- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- মে ১১, ২০২৩
ক্ষুব্ধ ইরফান হাবিবের প্রতিক্রিয়া, তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ইতিহাসচর্চা অচল

এনসিইআরটির পাঠ্যপুস্তকে রদবদল নিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কঠোর সমালোচনায় সরব হলেন ইরফান হাবিব। মুঘল সহ স্বাধীনতার সংগ্রামে মুসলমানদের অবদান বাতিল প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সংস্থার নীতিকে তীব্র কটাক্ষ করলেন ইতিহাসবেত্তা। তাঁর প্রশ্ন, ‘হিন্দু’ শব্দটি আরবি হওয়া সত্ত্বেও তা কেন বর্জন করা হচ্ছে না। তিনি বলেছেন, পাঠ্যবইয়ে নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠা করবার প্রচেষ্টা ইতিহাস দর্শনকে পক্ষপাতদুষ্ট করে, আর তা সুকৌশলে করছে দেশের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস পাঠ্যপুস্তক থেকে মুঘল আমলকে বিদায় জানিয়েছে এনসিইআরটি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বইয়ে বাদ গিয়েছে মৌলানা আবুল কালাম আজাদের প্রসঙ্গে। এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নিজের ক্ষোভ চাপা রাখেননি প্রবীন ইতিহাসবিদ । মুঘল যুগ নিয়ে একাধিক গ্রন্থের রচয়িতা হাবিব জানিয়েছেন, মূলত দুটি উদেশ্য নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে সংশোধন করা হয়েছে। প্রথমত, মুসলিমদের কলঙ্কিত অথবা তাঁদের অবদান বাতিল করার মধ্যে দিয়ে ইতিহাসের সাম্প্রদায়িকীকরণ ঘটানো। আর দ্বিতীয়ত, অতিকথন নির্মাণ। দুটি উদ্দেশ্যই ক্ষমতার সুকৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে পূরণ করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।
হাবিব আরো বলেছেন, শুধু মধ্যযুগ নয়, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস চর্চায় নিজেদের চিন্তা ও মত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। যে কারণে ইউজিসির সংশোধিত পাঠ্যসূচিতে ঠাঁই পেয়েছে, মুসলিম শাসক কর্তৃক জাত ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রসঙ্গ। তথ্যপ্রমাণ বিবর্জিতভাবে প্রাচীন ভারতের গৌরব গাথা রচনার জন্য যে এ উদ্যোগ তা বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না। মনগড়া তথ্য বলা নয়, বরং তথ্যকে প্রতিষ্ঠা করাই তার ঐতিহাসিকের অন্যতম প্রধান কাজ। তবে, ভারতের বর্তমান শাসক দলের অভিপ্রায় তা নয়।
আসলে আজাদকে বাদ দেওয়া হোক বা আর্যদের আদিনিবাস রূপে ভারতকে প্রতিষ্ঠিত প্রতিক্ষেত্রে হিন্দু অতীত গৌরবান্বিত করা আর মুসলিমদের ভারতের সমস্ত দুর্দশার জন্য দায়ী করা— প্রতিক্ষেত্রে নিজেদের চিন্তা ও মত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে বিজেপি সরকার। ইতিহাস বস্তুধর্মী। তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ইতিহাসচর্চা অচল। কিন্তু তার পরিবর্তে পুরাণকে যদি ইতিহাস বলে চালানো হয়, তাহলে তাকে তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের সে দায় নেই। তাঁদের লক্ষ্য একটাই, হিন্দুরাষ্ট্রের নির্মাণ। আর সে লক্ষ্যপূরণের একমাত্র হাতিয়ার ইতিহাসকে গেরুয়া রঙে রাঙ্গানো। আর তা সাফল্যের সঙ্গে করে চলেছেন ক্ষমতার ধ্বজাধারীরা।
❤ Support Us