Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • অক্টোবর ১৪, ২০২৩

রয়টার্সের সাংবাদিক নিহত। লেবাননেও ইসরায়েলের লাগাতার বোমা হামলা। পাল্টা আক্রমণ হিজবুল্লার। বিদ্ধস্ত ইসরায়েলি গ্রাম

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
রয়টার্সের সাংবাদিক নিহত। লেবাননেও ইসরায়েলের লাগাতার বোমা হামলা। পাল্টা আক্রমণ হিজবুল্লার। বিদ্ধস্ত ইসরায়েলি গ্রাম

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীর যুদ্ধের খবর সংগ্রগে গিয়ে যুদ্ধের বলি এক সাংবাদিক। আহত আরও ছয়জন সাংবাদিক। ঘটনাস্থলে থাকা রয়টার্সেরই অন্য একজন ভিডিও সাংবাদিক জানিয়েছেন, শুক্রবার ইসরায়েলের দিক থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র তাদের আঘাত করলে দক্ষিণ লেবাননে রয়টার্সের একজন ভিডিও সাংবাদিক নিহত এবং আরও ছয়জন সাংবাদিক আহত হন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন আল জাজিরা, রয়টার্স, এপি-সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।

আল জাজিরা এবং এজেন্স ফ্রান্স-প্রেস সহ সাংবাদিকদের এই দলটি ইসরায়েল সীমান্তের কাছাকাছি আলমা আল-শাবের কাছে কাজ করছিল, যেখানে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এবং লেবানিজ সেনা হিজবুল্লাহ-এর মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষে সাংবাদিকদের এই নিদারুন পরিণতি হল।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি এবং হিজবুল্লাহর একজন আইনপ্রণেতা এই ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম “দ্য টেলিগ্রাফ” জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন রয়টার্সের চিত্র সাংবাদিক ইশাম আবদুল্লা। এক বিবৃতিতে রয়টার্স জানিয়েছে, “ইশাম দক্ষিণ লেবাননে কাজ করছিলেন। সেখানেই গোলাবর্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা মর্মাহত। ওই অঞ্চলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ইশামের পরিবারের পাশে রয়েছে রয়টার্স।” সংস্থাটির পক্ষে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলের গোলাবর্ষণে তাদের আরও দুই সাংবাদিক থায়ের আল-সুদানি এবং মাহের নাজেহ আহত হয়েছেন। রয়টার্স তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই চিত্র সাংবাদিক যখন যখন লাইভ সম্প্রচারের কাজ করছিলেন, তখন পাহাড়ের দিক থেকে হওয়া একটি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে তাঁর ক্যামেরাটি কেঁপে ওঠে এবং বিকট চিৎকার শোনা যায়। তখনই ইশাম আবদুল্লার মৃত্যু হয়। নাজেহ জানিয়েছেন, রয়টার্স এবং অন্য দুটি সংবাদ সংস্থা যখন একটি নিচু পাথরের দেওয়ালে বসে ইসরায়েলের দিক থেকে আসা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ভিডিও করছিল তখন সেই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত আবদুল্লাহর  লাগে, তখন তাঁর সঙ্গে অন্য সাংবাদিকদের একটি দল ছিল। এই ঘটনার কয়েক সেকেন্ড পরে, আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র স্যাবাদিকদের দলের ব্যবহৃত গাড়িতে আঘাত করে, গাড়িটিতে তখন আগুন লেগে যায়। তার ফলেই আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এবং আল জাজিরা সহ অন্যান্য সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে যে শেলগুলি ইসরায়েলি ছিল, তবে রয়টার্স আসলে এই  ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইস্রায়েল দ্বারা নিক্ষেপ করা হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি। এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস জানিয়েছে, তাদের দুই সাংবাদিক এই ঘটনায় আহত হয়েছেন।

কাতারের সম্প্রচারকারী সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা বলেছে যে তাদের দুই সাংবাদিকও এই ঘটনায় আহত হয়েছেন এবং স্পষ্টতই তাঁরা সংবাদ মাধ্যম বা প্রেস হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। এই ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে আল জাজিরা বলেছে, এই অপরাধমূলক কাজের পিছনে যারা রয়েছে তাদের সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে।

আল জাজিরা এক বিবৃতিতে বলেছে, “সম্প্রচারের গাড়িটি বোমা বিস্ফোরণের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট  জায়গায়  আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের সাথে আমাদের সাংবাদিকরা কাছাকাছি, পাশাপাশি থাকা সত্ত্বেও এই ঘটনা ঘটেছে।”

হিজবুল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে আরও দক্ষিণে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আলমা আল-শাব গ্রামটি বারবার সংঘর্ষের ভিত্তিভূমি হয়ে উঠেছে।

ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী যোদ্ধারা এক সপ্তাহ আগে গাজা উপত্যকা থেকে বেরিয়ে আসে এবং ইসরায়েলি সাধারণ নাগরিক ও সৈন্যদের উপর মারাত্মক হামলা ও ভারী বোমাবর্ষণ শুরু করে।

রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবদুল্লাহর মা ফাতিমা কানসো তাঁর ছেলের মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন,
“ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। তারা সবাই সাংবাদিকদের পোশাক পরেছিল এবং ‘প্রেস’ শব্দটি তাঁদের পোশাকে দৃশ্যমান ছিল। ইসরাইল এই অপরাধ অস্বীকার করতে পারে না।”

আবদুল্লাহ নিহত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের একটি হেলমেট এবং একটি ফ্ল্যাক জ্যাকেট পরা ছবি পোস্ট করেছিলেন যাতে “প্রেস” শব্দটি দৃশ্যমান ছিল। তবে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী কানসোর মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার অনুরোধের কোনও জবাব দেয়নি।

লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী বাহিনী, যারা ইসরায়েলের সাথে লেবাননের সীমান্তে টহল দেয়, এমন একটি শান্তিরক্ষী ইউনিট বলেছে যে তারা এই খবরে ব্যথিত, অবিলম্বে এই গোলাগুলি বর্ষণ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই ঘটনা প্রমাণ করছে, যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে, এই যুদ্ধ এখন অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।”

ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এই ঘটনায় কোনও বিবৃতি দেয়নি। ইসরায়েলের জাতিসংঘের দূত, গিলাদ এরদান শুক্রবার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন,  “অবশ্যই, আমরা কখনই কোনও সাংবাদিককে আঘাত বা হত্যা করতে চাই না।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশ এই ঘটনার তদন্ত করবে।”


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!