- ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
- ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
রুশ চলচ্চিত্রে যুদ্ধ বিরোধী বার্তা, ব্রিটিশ ছায়াছবিতে দেশহারাদের করুণ কাহিনী
৮ তারিখ, নন্দনে সকালে, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল মঞ্চে প্রদর্শিত হওয়ার কথা ছিল রাশিয়ার প্যাভেল লুনজিন (Pavel Lungin) এর “জার”, পরিচালক মঞ্চে এসে জানালেন সে ছবি আসেনি, পরিবর্তে প্রদর্শিত হবে “ব্রাদারহুড”, বা ” লিভিং আফগানিস্তান”(২০১৯)।
সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ছবির বিষয়, ১৯৮৮-৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে রুশ বাহিনী প্রত্যাহার । চলচ্চিত্রের শুরুতে, সেনা সরে আসার সময় ঘটল এক অদ্ভূত ঘটনা । ১০৮ নম্বর রাইফেল ডিভিশনের জেনারেলের পুত্র হঠাৎ বেপাত্তা । বিমান দুর্ঘটনায় প্যারাসুট নিয়ে প্রাণ বাচাতে গিয়ে ছেলেটি সন্ত্রাসবাদীদের হাতে পণবন্দী হয় । তাকে উদ্ধার করতে আফগান বাজার, প্রত্যন্ত এলাকা ও রুক্ষ পাহাড়ের গ্রামে ঢোকে ১০৮ নম্বর বাহিনী । প্রাথমিক স্তরে সেভিং প্রাইভেট র্যায়ান সিনেমার সঙ্গে এই চলচ্চিত্রের কিছু মিল পাওয়া যায়, তবে চিত্রধরণ আলাদা ।
উদ্ধার পর্বে দুপক্ষের গোলাগুলিতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ে । এক আস্তাবলে জেনারেলের ছেলের পোশাক পেয়ে, রুশ সেনা সেখানে তল্লাশি বাড়ায় । গোপন খবর উদ্বারে চর নিয়োগ করতেই, রুশ সেনা কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, ওই অঞ্চলের দুই উপজাতির মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আছে । ফলে সহজে কোনো খবর পাওয়া যাবে না ।
ক্রমে যুদ্ধের বীভৎস রূপ এই শেষ পর্বেও অসহ্য হতে থাকে, কারণ আফগানদেরও অস্ত্র যোগানের উৎসের অভাব নেই ! এমনকি রাশিয়ানদের থেকেও লুকিয়ে অস্ত্র কেনে তারা । সেই সুযোগে কামান বেচতে গিয়ে এক রুশ অস্ত্র্র ব্যবসায়ী পণবন্দী হন । ঘটনাচক্রে সে আর জেনারেলের ছেলে একই কুঠুরিতে বন্দি । হতাশায় বাঁচার আশা ছেড়ে পালানোর কথা ভাবছে । এদিকে পালাবার একমাত্র পথ সালাঙ গিরিপথ আগলে বসে আছে এক জঙ্গি । অবশেষে তার সঙ্গেই অর্থের বিনিময়ে মুক্তির চুক্তি হয় ওই অস্ত্র ব্যবসায়ীর । কিন্তু জেনারেলের ছেলে মুক্তির এই গোপন পরিকল্পনা না বুঝতে পেরে, স্নানের সময় নদী সাঁতরে পালতে যায় এবং ১৫ বছরের এক তালিবানের হাতে গুলিবিদ্ধ হয় । ছেলের মৃত্যুর প্রতিশোধে রুশ জেনারেল সে অঞ্চলে কার্পেট বোম্বিং শুরু করে । একসময় দুপক্ষই যখন যুদ্ধে ক্লান্ত, ক্ষতবিক্ষত । তখন রুশ বাহিনীর মনে জেনারেলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয় । হতাশাগ্রস্ত রুশ সেনারা বলতে থাকে এ যুদ্ধ নিরর্থক । যুদ্ধে আহত এবং বেঁচে ফেরা সেনারা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েও সন্দিহান হয়ে যান । তারা ভাবতে থাকেন তাদের জীবনের কেনো অস্তিত্ব নেই, রাশিয়া টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে । অনর্থক লড়াইকেই তারা বারবার দুষতে থাকেন ।
দিনের শেষ ছবি, তুরস্কের নুরি বিলগে সিলানের “এবাউট ড্রাই গ্রাসেস”(২০২৩)। অসাধারণভাবে এক প্রত্যন্ত গ্রামের দুই শিক্ষকের গল্প । যেখানে শীত আর গ্রীষ্ম ছাড়া কোনো ঋতু নেই । তুমুল বরফের সাদা পটে কিছু বেড়া, বাস থামিবে-র থাম যেন আঁকা ছবি । ছুটি কাটিয়ে বাস থেকে নেমে শিক্ষকের দীর্ঘ হেঁটে আসা ভালো ধরতাই দিয়ে আবহ বুঝিয়ে দেয় ।
তারপর দুই ছাত্রীর কাণ্ড, এক খোঁড়া মহিলাকে নিয়ে দুই শিক্ষকের টানাপড়েন, প্রশাসকের ভুল ও বড়ো শহরে ফেরার টান নিয়ে ১৯৭ মিনিটের দীর্ঘ বিশদ ও সূক্ষ্ম কাজে মানব সম্পর্কের চেতন ও অবচেতন নিয়ে দক্ষ হাতে খেলে, অসাধারণ এক শিল্প উপহার দিয়েছেন সিলান ।
এদিন প্রদর্শিত অসমিয়া ছবি সমর্পণ, (২০২৩), এক সাধারণ মানের ছবি । তবে ব্রিটিশ পরিচালক কেন লোচের “দ্য ওল্ড ওক”(২০২৩) তাঁর অন্যান্য ছবির মতোই উল্লেখযোগ্যভাবে সাধারণ মানুষের দুর্দশার ছবি এঁকেছে । উত্তর পশ্চিম ইংল্যান্ডের ছোট গ্রামে সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দেবার এক মর্মস্পর্শী বিবরণ আছে এখানে । প্রথম দিকে সকলে তাদের দূরছাই করলেও একটি সিরিয়ান মেয়ে ও স্থানীয় পাবমালিক মিলে সব ধারণা পাল্টে দিয়ে জনপদে মিলমিশ নিয়ে আসে ।
❤ Support Us