- এই মুহূর্তে ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
- মার্চ ৫, ২০২৫
যাদবপুরের ঘটনার আঁচ নাট্যজগতে, মিনার্ভা থেকে ইস্তফা নাট্যকর্মী স্বাগতা চক্রবর্তীর

নাট্যজগত ও প্রতিবাদ অঙ্গাঙ্গি জুড়ে থাকে। ইতিহাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ও সামাজিক নিপীড়ন, বঞ্চনা ও অন্যায়ের প্রতিবাদে বারবার মুখর হয়েছেন নাট্যকার ও নাট্যকর্মীরা। বিজন ভট্টাচার্য, বাদল সরকার, উৎপল দত্ত, গিরিশ ঘোষ, সফদার হাশমি, বিজয় তেল্ডুলকরের মতো নাট্যব্যক্তিত্বরা নিজেদের নির্মাণে প্রতিবাদের অনন্য স্বর হয়ে উঠেছিলেন। বাংলায় প্রতিবাদী নাটকের উদ্ভবের সময়, সামাজিক সমস্যা ও কু-প্রথার বিরুদ্ধে নাটকধর্মী স্কেচ রচিত হয়েছিল। এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যনাট্যগুলি বিভিন্ন চরিত্রের অন্তর্মুখী ভাবের প্রবণতা দেখিয়েছে। দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে মন্মথ রায়ের নাটক ‘কারাগার’ নাটক প্রতিবাদের দুঃসহ অভিব্যক্তি।
বাঙালির আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে, লাগাতার প্রশ্ন তুলতে, চেতনা ও মননের নির্মাণে নাট্যজগত তার স্বকীয় ভূমিকা রেখে চলেছে। শাসকের বিরুদ্ধে কখনো কখনো নিদারুণ আঘাত এনেছে সাধারণ মানুষের বিদ্রোহের আয়না, নাটক। কখনো ‘সিরাজদৌলা’ নাটক সাম্প্রদায়িকতাকে নাকচ করে ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছে, কখনো আবার কালোবাজারের বানানো দুর্ভিক্ষ নিয়ে গলা তুলেছে ‘নবান্ন’। ষাট-সত্তরের দশকে আইপিটিএ সরাসরি রাষ্ট্রেযন্ত্রের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। ‘টিনের তলোয়ার’, ‘ঘুম নেই’ নাটকে উৎপল দত্ত সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের জীবন সংগ্রাম থেকে প্রতিরোধে রূপান্তরের ছবি এঁকেছিলেন। বাম রাজনীতির ছত্রছায়ায় পথনাটকের প্রচার ও প্রসার হয়েছে কয়েক দশক জুড়ে। বাদল সরকার, সফদার হাশমিরা মানূষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজেদের কথা সোচ্চারে বলে গিয়েছেন। তাই নাটক যে লোকশিক্ষার অস্ত্র, তা অস্বীকার করবার জো নেই। দর্শকের সঙ্গে সঙ্গেই নাট্যকারের জীবনও বদলে যায়, অন্য চেতনার ভূবনে পাড়ি দেয় শিল্পী মন।
আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে স্টেজ ছেড়ে রাস্তায় নেমেছিলেন অভিনেতা, শিল্পী, পরিচালক ও নাট্যকর্মীরা। একাডেমিতে সারারাত ধরে মঞ্চস্থ হয়েছিল নাটক। ‘তিলোত্তমা’ সুবিচার পাবে! আশঙ্কা ও আকাঙ্ক্ষায় রাত জেগেছিলেন অগুনতি দর্শক। সে সময় ধর্না ও সমাবেশ মঞ্চ প্রতিবাদের পথনাটকে, কবিতায়, গানে মুখর হয়েছিল। সমাজে প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিকতা ও নারীসুরক্ষায় করুণ অবস্থার অন্তঃপাঠ দেখেছিলাম আমরা।
নাট্যজগতের প্রতিবাদের ধারা যে অব্যহত, তার উদাহরণ মিলল যাদবপুরের ঘটনায়। শনিবার শিক্ষামন্ত্রীর ক্যাম্পাস আসাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যাল। ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী ছাত্রকে গাড়ি চাপা দেবার অভিযোগ উঠেছে। পাল্টা পড়ুয়াদের দিকে কঠাক্ষ, সমালোচনা ছুড়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের উভয় শাসক দল। নাগরিক সমাজ দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ শিক্ষামন্ত্রী, নাটক্যার ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, তো কেউ আবার ছাত্রদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এ সবের মাঝে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে সামিল হলেন নাট্যকর্মী স্বাগতা চক্রবর্তী। যাদবপুরকাণ্ডের জেরে মিনার্ভা রেপার্টরি ছাড়লেন তিনি। ইস্তফা পত্রে তিনি লিখছেন, ‘যাদবপুরের ঘটনার পরে ব্রাত্য বসুর অধীনে শিল্পী হিসেবে যুক্ত থাকা সম্ভব নয়’ । মিনার্ভার নাট্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সচিবকে ইস্তফা পত্র জমা করেছেন তিনি। চিঠিতে মির্নাভা থিয়েটারের কাজের পরিবেশ নিয়েও সমালোচনা করেছেন স্বাগত। মিনার্ভা রেপার্টারির চেয়ারম্যান ব্রাত্য বসু, এই খবর পেয়ে তিনি বলেছেন, ‘স্বাগতাকে শুভেচ্ছা, ভালো কাজ করো, বড় হও।’ নাট্যকর্মীর এ হেন সুদৃঢ় অবস্থানে নাট্যগতের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এ সময়ে দাঁড়িয়ে যখন অভিনেতা, গায়ক, কলাকুশলীরা ঘনঘন নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেন, শাসক বৃত্তের কাছাকাছি থাকতে চান, সেই অন্ধকারময় সময়ে স্বাগতার দৃঢ়, সবাক প্রতিবাদের পদধ্বনি অনেককাল ধরে ধ্বনিত হতে থাকবে।
❤ Support Us