- এই মুহূর্তে দে । শ
- অক্টোবর ১৭, ২০২৩
হিজবুল্লাহদের লক্ষ্য করে লেবাননে রাতভর ইসরায়েলি হামলা তুমুল গোলাবর্ষণ, আমরা ভয় পাচ্ছি না, পাল্টা হুঁশিয়ারি ফিলিস্তিনিদের

ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি এ বার ইসরায়েলের লক্ষ্য লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। সোমবার রাতভর হিজবুল্লাহদের উপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনা। লেবাননের ভূখণ্ডে হিজবুল্লাহদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে প্রবল ভাবে গোলাগুলি বর্ষণ করা হয়েছে। আকাশপথে এই হামলায় লেবাননে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এখনও স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘‘লেবাননের ভূখণ্ডে জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে ইজরায়েল সেনা হামলা চালাচ্ছে।’’ যুদ্ধের আবহে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরাতে শুরু করেছেন কর্তৃপক্ষ। অন্তত ২৮টি জায়গা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই হামলা দেখে মনে করা হচ্ছে, ইসরায়েল সরকারের লেবাননের ভূখণ্ডে হিজবুল্লাহদের খতম করার জন্য আরও বড় রকমের কোনও হামলার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই হিজবুল্লাহ জানিয়েছিল, তারা এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী হামাসের পাশে আছে। প্রয়োজনে তারাও অস্ত্র হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে নামতে প্রস্তুত। ইসরায়েলের অভিযোগ, হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীকে অস্ত্র, অর্থের জোগান দেয় ইরান। তারাও যুদ্ধে হামাসকে সমর্থন জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনীয় ভূখণ্ডে ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছে। সোমবার ইরান হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছে, ওই এলাকায় তারাও বন্দুক হাতে প্রস্তুত আছে। ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হলে এই হামলার তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলার পর ইসরায়েলি জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার ইসরায়েল সফর করবেন। ইসরায়েলি বাহিনী হামাস-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে স্থল আক্রমণের প্রস্তুতি নিলে, দরিদ্র ও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বৈদেশিক সাহায্য আনার ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। ব্লিনকেনের এই বক্তব্যের মধ্যে এই বার্তা লুকিয়ে আছে যে গাজায় ইসরায়েল হামলা চালাবে, গাজাকে অবরুদ্ধ করবে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য বৈদেশিক সাহায্য আনার বিষয়ে স্প্যর্থক ভূমিকা নেবে।
ইসরায়েল এখন হামাসকে বিপর্যস্ত করতে গাজায় স্থলপথে আক্রমণের কথা ঘোষণা করে দিয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে তারা গাজা ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালাতে পারে। তবে হামাসের মুখপাত্র আবু ওবাইদেহ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েলের যে কোনও হামলার জন্য তারা প্রস্তুত। তারা কোনও হুঁশিয়ারিতেই ভয় পায় না।
গত শনিবার হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে আক্রমণ চালায়। তার পরেই পাল্টা প্রত্যাঘাত করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলিকেও পাশে পেয়েছে ইসরায়েল। এমনকি, ভারত সরকারও এই যুদ্ধে তাদের পক্ষ নিয়েছে এবং হামাস জঙ্গিদের হামলার বিরোধিতা করেছে। পশ্চিম এশিয়ায় প্রায় ১০ দিন ধরে চলা যুদ্ধে চার হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন বলে এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে।
হামাসের ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে তাদের ব্যাপক হামলার পর থেকে ২০০ জনকে বন্দী করে রেখেছে, এবং প্রায় ৫০ জনকে অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী অন্যান্য স্থানে আলাদা ভাবে বন্দী করে রেখেছে।
ইসরায়েলের ওপর হামাসের স্থল-সমুদ্র-বিমান হামলায় ১,৪০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে। প্রতিশোধ হিসেবে পাল্টা ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় ২,৭৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সোমবার ইসরায়েলকে এই মর্মে সতর্ক করেছে যে গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের ফলে জল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ দূষিত উৎস থেকে পাওয়া জল পান করতে বাধ্য হচ্ছেন, এই ঘটনা জলবাহিত রোগের বিস্তার ঘটাতে পারে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী স্থল-ভিত্তিক হামলার প্রস্তুতি হিসেবে গাজার উপকণ্ঠে সাঁজোয়া জারি মজুত রেখেছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলেছে যে গাজায় যে কোনও স্থল আক্রমণ একটি “রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের” উপর নির্ভর করবে। একটি সম্ভাব্য আক্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে, ইসরায়েল, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এর সম্মিলিত শক্তির সাথে ৪ লক্ষের এরও বেশি সংরক্ষিত সেনা মোতায়েন করেছে৷
এদিকে আরব লীগ এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন গাজায় ইসরায়েলের এই সম্ভাব্য স্থল আক্রমণের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে কঠোর সতর্কতা জারি করে বলেছে যে এই সম্ভাব্য স্থল আক্রমণের ফলে বড় সংখ্যায় গণহত্যা হবে।
❤ Support Us