Advertisement
  • এই মুহূর্তে ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
  • ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫

গ্র্যামির লাল কার্পেটে জয়জয়কার ভারতীয় বংশোদ্ভূত চন্দ্রিকা ট্যান্ডনের। এবারেও সম্মান অধরা অনুষ্কা শঙ্করের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
গ্র্যামির লাল কার্পেটে জয়জয়কার ভারতীয় বংশোদ্ভূত চন্দ্রিকা ট্যান্ডনের। এবারেও সম্মান অধরা অনুষ্কা শঙ্করের

চেন্নাইয়ে বেড়ে ওঠা চন্দ্রিকা ট্যান্ডনের হাতে উঠল গ্র্যামি সম্মান। সেরা নিউ এজ, অ্যাম্বিয়েন্ট ক্যাটেগরিতে পুরস্কৃত হলেন তিনি। ৫০ বছরে বেস্ট কান্ট্রি অ্যালবাম বিভাগে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে গ্র্যামি জিতলেন বিয়ন্সে। এখন পর্যন্ত ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গ্র্যামি পেয়েছেন এই শিল্পী। চতুর্থবার গ্র্যামি জয়, ‘অভিবাসী ভাইবোন’দের পুরস্কার উৎসর্গ শাকিরার। বিশ্বের প্রতিটি কর্মরত মহিলার পরিশ্রমকেও কুর্নিশ জানান তিনি।

বছরজুড়ে সেরা গান, সুর, অ্যালবাম ও সেরা সংগীত তারকাদের সম্মানিত করার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সঙ্গীত পুরস্কার ‘গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’। ‘৬৬তম বার্ষিক গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড’-এর মূল অনুষ্ঠানটি ২ ফেব্রুয়ারি লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্রিপ্টো ডট কম এরেনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্ণাঢ্য গ্র্যামির আসর এদিন বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত তারকাদের দ্যুতিতে উজ্জ্বল। বিশ্বসঙ্গীতের সবচেয়ে বড় মঞ্চে ভারতীয়-আমেরিকান কণ্ঠশিল্পী এবং উদ্যোক্তা চন্দ্রিকা ট্যান্ডনের ঝুলিতে বিরাট জয়। ৬৭তম গ্র্যামির আসরে বেস্ট নিউ এজ, অ্যাম্বিয়েন্ট বা চ্যান্ট অ্যালবাম বিভাগে ‘ত্রিবেণী’ অ্যালবামের জন্য গ্র্যামি পুরস্কার ছিনিয়ে নিলেন চন্দ্রিকা। তিনি উদ্যোক্তা এবং পেপ্সিকোর সিইও ইন্দ্রা নুরির বোণ। দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁশিবাদক ওয়াউটার কেলারম্যান এবং জাপানি সেলিস্ট ইরু মাতসুমোটোর সাথে এই পুরষ্কার জিতে নিলেন তিনি। ২০০৯ সালে তাঁর প্রথম অ্যালবাম, ‘সোল কল’ প্রকাশ করেন, যা ২০১১ সালে কনটেম্পোরারি ওয়ার্ল্ড মিউজিকের জন্য গ্র্যামি নমিনেশন পায়। ‘ত্রিবেণী’ তাঁর ষষ্ঠ অ্যালবাম। হাতে গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডটি নিয়ে, মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে চন্দ্রিকা বললেন, ‘সঙ্গীত ভালোবাসা, সঙ্গীত আলোর কিরণ, সঙ্গীত, ঠোঁটের হাসিও। আসুন, আমরা সবাই ভালোবাসা, আলোতে এবং হাসিতে পরিপূর্ণ থাকি। এই সঙ্গীতের জন্য ধন্যবাদ, এবং যাঁরা এই সঙ্গীত তৈরি করেন তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ।’
নিজের X-হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী গ্র্যামি জয়ী চন্দ্রিকাকে শুভেচ্ছা জানান, লেখেন –“ত্রিবেণী অ্যালবামের জন্য গ্র্যামি জয়ে চন্দ্রিকা ট্যান্ডনকে অভিনন্দন। আমাদের গর্ব। একজন উদ্যোগপতি হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুদায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তিনি সকলের অনুপ্রেরণা।”

এই বিভাগের পুরষ্কার দৌড়ে রিকি কেজের ব্রেক অব ডন, রিউচি সাকামোতোর ‘ওপাস’, রবি শঙ্কর কন্যা অনুষ্কার ‘চ্যাপ্টার টু: হাউ ডার্ক ইট ইজ বিফোর ডন’ এবং রাধিকা ভেকারিয়ার ওয়ারিয়র্স অব লাইট’। সঙ্গীত দুনিয়ার নামীদামী তারকাদের পিছনে ফেলে এই সম্মান দিতে নিলেন ট্যান্ডন। বিদেশে বসবাস করলেও নিজের দেশের শিকড় ভুলে যান নি তিনি, সাবেকি ভারতীয় পোশাকেই তাঁকে এ দিন অনুষ্ঠান মঞ্চে দেখা গেল। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এই ক্যাটাগরিতে আমাদের সঙ্গে দুর্দান্ত সব শিল্পীরা মনোনীত ছিলেন। আমরা যে এটা জিতেছি, এটা সত্যিই আমাদের জন্য বাড়তি বিশেষ মুহূর্ত। আমাদের সঙ্গে মনোনয়ন পেয়েছেন অসাধারণ সব মিউজিশিয়ানরা।’ এবারেও জয় এল না অনুষ্কা শঙ্করের হাতে। হতাশ নয় দৃপ্তিময় কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘অতীতে আমি ভেবেছিলাম যে এবার রায় আমার পক্ষে থাকবে কিন্তু যখন আমি জিততে পারিনি, তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে প্রতিবার ২০% সম্ভাবনা থাকে জয়ের। আমি সর্বদা এই দৃষ্টিকোণে রাখার চেষ্টা করি যে মনোনয়নগুলি উত্তেজনাপূর্ণ, এবং এটি দুর্দান্ত’। অর্থাৎ হার-জিত কোনটাই বড় করে দেখতে চান না অনুষ্কা।

অন্যদিকে ৫০ বছরে বেস্ট কান্ট্রি অ্যালবাম বিভাগে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে গ্র্যামি জিতলেন বিয়ন্সে গিজেল নোলস । গ্র্যামির ইতিহাসে সর্বাধিক পুরষ্কৃত শিল্পী ছিলেন তিনি, শুধু তাই নয় সবচেয়ে বেশিবার মনোনয়নের রেকর্ডও ছিল তাঁর। ৬৭তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ১১টি নমিনেশন পেয়েছিলেন বিয়ন্সে। এবার তাঁর মুকুটে আরো একটি পালক জুড়ল। ‘অ্যালবাম অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারে ভুষিতা হলেন গায়িকা। বিয়ন্সের অষ্টম স্টুডিও অ্যালবাম। কৃষ্ণাঙ্গ কাউবয়দের সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন নিজের গানে। বিভিন্ন ধরনের গান শুনে বড় হয়েছেন বিয়ন্সে, লোকসঙ্গীত থেকে পপ কিংবা জ্যাজ। ছোটবেলা থেকে শোনা সেই সব গানের মূল ভাব মিশে গিয়েছে ‘কাউবয় কার্টার’ অ্যালবামে। ‘নট লাইক আস’-এর জন্য জিতেছেন ‘রেকর্ড অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জিতেছেন কেনড্রিক লামার। একই গানের জন্য ‘সং অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারও জিতেছেন তিনি। সব মিলিয়ে এবারের গ্র্যামিতে সর্বোচ্চ পাঁচ পুরস্কার জিতেছেন লামার।

জন্মদিনেই পপ গায়িকার মুকুটে নয়া পালক। ফের গ্র্যামি জয় শাকিরার। এই নিয়ে চতুর্থবার গ্র্যামি জয় করলেন তিনি। ‘লাস মুজেরেস ইয়া নো লোরান’ অ্যালবামের জন্য পুরস্কার পেলেন শাকিরা। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেনিফার লোপেজ। সেই সময় দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন শাকিরার দুই সন্তান মিলান এবং সাশা। পুরস্কার হাতে নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন গায়িকা। পুরস্কার হাতে বক্তৃতার শুরুতে আমেরিকার ভয়াবহ দাবানলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বলেন তিনি। এরপর তাঁর পাওয়া পুরস্কার ‘অভিবাসী ভাইবোন’দের উৎসর্গ করেন শাকিরা। বলেন, “আমি আমার পুরস্কার অভিবাসী ভাই-বোনদের উৎসর্গ করছি। তাঁরা ভালোবাসার যোগ্য। তাঁদেরই এটা প্রাপ্য। আমি সবসময় তাঁদের লড়াইয়ের পাশে আছি।” বিশ্বের প্রতিটি কর্মরত মহিলার পরিশ্রমকেও কুর্নিশ জানান শাকিরা। শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছেন লাস্যময়ী গায়িকা। বেস্ট নিউ আর্টিস্ট বিভাগে: চ্যাপেল রোন, বেস্ট রক পারফরম্যান্স বিভাগে ‘নাউ অ্যান্ড দেন’ – দ্য বিটলস সম্মানে ভুষিত হয়েছে। এছাড়াও আরও ৮৫টি ক্যাটাগরিতে সঙ্গীত শিল্পীদের সম্মানিত করা হয়েছে।

গত মাসে লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলের কারণে এবারের গ্র্যামি আয়োজন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তবে নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশেষ পরিবেশনা ছিল ‘আ লাভ এল এ’। লেডি গাগা ও ব্রুনো মার্সও তাঁদের পারফরম্যান্স উৎসর্গ করেন ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশ্যে। এছাড়া, প্রয়াত সংগীত প্রযোজক কুইন্সি জোন্সকে স্মরণ করে একটি আবেগঘন পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয়। গ্র্যামির মঞ্চে আরও ঝড় তোলেন শাকিরা, বিলি আইলিশ, সাবরিনা কার্পেন্টার ও দ্য উইকেন্ড। আর টানা পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কমেডিয়ান ট্রেভর নোয়া। এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে সঙ্গীতপ্রেমীরা পেলেন দারুণ এক রাত, যেখানে গানের জয়গান আর প্রতিভার সম্মাননা একসূত্রে গাঁথা হলো।

তবে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। ৬৭তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চের বেশ কিছু ঘটনার সমালোচনা এই মুহূর্তে তুঙ্গে। গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চে যখন সমস্ত শিল্পীদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে, নাম নেওয়া হয় নি চারবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জয়ী প্রয়াত শিল্পী জাকির হুসেনের। যা নিয়ে তাঁর ভক্তকূলে রীতিমতো ক্ষোভের আবহাওয়া। হুসেনের ভক্তরা আশা করেছিলেন গ্র্যামি মঞ্চে প্রিয় শিল্পীকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হবে। কিন্তু মঞ্চে একবারের জন্যও নেওয়া হলো না তাঁর নাম। একজন কিংবদন্তী মানুষ কেন শ্রদ্ধা পেলেন না, সেই নিয়েই এখন আলোচনা। তাঁরা বলছেন, কেন এতবড় ভুল হল? আবার কেউ বললেন, এটা কী করে হল? একজন গ্র্যামি বিজেতা কে ভুলে গেলেন? যদিও, এবার প্রথম না। এর আগে লতা মঙ্গেশকরকেও ঠিক একইভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল। ভারতের নাইটঙ্গেলকে অস্কার কিংবা গ্র্যামির মঞ্চে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়নি। ইরফান খান শেষ শ্রদ্ধা পেয়েছিলেন তাঁদের তরফে।
অন্যদিকে, মার্কিন র‍্যাপার কানইয়ে ওয়েস্ট ও তার স্ত্রী মডেল বিয়াঙ্কা সেনসরি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। গ্র্যামির লাল গালিচায় নগ্ন হয়ে দাঁড়ালেন বিয়াঙ্কা। তাঁর পরনে ছিল কালো পশমের কোট। ফোটোগ্রাফারদের সামনে এসে দাঁড়াতেই যেই না কোর্ট সরালেন, দেখা গেল সম্পূর্ণ ‘নগ্ন’ অবস্থায় রয়েছেন বিয়াঙ্কা। এই ঘটনা ঘিরে বেঁধেছে জোর বিতর্ক। জানা গিয়েছে, এই ধরণের পোশার পরে রেড কার্পেটে পা রাখার জন্য আইনি জটিলতার মুখে পড়তে হতে পারে সেলেব কাপলকে। বিতর্কের কারণে তারকা দম্পতিকে মূল অনুষ্ঠানে থাকতে দেয়া হয়নি।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!