- দে । শ
- জুন ১৪, ২০২৪
কথার বিদায়ে কথা-হারা কালনা হাসপাতাল
কথাকে বিদায় দিয়ে কথা হারিয়ে ফেলেছেন কালনা মহকুমা হাসপাতালের নার্স-ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীরা। জন্মের পর থেকে আদরে-ওষুধে-সেবায় বড় করে তুলছিলেন নার্স পুতুল দত্ত, বনলতা মণ্ডলরা। সরকারি নিয়ম মেনেই ৪৮ দিন পর পূর্ব বর্ধমান জেলা শিশু সুরক্ষা কমিটির হেফাজতে তুলে দেওয়া হল অনাথা কথাকে। তাই শুধু বনলতা-পুতুলেরই মনেই নয়, বিষাদের মেঘ গোটা হাসপাতালজুড়ে। গত ১৬ ই এপ্রিল হুগলীর বলাগড়-সোমড়ার বাসিন্দা অন্তরা বিশ্বাস নামের এক বধূকে অন্তঃসত্বা অবস্থায় কালনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের দিনই তিনি এক অসুস্থ শিশুকন্যার জন্ম দেন। কন্যাসন্তান জন্মানোর কয়েকঘন্টা পরেই মৃত্যু হয় অন্তরার। শিশুটিকে এসএনসিইউ বিভাগে ভর্তি রেখে চিকিৎসা শুরু হয়। এদিকে অন্তরার মৃত্যুশোক সহ্য করতে না পেরে তার স্বামী নবীন হালদার আত্মঘাতী হন। শিশুর বাড়িতে খবর দেওয়া সত্ত্বেও ‘অপয়া কন্যাসন্তানকে’ কেউ নিতে আসেনি। তাই অনাথ হয়ে পড়া শিশুটিকে ওষুধ, পথ্য, খাবার খাওয়ানো থেকে শুরু করে সমস্তরকম দেখভালের দায়িত্ব নেন ওই বিভাগের নার্সরা। কেঁদে উঠলে কোলে তুলে নিয়ে আদর দিয়ে ভুলিয়ে ঘুমও পাড়িয়ে দেন। সযত্নে লালন-পালন করে বেশ বড় ও সুস্থ করে তোলেন। নামকরণ করেন ‘কথা’।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার ভবিষ্যৎ ও সুরক্ষার স্বার্থে জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন ওয়েলফেয়ার কমিটিকে চিঠি পাঠান। শিশুটিকে দত্তক নিতে হলে সরকারি যে নিয়মকানুন রয়েছে সেই বিষয়ে সকলকে সচেতন করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানালেন হাসপাতালের সহকারি সুপার শামিম মল্লিক। কথাকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার মানস দত্ত, দুই সহকারী সুপার গৌতম বিশ্বাস ও শামিম মল্লিক, ডাক্তার ও নার্সরা। বনলতা মন্ডল নামে এক নার্স জানান, ‘বাচ্চাটির সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে একদিন তাকেতো পাঠাতেই হত। কিন্তু সেই দিনটা যে আজই তা জানা ছিলনা। তাই আমরা এত কষ্ট পাচ্ছি।’ পুতুল দাস নামে আরেক নার্স বলছিলেন, ‘কথা জন্মের পর ৪৮ দিন আমাদের সঙ্গে কাটাল। সন্তানের মত করেই আমরা ওকে সুস্থ ও বড় করে তুলেছি। ওকে বিদায় জানাতে হওয়ায় বুকটা হাহাকার করে উঠছে।’ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার মানস দত্ত জানান, ‘এসএনসিইউ ওয়ার্ডে থাকা শিশুটিকে সুস্থ করে বর্ধমানে চাইল্ড প্রোটেকশন ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা চাই বাচ্চাটি সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে উঠুক।’
❤ Support Us