Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • মে ১৩, ২০২৩

জনরায়ের সিদ্ধান্ত, কর্ণাটকে নাটক নয়। হাতের জোরে বিপর্যস্ত বিজেপির দক্ষিণী ল্যাব

শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত
জনরায়ের সিদ্ধান্ত, কর্ণাটকে নাটক নয়। হাতের জোরে বিপর্যস্ত বিজেপির দক্ষিণী ল্যাব

কর্ণাটকে বিজেপির “ওয়াটারলু”, কুর্শি দখল করল কংগ্রেস। এটা কি দিল্লির দিকে ক্রমশ কংগ্রেসের এগোবার ইঙ্গিত? কর্ণাটক নির্বাচনের ফল সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবরে কংগ্রেস একক সংখ্যগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পেরেছে কর্ণাটকে। এদিকে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু এই ফল দেখে টুইটে লিখেছেন, ” কর্ণাটক আজ যা ভাবে, ভারত কাল তা ভাববে।” তাঁর এই টুইট যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

নরেন্দ্র মোদির “ইমেজ পলিটিক্স” যে দেশে ক্রমেই আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে এই ফল তারই প্রমাণ। গণতন্ত্রের পক্ষে “ইমেজ পলিটিক্স” কখনই ভালো নয় এবং মানুষ যে বিজেপির এই রাজনৈতিক ধারা মানতে পারছে না, কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফল সেটা স্পট করে দিল। ধর্ম কেন্দ্রীক রাজনীতিও যে গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ সূচক নয়,বিজেপির এই ধর্ম ও রাজনীতি মিলিয়ে দেওয়ার কৌশল যে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন, কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনের ফল তাই প্রমাণ করছে। ভারত নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের দেশ। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফল সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। নরেন্দ্র মোদির কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে সেই রাজ্যে ১০টি জনসভা করেছেন, জয় শ্রীরাম, জয় বজরংবলি স্লোগান, অমিত শাহর রোড শো, কর্ণাটকের মানুষ যে মেনে নেয়নি,এই ফলই তার প্রমাণ।

নরেন্দ্র মোদি কর্ণাটকে নির্বাচনী প্রচারে এসে যতবার জয় শ্রীরাম বলেছেন তার চাইতে অনেক বেশিবার জয় বজরংবলি স্লোগান দিয়েছেন। ২ রাত নরেন্দ্র মোদি কর্ণটকে রাত কাটিয়েছে।

বিজেপির স্লোগান ছিল “নরেন্দ্র মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়”। রাহুল গান্ধির ” ভারত জোড়ো যাত্রা” যে তাহলে নরেন্দ্র মোদির “ইমেজ পলিটিক্স”-এর মূলে আঘাত করতে সক্ষম হল সেটাই কর্ণাটকের মানুষ প্রমাণ করে দিলেন। মোদি যখন দামি গাড়িতে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে পুষ্পবৃষ্টির মধ্যে রোড শো করেছেন তখন রাহুল গান্ধিকে দেখা গেছে ভিড়ের মধ্যে প্রচার সেরে তিনি কংগ্রেস সমর্থকের স্কুটারের পিছনের আসনে হেলমেট পরে পরের সভায় ছুটছেন। রাহুল গান্ধির এই আচরণ কর্ণাটকের রাজনীতিতে মান্যতা পেয়েছে। তাই কর্ণাটকে “পদ্ম” উপড়ে ফেলল “হাত”।

এদিকে কর্ণাটকের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ মোম্বাই এই পরাজয় মেনে নিয়ে বলেছেন, “শত চেষ্টা করেও পারলাম না। পরাজয়ের কারণ পর্যালোচনা করব।” এরপর তিনি বলেছেন, “চাইলে আবার সরকার গঠন করতে পারি।” মোম্বাইয়ের এই কথা “হর্স ট্রেডিং”-এর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এদিকে কর্ণাটকে কংগ্রেসের সাফল্য দেখে আনন্দিত হয়ে টুইট করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি টুইটে লিখেছেন, “নো ভোট টু বিজেপি স্লোগানে কাজ হয়েছে।” প্রসঙ্গত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে কর্ণাটক নির্বাচন নিয়ে বলেছিলেন, “কর্ণাটকের মানুষদের বলব নো ভোট টু বিজেপি।” কুণাল ঘোষ কি কণাটকে কংগ্রেসের জয়ের পিছনে মমতার স্লোগান কাজ করেছে বোঝাতেই এই টুইট করেছেন? রাজনৈতিক মহলে এই প্রশ্ন উঠেছে।
আসলে বিজেপিকে সরিয়ে কংগ্রেসকে কর্ণাটকের কুর্শিতে বসানোর পিছনে রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো যাত্রার বড় ভূমিকা কাজ করেছে। তাই রাহুল গান্ধির গুরুত্ব হ্রাস করতেই যে কুণালের এই কৌশলী টুইট তা কারও বুঝতে অসুবুধা হচ্ছে না। কেন না এটা না করলে মমতা, অভিষেক ও তৃণমূল জাতীয় রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। প্রাধান্য ও গুরুত্ব বাড়বে রাহুল গান্ধি ও তাঁর দলের।

মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, “এই জয় জনতা জনার্দনেরনজয়।” কর্ণাটকের কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমার বলেন, “সোনিয়া গান্ধিকে কথা দিয়েছিলাম জিতব।” এই কথা বলতে বলতে তাঁর চোখে জল এসে গিয়েছিল, গলাও ধরে আসছিল কান্নায়।

কংগ্রেস সরাসরি ৩০০ আসনে বিজেপির বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটে লড়াই করে। তাও বিজেপি বিরোধী জাতীয় জোটে কংগ্রেসকে নেতৃত্বের জায়গা দিতে রাজি নয় তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি, বিজেপিকে রুখতে কংগ্রেসের চাইতে মমতার ক্ষমতা ও সদিচ্ছা বেশি। কর্ণাটকের বিধানসভার ফল কিন্তু প্রমাণ করছে বিজেপিকে রুখতে কংগ্রেস সক্ষম। এই পরিস্থিতিতে কর্ণাটকের জয় দেখে কুণাল ঘোষের এই উৎসাহ টুইট অবাক করছে। এবার কি তাহলে কংগ্রেসকে দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিতে তৃণমূল চাইবে? না চাইলে বিজেপির হাতই তৃণমূল শক্ত করবে সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে,এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি বিরোধী জোটে কংগ্রেসকে নেতৃত্বে মানতে চাইছে না। মমতা বলছেন, যে রাজ্যে যে শক্তিশালী সেখানে সেই দল লড়বে। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়া, মেঘালয়ে প্রার্থী দিয়েছে, সেখানে তৃণমূলের কোনও শক্তি না থাকার পরেও। আর তাতেই বিজেপির সুবিধা হয়েছে। কর্ণাটকে মমতা যায়নি। তাই কংগ্রেসের ভোট কাটেনি, তাই বিজেপি কর্ণাটকে পারাজিত হল। তাই মমতা যতোই বিজেপি বিরোধী জোটের কথা বলুন কংগ্রেসকে অগ্রাধিকার না দিয়ে সেই জোট করলে তৃণমূল বিজেপির হাতই শক্ত করবে। তবে তৃণমূল বাংলায় যে ভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে দুর্নীতি ইস্যুতে, তাতে তৃণমূলের পক্ষে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জাতীয় স্তরে জোট গঠনে কোনও দল সম্মত হবে বলে মনে করেন না রাজনৈতিক মহল।
এই প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, “বিজেপিকে দেশ থেকে হঠাতে পারে একমাত্র কংগ্রেস।” সুজন চক্রবর্তী বলেন, “কুণাল ঘোষ যা বলছে তার বাস্তবাতা নেই। এটাই যদি হবে তাহলে মেঘালয়, গোয়ায় প্রার্থী দিয়েছিল কেন কংগ্রেস?  ওখানে কি কংগ্রেসের থেকে তৃণমূল শক্তিশালী ছিল? তৃণমূল এই দুই রাজ্যে ভোটে প্রার্থী দিয়ে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছে। কর্ণাটকে যায়নি বলে বিজেপি হেরেছে। যদি নো ভোট টু বিজেপি স্লোগানে তৃণমূল বিশ্বাস করবে তাহলে কেন কর্ণাটকে জেডিএস-এর হাত শক্ত করতে প্রচারে গেল না?”

কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ও সাগরদিঘির বিধানসভা উপনির্বাচন তৃণমূল ও বিজেপির কাছে অশনিসংকেত বলে মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

এই ফল বলে দিচ্ছে, কর্ণাটকের মানুষ যেমন ভাবে নরেন্দ্র মোদির ঘৃণার রাজনীতি প্রযাখ্যান করল,এই রায়কে সামনে রেখেই ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কতটা এগিয়ে যেতে পারে এখন সেটাই দেখার।

তবে কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয় দেখে কলকাতার ভবানীপুর, বউবাজারে কংগ্রেস মিছিল করেছে। দুরৃগাপুর, পুরুলিয়া,শিলিগুরি,বহরমপুরে রাস্তায় নেমে কংগ্রেস মিছিল করছে।

শেষ পর্যন্ত পাওয়া ফল থেকে জানা যাচ্ছে: কর্ণাটকে মোট আসন- ২২৪
কংগ্রেস এগিয়ে ১৩৩ আসনে
বিজেপি এগিয়ে ৬৫ আসনে
জেডিএস এগিয়ে ২২ আসনে
অন্যান্যরা ৪টি এগিয়ে।

তবে হর্স ট্রেডিং রুখতে এবার আগাম উদ্যোগী হয়েছে কংগ্রেস। গরিষ্ঠতা মিললে কাল বৈঠক। কথায় সকাল ভালো ভাবে শুরু হলে দিন ভালো যায়, কর্ণটকে বিজেপি রাজ্য দফতর খুলতেই এক প্রকাণ্ড কিং কোবরার দেখা মিলেছে এদিন সকালে, তাহলে কি তখনই ইঙ্গিত মিলেছিল পরাজয়ের?


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!