Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • অক্টোবর ৩১, ২০২৪

খয়রাখাগী কালীর ভোগে মাছ

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
খয়রাখাগী কালীর ভোগে মাছ

খয়রা মাছে তুষ্ট হন কালী। আজও সোনাই নদীতে জাল ফেলে বিথারি কালী মন্দিরে ভোগে দেওয়া হয় খয়রা মাছ। তাই তিনি খয়রাখাগী কালী। জনশ্রুতি ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পুজো করেছিলেন বিথারির খয়রাখাগী কালীমন্দিরে। ভারত–‌বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া স্বরূপনগরের বিথারি গ্রামে কালিমন্দির ঘিরে অনেক কাহিনী। কালী পুজোর দিন খয়রা মাছ দিয়ে মায়ের ভোগ দেওয়া হয় । তাই এলাকার মন্দিরের কালীরবিগ্রহের নাম খয়রাখাগী কালী। অনেকে বিথারি কালী মন্দির বলেও চেনেন । ষোড়শ শতাব্দির শেষ দিকে কাশীবাসী ব্রাহ্মণ গোপাল সার্বভৌম নামে এক সন্ন্যাসীর হাতে জঙ্গল ঘেরা বিথারী শ্মশানে কালি মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয় । পরে বিষ্ণুপুরের রাজা সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন । তারও বহু বছর পর রাণী রাসমনির উদ্যোগে মন্দিরটি পুনরায় সংস্কার করা হয় । মন্দিরের কাছেই ছিল রাসমনির জামাই মথুর মোহন বিশ্বাসের জন্ম ভিটা। মথুরবাবু আসতেন। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণকেই এনেছিলেন এই মন্দিরে। পুরনো রীতি রেওয়াজেই এখনও বিথারী মন্দিরে ধুমধাম করে কালী পুজো হয় । জাগ্রত এই মন্দিরের পুজো দেখতে এলাকার কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান এই মন্দিরে । সারা বছরই দূর দূরান্ত থেকে মানুষের সমাগম লেগেই আছে মন্দিরে । বর্তমানে ট্রাস্টি বোর্ডের পাশাপাশি ১৬৪ জন সেবাইত পালা করে প্রতিদিনই মন্দিরে পুজোর আয়োজন করেন। নাটমন্দির, পুকুর সহ পাঁচ বিঘা জমির উপর মন্দিরটি ঘিরে অনেক লোক কথা ছড়িয়ে আছে । মন্দিরের পূজারী সঞ্জীব চক্রবর্তী বলেন, বিথারী গ্রামের খয়রাখাগী কালী খুব জাগ্রত । ভক্তের মনের ইচ্ছা পুরণ হয় । আর সে কারনেই সারা বছর মন্দিরে ভক্তের ভিড় লেগেই থাকে । কথিত আছে, রাজা প্রতাপাদিত্য ইংরাজি ষোড়ষ শতাব্দীর শেষ দিকে কাশী দশাস্বমেধের ঘাটে গোপাল সার্বভৌম নামে এক ব্রাহ্মণের দেখা পান। তার কণ্ঠে বেদ পাঠ শুনে যশোরে তার রাজ্যাভিষেকের দিনে বেদ পাঠের জন্য গোপাল সার্বভৌমকে আমন্ত্রণ করেন । যশোহরে যাওয়ার পথে এক অমাবস্যার রাতে বিথারী শ্মশানে মায়ের মূর্তিপুজোর পর স্বপ্নাদেশ পান ওই স্থানে মন্দির প্রতিষ্ঠার । একই সময়ে রাজা প্রতাপাদিত্য একই স্বপ্নাদেশ পান। পরে রাজা প্রতাপাদিত্য ১৬৩ একর জমি ও প্রচুর অর্থ প্রদান করেন গোপাল সার্বোভৌমকে। সেই থেকে শুরু হয় বিথারী শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় কালী পুজো। শুরু হয় মন্দির প্রতিষ্ঠার তোড়জোড় । মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া স্বর্ণ (‌সোনাই)‌ নদী। এখন সেটা ভারত বাংলাদেশের সীমানা। এই গ্রামেরই মথুর মোহোন বিশ্বাসকে রাণী রাসমনীর জামাতা করেন । এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, মথুর বাবুর সঙ্গে এই গ্রামে আসেন শ্রীরামকৃষ্ণ। কথিত আছে শ্রীরামকৃষ্ণ বিথারির খয়রাখাগী কালীর পুজো করেন। এখন মন্দিরে ধুমধাম করে কালী পুজো ও মাঘমাসের চতুর্দ্দশীতে রটন্তী কালী পুজো হয়। আর এই পুজো উপলক্ষে সোনার গহনায় কালীবিগ্রহকে সাজানো হয় । মন্দিরের এক সোবাইত শ্রীকুমার চক্রবর্তী বলেন ,মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া স্বর্ন নদী মজে গিয়েছে। কালী পুজোর দিন এই নদীতে জাল ফেললে প্রচুর খয়রা মাছ পাওয়া যায় । খয়রা মাছ দিয়েই মন্দিরের কালী মায়ের ভোগ দেওয়া হয় । এখনও কালী পূজার দিনে পাঁঠা বলির রেওয়াজ আছে। পুজোর পরদিন গ্রামের মানুষকে ডাকা হয় বেগার দিতে (প্রসাদ খেতে)। পুজোর অন্যতম দায়িত্বে থাকা অমল চক্রবর্তী বলেন, পূর্বপুরুষের প্রথা মেনেই এখনও আমরা বিথারী কালী মন্দিরে কালী মায়ের পুজো করে চলেছি।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!