- ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
- ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
মহানগরে রঙ ছড়ালেন খোশমেজাজি দালি
ফরাসি পরিচালক ক্যাথরিনের ধারালো নির্মাণ আর ইউক্রেনের চলচ্চিত্রে রণমুক্তির স্বপ্ন
এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হল ফরাসি চলচ্চিত্রকার কুয়েন্তিন দুপিয়েক্স এর “দালি”(২০২৩) । চিত্রকর সালভাদর দালির বর্ণময় জীবন আর মেজাজকে ভিন্ন শৈলীতে গেঁথেছেন পরিচালক।
স্প্যানিশ চিত্রকরের সাক্ষাৎকার নিতে হোটেলে পৌঁছন নবীন মহিলা সাংবাদিক । কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি । জগৎখ্যাত চিত্রকর দেখা তো দিলেন, কিন্তু মেজাজ তাঁর মেঘ মুলুকের মতো । এই রোদ তো এই বৃষ্টি । শুরুতেই বললেন এত নিম্নমানের হোটেল, জানলে আসতেনই না । টেলিভিশন সাংবাদিক তাঁর সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নিতে শুরু করতেই তিনি ফের বলে উঠলেন, পানীয় জলের যোগান যথেষ্ট তো, তিনি ঝকঝকে খনিজ জল ছাড়া খান না ! তটস্থ সাংবাদিক, সহকারীকে সে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিলেন। এভাবেই বারকয়েক সাক্ষাৎকার শুরু হতেই তিনি নতুন নতুন বাহানা শুরু করেন । এভাবে বেশ কয়েকবার তাঁকে নতুন করে আলাদা সংলাপ বলে হেঁটে আসতে দেখানো হয় । চলচ্চিত্রের শুরু এরকমই এক দৃশ্য দিয়ে।তবে সাক্ষাৎকার আর কিছুতেই দেন না দালি । ক্যামেরায় দৃশ্যগ্রহণ করার অব্যবস্থার অজুহাতে ফিরে যান তিনি । এরপর আবার নতুন সাক্ষাৎকারের আর্জি নিয়ে চিত্রির কাছে ফিরে আসেন ওই সাংবাদিক, আর তাই নিয়েই এগিয়ে চলে সিনেমা ।
ক্রমে বোঝা যায় একের পর এক এই আয়োজন চলবে, আর খামখেয়ালি দালি কখনো অসতর্কভাবে গাড়ি চালিয়ে ক্যামেরা ভেঙে দেন, কখনো আবার দৃশ্যগ্রহণের সময় সাংবাদিকের মুখ দালির চেয়ে বেশি চলে আসায়, সাক্ষাৎকার বাতিল হয় । তার মাঝেই দালির বর্ণময় মেজাজ আর চরিত্র যেমন পর্দায় ফুটে ওঠে, তেমনি প্রবাদপ্রতিম চিত্রকরের সাক্ষাৎকার নিতে কিভাবে নাস্তানাবুদ হয়েছিল তৎকালীন সংবাদমাধ্যমকে তা দেখা যায় ।
নানা দৃশ্যে আবার পুনরাবৃত্তি ঘটে দালি কোন পরিস্থিতিতে কী করতে পারতেন তা বোঝানোর জন্য । ছবির এই ভিন্নধারার গল্প বলার ঢঙে এক শিল্পীসহ সেই সময়ের শিল্পিত ইতিহাস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করতে পারেন দর্শকরা । বলা দরকার, শেষ দৃশ্যও একই রকম ভাবে অজস্র শিল্পীর জীবনের সমাপ্তির কথা বলে, যেখানে দালি নিজের শেষ বয়সের প্রতিরূপ বারংবার দেখে অসহিষ্ণু হয়ে নানা ভাবনায় ডুবে যান । সে ছবি ভোলার নয় ।
ফ্রান্সের আরেক ছবি ক্যাথরিন ব্রেলাত এর “লাস্ট সামার” (২০২৩) এক বিস্ফোরক নির্মাণ । যেখানে এক মহিলার পছন্দ বয়স্ক পুরুষ । মহিলার নাম অ্যান, বিয়ে করেল বয়স্ক এক ব্যস্ত পেশাদার পিয়ের-কে । মহিলা পেশায় আইনজীবী এবং নানা জটিল মামলায় ছোটোদের বিচার পাইয়ে দিয়েছে ।
পিয়েরের আগের পক্ষের এক ছেলে রয়েছে, নাম থিও। অ্যান ও পিয়ের পরে দুটি বাচ্চা মেয়েকে দত্তক নেন । নতুন দুই কন্যাকে সঙ্গ দিতে গিয়ে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয় থিও। পিতা পুত্রের পারস্পরিক দুরত্ব বাড়ে। থিও স্কুলে এক শিক্ষককে চড় মেরে শাস্তি পেলে তাকে বাড়িতে আনা হয়। সৎ মা অ্যানের সঙ্গে তার পরিস্থিতিগত সম্পর্ক নিয়ে অঘটন ঘটতে থাকে যা পরবর্তীকালে তিক্ত হয়ে ওঠে। থিওকে নতুন স্কুলে পাঠানো হয়, তবু এক মাঝরাতে সে ফের ফিরে আসে।
এ ছবি ইউরোপের তথাকথিত আধুনিকতার অস্বাভাবিকতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় । সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দেয় আইনজীবী দক্ষ মহিলাও কেমন করে বিপদে পড়তে পারে এবং আইনের পক্ষের মানুষ কী করে অভিযুক্ত বনে যেতে পারে। ভালোবাসা কী ও কোথায় তার সীমারেখা সেই প্রশ্ন তুলে বড় আঘাত দেয় এই চলচ্চিত্র ।
ইউক্রেনের “উই উইল নট ফেড এওয়ে” (২০২৩) এবারের উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে । যা ডনবাসের পার্শ্ববর্তী ছোটো জনপদের গল্প । যেখানে কিছু ছেলেমেয়েরা যুদ্ধের আবহ থেকে বেরিয়ে, রণমুক্ত ধরার স্বপ্ন দেখে । তারই মধ্যে দুটি কিশোর প্রস্তুতি নেয় হিমালয় অভিযানের । এ আবহে মাঝেমাঝেই যুদ্বের দাগ, দিগন্তে বিস্ফোরণের ঝলকানি, কাছেপিঠে গুলির শব্দ, মা ও ছেলের তর্ক, চাকরি ও ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তার দৃশ্যপট চলতে থাকে ।
জায়গাটার সৌন্দর্য তুলে ধরে উন্নত সিনেম্যাটোগ্রাফি, তবে সম্পাদনা খানিক শ্লথ, বিস্তার যেন ঢিলে করে দেয় যুদ্ধ নিয়ে শুরু করা উদ্বেগ । ছেলেটির বাবার কাজের সূত্রে কয়লাখনি দেখানোর প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয়নি । মোটরবাইকের প্রতি দুর্বলতা এবং বাইরের পৃথিবীর হাতছানিও তেমন প্রতিষ্ঠিত না হয়ে শেষে এ ছবি অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ভ্রমণের কথা হয়ে দাঁড়ায় । তাতে শামিল হয়ে পড়ে আরও একটি ছেলে ও দু’টি মেয়ে । ফলে এ ছবি সাধারণত্বের পর্যায় পেরোতে পারে না ।
❤ Support Us