- দে । শ
- অক্টোবর ৩১, ২০২৩
“যুদ্ধে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে”, যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করে তীব্র রোষে জানিয়ে দিলেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু
আর কত সাধারণ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিলে ইসরায়েল শান্ত হবে? এই প্রশ্নটা এখন বিশ্বের সমস্ত শান্তিকামী ও সুস্থ নাগরিকদের মনে বারংবার ধ্বনিত হচ্ছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী তাঁর যুদ্ধপিপাসা থেকে এক ইঞ্চি শর্তে নারাজ। তিনি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে দিয়েছেন, “যুদ্ধে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে”, অর্থাৎ তিনি হামাসকে শিক্ষা দেওয়ার নাম ফিলিস্তিনের অগণিত সাধারণ মানুষের প্রাণ নেবেন। তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন, এটা তাঁর অধিকারের মধ্যে পরে, কারণ ৭ অক্টোবর হামাস হামলায় ১৪০০ ইসরায়েলি প্রাণ হারাতে হয়েছে, ইসরায়েলের এই লড়াই হচ্ছে সেই হামলার প্রতিশোধ হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির কোনও সম্ভাবনা নেই কারণ যুদ্ধবিরতির মানে হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ। এ যেন মানুষ খুনের দম্ভ। ৭ অক্টোবর হামাস হানাকে কেউ সমর্থন করছে না। সেই হামলায় ইসরায়েলের যে ১৪০০ জনের প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকেও কেউ সমর্থন করছেন না। কিন্তু ১৪০০ প্রাণের বিনিময় হামাসকে শিক্ষা দেওয়ার নাম ফিলিস্তিনের শিশু, যুবক, যুবতী, বৃদ্ধ,বৃদ্ধা, অসুস্থ রোগী এদের খুন করার, আতংকিত করার অধিকার কি পেতে পারেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু? এই প্রশ্ন বিশ্বজুড়ে উঠছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী একটি বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেছেন, “যুদ্ধবিরতির আহ্বান হল ইসরায়েলকে হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ করার, সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান, যুদ্ধবিরতি ঘটবে না, এই যুদ্ধে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল লড়াই করবে।” এ যেন নিরীহ মানুষদের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার দম্ভ, যা সদর্পে ঘোষণা করছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। মিত্র হিসেবে তাঁর এই অমানবিক, নৃশংস যুদ্ধবিরতিতে আপত্তির দাবিকে যুক্তরাষ্ট্রও সমর্থন জানিয়েছে।
গাজা উপত্যকায় প্রায় ২৩০ জন ইসরায়েলি এবং বিদেশী নাগরিককে বন্দী করে রেখেছে হামাস জঙ্গিরা। এর ফলে নেতানিয়াহুর সরকার দেশের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। এই যুদ্ধবন্দীরাই হচ্ছে হামাসের কাছে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মুদ্রা, অতীতে ইসরায়েলের জন্য আলোচনার একটি প্রধান কারণ ছিল এটাই।
এদিকে হামাস গতকাল তাদের ৭ অক্টোবরের হামলার সময় বন্দি হওয়া তিন মহিলার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যা ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক বলে ইসরায়েল প্রশাসন মনে করছে। নেতানিয়াহু এই তিন মহিলার যন্ত্রণাদায়ক ছবিকে “নিষ্ঠুর মনস্তাত্ত্বিক প্রচারণা” বলে নিন্দা করেছেন এবং অপহৃত মহিলাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্য একটি উদাহরণ দিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের স্থল অভিযানের সময় গাজা উপত্যকা থেকে একজন মহিলা সৈনিককে তারা মুক্ত করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, “গত রাতে, সৈনিক ওরি মেগিদিশকে ৭ অক্টোবর হামাস দ্বারা অপহরণ করার পর একটি স্থল অভিযানের সময় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।”
হামাস এর আগে দুই মার্কিন নাগরিকসহ চার বন্দিকে মুক্ত করেছিল এবং বলেছিল বন্দিদের মুক্তির জন্য যুদ্ধবিরতি জরুরি। তারা একটি বন্দী বিনিময় চুক্তির বার্তাও দিয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে গাজায় বন্দী সমস্ত বন্দীদের বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে সমস্ত ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার দাবি ছিল।
ইসরায়েলের এই তীব্র সামরিক অভিযানের মধ্যে সোমবার ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলিকে গাজা শহরের প্রান্তে অগ্রসর হতে দেখা গেছে। এএফপি একজন প্রত্যক্ষদর্শীর জানিয়েছে, গাজা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত জায়তুন জেলায় ট্যাঙ্কগুলো প্রবেশ করেছে।
গাজা সীমান্তের কাছে একটি সঙ্গীত উৎসব থেকে হামাস এক জার্মান মহিলাকে অপহরণ করে একটি পিকআপ ট্রাকে নগ্ন অবস্থায় প্যারেড করিয়েছিল, সেই জার্মান মহিলা সোমবার মারা গেছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই জার্মান মহিলাকে অপহরণের পর হামাসের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছিল, তাতে দেখা গিয়েছিল শানি লুক নামের ওই জার্মান মহিলা পিকআপ ট্রাকে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছেন।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের তীব্র সামরিক অভিযান ২.৪ মিলিয়ন অধিবাসীদের ভয়কে তীব্রভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন কি জাতিসংঘের সতর্কতা অনুযায়ী গাজায় যে মানবিক প্রয়োজন অনুযায়ী ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে সেই সাহায্যও পৌঁছাচ্ছে না। এরই মধ্যে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৮,৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের দূত গিলাদ এরদান নিরাপত্তা পরিষদে তাঁর সোমবারের বক্তৃতার সময় নিজের বুকে একটি হলুদ তারকা ঝুলিয়ে বলেন, জাতিসংঘের সদস্যরা হামাসের “নৃশংসতার” নিন্দা না করা পর্যন্ত এই হলুদ তারকাটি তিনি পরে থাকবেন। গিলাদ এরদান হামাসের প্রাণঘাতী হামলার বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে “নিরব থাকার” জন্যও নিন্দা করেছেন।
৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠী ভয়ঙ্কর রকেট হামলা শুরু করার পরে এবং হামাস জঙ্গিরা ইসরায়েলের সীমান্ত শহরগুলিতে তাণ্ডব চালায়, ১৪০০ সাধারণ মানুষকে হত্যা করে এবং আরও বেশ কয়েক’শ সাধারণ মানুষকে অপহরণ করে বলে ইয়াসরিয়েলের দাবি। তাই ইসরায়েলের এখন লক্ষ্য হচ্ছে হামাসের সামরিক সক্ষমতাকে ধ্বংস করে ফেলা। তবে এই কাজ করতে গিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের প্রাণঘাতী যুদ্ধে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন।
❤ Support Us