- খাস-কলম
- অক্টোবর ২২, ২০২২
বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলায় এবার উদ্যম নব নব। থিম স্পেন। শুরু ৩১ জানুয়ারি, সমাপ্তি ১২ ফেব্রুয়ারি
ঢাকার একুশের বই সমাবেশে অবাধ প্রবেশে এ বাংলার প্রকাশকদের বাধা কোথায়?

নব নব উদ্যমে এবার অনুষ্ঠিত হবে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু, শেষ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। সল্টলেকের বইমেলা প্রাঙ্গনে। পাবলিশার্স ও বুকসেলার গিল্ড নবীন উৎসাহে মেলার সর্বাঙ্গীন প্রস্তুতি শুরু করেছে। গত বছর মেলা হয়নি , তা নয়। অতিমারির সন্ত্রাস পেরিয়ে হয়ছে, গিল্ডের নিষ্ঠা আর অঙ্গীকারের দূঢ়তায়। করোনার সতর্কতা বিধি মেনে কর্তূপক্ষ কমাতে হয়েছিল। দেশি বিদেশি প্রকাশক আর পুস্তক বিক্রেতাদের অনেকেই যোগ দিতে পারেননি। খেদ ছিল। এবার তা পূর্ণ হবে । বইমেলায় বই প্রকাশকদের অংশগ্রহণ বাড়বে। গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ঘোষিত সিদ্ধান্তের হেরফের হবে না, অসন্ন বইমেলার থিম অবশ্যই স্পেন।
দক্ষিণ ইউরোপে অবস্থিত স্পেনের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সম্পর্ক সুপ্রাচীন আর তা বৌদ্ধিক ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত। পাবলিশার্স ও বুক সেলার্শ গিল্ড অনেক ভেবে চিন্তে স্পেনকে আগামী বইমেলার থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে।
গিল্ড বইয়ের সীমান্তহীন দুনিয়াকে ছুঁতে চাইছে। এতে বুদ্ধিবূত্তির প্রসার ঘটে। বিদেশের লেখালেখি নব্যঔপনিবেশিকতার চ্যালেঞ্জকে কীভাবে মোকাবিলা করছে, তা জানার সুযোগ হয়। ফ্রান্স, ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়াকে ইতিপূর্বে কলকাতা বইমেলার থিম করা হয়েছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ মধ্য ইউরোপের দিকে নজর ঘোরাতে চাইছেন মেলা কর্তূপক্ষ। আমাদের ধারণা, কালক্রমে পশ্চিম এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলিও বইমেলার থিম হিসেবে উঠে আসবে। এটা মেলা কর্তৃপক্ষের বাধ্যবাধকতা।
প্রকাশক ও বই বিক্রেতাদের অংশগ্রহন ও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ জনতরঙ্গের নিরিখে কলকাতা বইমেলা বিশ্বের বৃহত্তম বইকেন্দ্রিক আয়োজন। ফ্রাঙ্কফুট, নিউইয়র্ক, ইস্তাম্বুল ও লন্ডনের বুকফেয়ারে আন্তর্জাতিক প্রকাশকদের যোগাযোগ ব্যাপক হলেও কলকাতা বইমেলার মুহূর্তে যে উৎসাহ, যে অঙ্গীকার, যে নান্দনিক পরিবেশ তৈরি হয়, তা এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত।
কলকাতা বইমেলার বয়স এবার ৪৬। শুরুতে দুটি মেলা হত। পরে সর্বসম্মত ভাবে পাবলিশার্স ও বুক সেলার্স গিল্ড একই প্রাঙ্গনে, একটি মেলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। বইমেলার প্রাঙ্গন বারবার বদলেছে। কখনও পার্কসার্কাস ময়দান, কখনও রবীন্দ্রসদনের উল্টোদিকের মাঠ, কখনও ফোর্টইউলিয়ামের বিস্তূত প্রাঙ্গন, বাইপাস সংলগ্ন মিলনমেলা চত্ত্বর, সল্টলেক স্টেডিয়াম এরকম বহু এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে শেষপর্যন্ত সল্টলেকের সেন্ট্রালপার্কের ঠিকানায় পৌঁছেছে। গতবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এটাকেই বইমেলা প্রাঙ্গন হিসেবে নাম ঘোষণা করেছেন। মহানগরের বিভিন্ন প্রান্ত, বিভিন্ন জেলা থেকে যাঁরা বইমেলায় এসে জড়ো হন, তাঁদের পক্ষে সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলা প্রাঙ্গন সহজ ঠিকানা কিনা ভেবে দেখা দরকার। বাইপাস সংলগ্ন মিলনমেলা প্রান্তর এদিক থেকে অনেক বেশি গ্রহনযোগ্য। কিন্তু এলাকা অপেক্ষাকূত ছোট। দ্বিতীয়ত, মেলার সময় যে যানজট আর ভিড় তৈরি হয়, তা নিয়ন্ত্রন করা সহজসাধ্য নয়। পুলিসকর্মীদের পরিশ্রম অতিরিক্ত বেড়ে যায়। মোদ্দাকথা আয়তনে, প্রকাশক ও বই বিক্রেতাদের অংশগ্রহন ও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ জনতরঙ্গের নিরিখে কলকাতা বইমেলা বিশ্বের বৃহত্তম বইকেন্দ্রিক আয়োজন। ফ্রাঙ্কফুট, নিউইয়র্ক, ইস্তাম্বুল ও লন্ডনের বুকফেয়ারে আন্তর্জাতিক প্রকাশকদের যোগাযোগ ব্যাপক হলেও কলকাতা বইমেলার মুহূর্তে যে উৎসাহ, যে অঙ্গীকার, যে নান্দনিক পরিবেশ তৈরি হয়, তা এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত।
অমর একুশের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে কলকতা বইমেলা সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বইয়ের আরেক বূহত্তম প্রদর্শন আরম্ভ হয় বাঙালির ঢাকায়। একুশের বইমেলা। এরও গুরুত্ব অপরিসীম। এ মেলার পরিধি ক্রমশ বাড়ছে। মেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বইবাজারে, লেখকও পাঠক মহলে অসাধারণ ভাবাবেগ তৈরি হয়। মূলত ভাষা আন্দোলনের অঙ্গীকারকে কেন্দ্র করে। এ অঙ্গীকার কেবল বাংলাদেশের নয়। এর অংশীদার সমানভাবে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও বারক উপত্যকা। একারণেই আমাদের প্রস্তাব, একুশের বইমেলায়, ভারতীয় প্রকাশক, বিশেষ করে কলকাতার পুস্তক ব্যবসায়ীদের অবারিত অংশগ্রহণ দরকার। এ ব্যাপারে, লেখক প্রকাশক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশনা জগতের কৃতি সংগঠক সুধাংশু দে সহ বিভিন্ন প্রকাশক, লেখক কবিদের সমবেত প্রয়াস প্রত্যাশিত। দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সম্পর্কের উত্তরণে কাজটি বড়ো জরুরি।
❤ Support Us