- দে । শ
- অক্টোবর ১৭, ২০২৪
খুদে পড়ুয়ার জন্য শোক ভাসানের বিষাদ আজও আটকে কোশিগ্রামে

দুর্গার ভাসান হয়েছে। বছর ঘুরলেই আবারতো মা আসবেন। কিন্তু আমার ছেলেটা? সে কি আর কোনোদিনও ফিরবে? যন্ত্রণাদীর্ণ এই প্রশ্নটাই কয়েকদিন ধরে পাক খাচ্ছে বাড়িজুড়ে। আগমনী থেকে বিজয়া, আনন্দ থেকে আফশোস, কিছুই ছুঁতে পারেনি হতদরিদ্র কার্তিক মাঝির পরিবারকে। ‘ঢাক বাজছে, আর মনে হচ্ছে বুকটাকে কারা হাতুড়ি দিয়ে ক্রমাগত পিটছে।’ হাহাকার করেন কাটোয়ার কোশিগ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর কার্তিক। গত পয়লা অক্টোবর মৃত্যু হয় কার্তিকের বছর এগারোর সন্তান ইন্দ্রজিতের। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, বিষাক্ত প্রাণীর কামড়ে মৃত্যু।
কিন্তু এই ‘চলে যাওয়া’ আজও মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না ইন্দ্রজিতের মা টগর মাঝি। স্থানীয় কোশিগ্রাম ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের পঞ্চমের পড়ুয়া ইন্দ্রজিতের মৃত্যুর কারণটাও ধন্দের। কেউ বলছেন, স্কুলের ভিতরেই দংশন। শিক্ষকরা গুরুত্ব দেননি। কেউ বলছেন, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় ‘বিষাক্ত কিছু কামড়ায়’ ইন্দ্রজিৎকে। ঘটনার পর স্কুলে ভাঙচুর হয়েছে। শিক্ষকরা নিগৃহীত হয়েছেন। প্রধানশিক্ষক গ্রেপ্তার হয়েছেন। জেল খেটেছেন। এখন তিনি জামিনে মুক্ত। ‘কিন্তু ছেলেটাতো ফিরল না।’ আচমকাই হাউহাই করে কেঁদে বুক চাপড়াতে থাকেন টগর। পড়শি মামনি মাঝি বলছিলেন, ‘ছেলেটাকে হারিয়ে কেমন যেন হয়ে গেছে টগর বউ। কিচ্ছুটি দাঁতে কাটতে চাইছে না। মাঝেসাঝে আনসান বকছে।’ দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার হলে কী হবে, ছেলের জন্য পুজোর নতুন জামা-প্যান্ট কিনেছিলেন কার্তিক। তোরঙ্গের মাথায় রাখা সেই প্যাকেট বিকেলের আলোয় চকচক করছে। শুধু ওইটুকুই। ঘরদোরের বাকিটা পুরোপুরি অন্ধকার।
কার্তিকের দুঃখে শামিল হয়েছে প্রায় গোটা গ্রাম। দুর্গোৎসব হয়েছে নম নম করে। এলাকার বাসিন্দা বীরেন ঘোষ, মাধব পালরা বলছিলেন, ‘একটা ১১ বছরের ছেলে গোটা গ্রামটাকে কাঁদিয়ে দিয়ে গিয়েছে।’ দু’দিন আগেই দুর্গার ভাসান হয়ে গেছে। ভাসানের তামাম বিষাদ এসে জমা হয়েছে কার্তিকের মাটির উঠোনে। ‘ওই বুঝি ছেলেটা স্কুল থেকে ফিরল।’ বলতে বলতে এক লহমায় দরজায় গিয়ে দাঁড়ান টগর। ছেলে আসে না। ‘ইন্দ্র রে— ইন্দ্র আমার—’ বলে দরজার কড়া ধরে ডুকরে ওঠেন টগর। তারপর আচমকাই অদ্ভুতভাবে চুপ হয়ে যান।
পুকুর থেকে দুর্গার কাঠামো নিয়ে ফেরে পাড়ার ছেলের দল।
❤ Support Us