি কথাবার্তা শুরু করাকেই ভারত বরাবর উৎসাহ দিয়ে এসেছে। আমার মনে হয়, এই ব্যাপারে আমাদের অবস্থান একই রয়েছে।”
প্রসঙ্গত গত শনিবার, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে রকেট হামলার পর ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই প্রথম বিবৃতি দেওয়া হল। তবে ইতিমধ্যে এই ইস্যুতে দু’বার মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নারএনবিদ্রো মোদি। ইসরায়েলে প্যালেস্টাইন জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলাকে “সন্ত্রাসবাদী হামলা” বলে উল্লেখ করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি বলেছিলেন, এই কঠিন সময়ে ভারত সর্বতোভাবে ইসরায়েলের পাশে রয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে বলেও নিজের এক্স হ্যান্ডল-এ জানিয়েছেন। তবে এই অবস্থান “বদল”কে, অবশ্য বিদেশ মন্ত্রক বদল বলে স্বীকার করতে চাইছে না। বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করেছিলেন। তিনি সার্বিক ভাবে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। তাঁর সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান একই আছে। তবে এই ঘটনার পর কিন্তু কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি প্যালেস্টাইনের পথে থাকার তাদের পুরনো সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছিল। সিপিএম-ও বরাবরের মতোই প্যালেস্টাইনের পাশেই রয়েছে।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশগুলি দ্রুত শান্তি ফেরানোর কথা বললেও তাদের বিবৃতিতে প্যালেস্টাইনের জঙ্গিগোষ্ঠীর ইসরেয়েলে রকেট হামলা সম্পর্কে কোনও নিন্দা নেই। নরেন্দ্র মোদির সরকারের আমলে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কে উল্লেখজনক উন্নতি হয়েছে। আমদানি ক্ষেত্রে নির্ভরতা বেড়েছে। পাকিস্তানকে মুসলিম বিশ্বে কোণঠাসা করতে সৌদিকে সময়বিশেষে পাশে পেয়েছে সাউথ ব্লক। ফলে প্রাথমিক ভাবে হামাসকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে মোদি ঘরোয়া রাজনীতিতে হিন্দুত্বের ধ্বজা ওড়ালেও আরব মনের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে এখন “স্বাধীন সার্বভৌম’ প্যালেস্টাইনের কথা বলেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। অর্থাৎ ইসরায়েল-পন্থী হিসাবে চিহ্নিত একপেশে অবস্থানের পর একটি ভারসাম্যের কূটনীতিতে ফিরেছে ভারত। তবে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ইসরায়েলের অস্ত্রে ভারত পাকিস্তানকে মোকাবিলা করেছে। ভারত ইসরায়েলের পাশে আছে, তাহলে সেই বার্তা কিসের ওপর ভিত্তি করে দিয়েছিলেন ভারতের মতো বৃহত্তর গণতন্ত্রের দেশের প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে এবার দেশের ভেতরে ও বাইরে প্রশ্ন উঠছে।
এই বিষয়টি নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও জল গড়াচ্ছে। কংগ্রেস প্রথমে ইসরায়েল আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেও বলেছিল যে, প্যালেস্টাইনবাসীর ন্যায্য অধিকারের দাবিগুলি আলোচনার মধ্যে দিয়েই সমাধান করা উচিত। এর পরে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়, কংগ্রেস পশ্চিম এশিয়ায় বহু মানুষের মৃত্যুতে দুঃখিত। প্যালেস্টাইনের মানুষের জমি, স্বশাসন ও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাত্রার পক্ষে পুরনো অবস্থান মনে করিয়ে দিয়ে কংগ্রেস শান্তি ও আলোচনার দাবি জানিয়েছিল। যদিও ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে অনেকের মত ছিল, ইসরায়েলে সন্ত্রাসবাদের কড়া সমালোচনা করা উচিত। না হলে বিজেপি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোষণের রাজনীতি ও সন্ত্রাস নিয়ে নরম মনোভাবের অভিযোগ তুলতে পারে। এখন নরেন্দ্র মোদির সরকারের অবস্থান “বদলের” পর কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, “কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি যা বলেছিল, প্রায় একই কথা কেন্দ্র তার বিবৃতিতে বলতে বাধ্য হল। বিজেপির তো এ বার বার্নল-এর প্রয়োজন হবে!” কোনও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের পর দেশের বিদেশমন্ত্রকের প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের থেকে সরে আসার ঘটনা ভারতের বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে বিরল ঘটনা বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
❤ Support Us