Advertisement
  • সফরনামা
  • মে ১৬, ২০১৯

মিরিক,পাইনের লিরিকাল সুমেন্দু

অমিত মুখোপাধ্যায়
মিরিক,পাইনের লিরিকাল সুমেন্দু

ইন্দ্রেনী সেতু

মিরিক নামটি এসেছে লেপচা ভাষার “মির-ইওক” শব্দ থেকে, যার অর্থ আগুনে পুড়ে যাওয়া জায়গা।বোঝা যায় পাঁচ হাজার ফিট উঁচু বনঘেরা জলাভূমির পাইন ও বোঝো-ঘন ঝোপে দাবানল লাগে অতীতে।এখনকার বাগান অঞ্চলে মাঠ তৈরি করে ইংরেজরা পোলো খেলত।পাশে চা বাগান করা হয়।এভাবে নিয়ত বদলে যাওয়া চেহারায় স্থায়িত্ব আসে ১৯৬৯ সালে,পর্যটন দপ্তর ৩৩৫ একর জমি কেনে থুরবো চা বাগানের কাছ থেকে।১৯৭৪ এ পর্যটনকেন্দ্র গড়া শরু হয়।উদ্বোধন হয় ১৯৭৯ তে, সুন্দর হ্রদ(নাম সুমেন্দু) আর দিন কাটানোর ঘর তৈরি করে।নেতাজি-বাহিনীর এক শহীদ সাবিত্রী থাপার নামে পুষ্পোদ্যান আর হ্রদের ওপারে পাইনবনে যাবার সেতু আরেক শহীদ ইন্দ্রেনী থাপার নামে। হ্রদ ঘিরে সাড়ে তিন কিমি মনকাড়া পথে সূর্যের দিনে কাঞ্চনজঙ্ঘার স্বর্ণদর্শন হতে পারে। বছরের যে কোন সময়ে শিলিগুড়ি থেকে ৫২কিমি  সহজ পথে এসে আরামে নৌকাবিহার করে সবুজ সবিস্তার সেনানী, মগডালের মিঠে আবাস, ঝলমলে মঠ, মন্দির  ও জলের উদার আয়নায় সুন্দরকে অনুভব করা যায়।পশ্চিমের ঘন সবুজ দীর্ঘ পাইন বনের কুয়াশা মাখা মেঠো ঢালের ওপরে দিগন্তজোড়া দৃশ্য অপেক্ষায় থাকে।শহর জুড়ে বুনো ফুলঃনীল,গোলাপি,হলুদ।

চমতকার আবহাওয়া,পরিবেশ আর মেচি,ফুগুরি,সৌরেনি,সিঙবুল্লি,গয়াবাড়ির মতো রূপসী চা বাগানের  মাঝ দিয়ে সুগম পথ মিরিককে সারা বছরের গন্তব্য করেছে।দার্জিলিং থেকেও ৪৯ কিমি পাহাড়ি বাঁক পেরিয়ে আসা যায়।সেরা মানের কমলালেবু আর এলাচ হয় এদিকে।সিম্বিডিয়াম নামে দুর্লভ অর্কিড মেলে যা অতি দামি,রাতো মাতের বাগানে চাষ হয়।কাউলে দারা গিয়ে অরুণোদয় দেখা যায়।খাড়া পথে মহাযান মতের  লালাভ বোকার মঠ কাছেই।সূর্যাস্ত ছাড়াও চারদিকের পাহাড় আর বিস্তীর্ণ উপত্যকা সাজিয়ে দেয় রামিতে দারা।মিরিকে ঢোকার মুখে বাঁয়ের আরেক চড়াই বেয়ে রায়-ধাপ গিয়ে পানীয় জলের ঝিল ও বনভোজনের বাহারি জায়গা উপভোগ করা যায়।পাশে পাহাড়ের খোলা মাথায় হেলিপ্যাডটি অসাধারণ নিসর্গ উপহার দেয়।

সেখানে আমাদের সকাল ছিল ভিজে,আগের রাতের বর্ষনে স্নাত,ম্রিয়মান।প্রভাতী হন্টন সেরে শ্রমণদের তিন-চার জনের নানা দল মঠমুখী।দোকান-বাড়িগুলোর ছাদে বহুবর্ণ বৌদ্ধ পতাকার কাঁপন।সরোবরের আয়নায় সিক্ত মুখ দেখে সরলবৃক্ষ দেবদারু।জিরো ফিগার অতি জলপানে ভারী হবার শোকে ইন্দ্রেনী-সেতুর কাছে বিলাপ করে বেতালা বাতাসে।মনে পড়ে পাতাগুচ্ছের করুণ ধ্বনির জন্য পাইন-এর আরেক অর্থ বিষাদ জানানো।
হতে পারে বাদল-বিধুর  মিরিক, তবু তাতে কি কমে  প্রকৃতি-পিয়াসী মানুষের হিড়িক! রঙের দেশকে বিচিত্রবর্ণ ছাতায়, কাঁধের ঝোলায়, শীতপোশাকে তারা রঙিনতর করে তোলে।চলে আসে সাদার গায়ে নানা নকশার কালো ছাপের যত ঘোড়া, পিঠে নিয়ে আকর্ষক আকরস্থান দেখাবে বলে।একেক দিক থেকে নতুনতর রূপে ধরা দেয় মিরিক।মেঘলা আকাশের পরিশ্রুত আলো নিয়ত ভেঙে পেছনের শ্যামলিমা মিশিয়ে আঁকা জলছবিতে মুগ্ধ থাকে নির্বাচনী দায় সারতে আসা এক দল সেনা।

মিরিক থেকে গাড়িতে  সৌরেনি,গোপালধারা,রঙবঙ,গোলপাহাড়,সুখিয়া পোখরি,পশুপতিনগর,বুংকুলুঙ ঘোরা যায়।হেঁটে যাওয়া যায় বালাসোন পেরিয়ে কার্শিয়াং,নামসু,সান্দাকফু বা ফালুট।

নতুন সাজে ফের সাজছে মিরিক।বাগান থেকে খোলা চত্বর, দোকানের বিন্যাস থেকে বনের আধো-আঁধারি পথ—সব।এই নিরালা ভূখণ্ড দুদণ্ডের শান্তি আর স্নিগ্ধতা দেবে নিশ্চিত।


  • Tags:

Read by: 413 views

❤ Support Us
Advertisement
homepage billboard publication
Advertisement
homepage vertical advertisement mainul hassan publication
Advertisement
Advertisement
শিবভোলার দেশ শিবখোলা স | ফ | র | না | মা

শিবভোলার দেশ শিবখোলা

শিবখোলা পৌঁছলে শিলিগুড়ির অত কাছের কোন জায়গা বলে মনে হয় না।যেন অন্তবিহীন দূরত্ব পেরিয়ে একান্ত রেহাই পাবার পরিসর মিলে গেছে।

সৌরেনি আর তার সৌন্দর্যের সই টিংলিং চূড়া স | ফ | র | না | মা

সৌরেনি আর তার সৌন্দর্যের সই টিংলিং চূড়া

সৌরেনির উঁচু শিখর থেকে এক দিকে কার্শিয়াং আর উত্তরবঙ্গের সমতল দেখা যায়। অন্য প্রান্তে মাথা তুলে থাকে নেপালের শৈলমালা, বিশেষ করে অন্তুদারার পরিচিত চূড়া দেখা যায়।

বাড়িয়ে দিন বন্ধুত্বের হাত স | হ | জ | পা | ঠ হযবরল