- এই মুহূর্তে দে । শ
- এপ্রিল ২৬, ২০২৩
বাংলায় ব্যালট মানেই কী মারামারি ? নবজোয়ারের শুরুতেই কী বার্তা গেল দেশের কাছে ?

বাংলায় ব্যালট মানেই কী মারামারি,হানাহানি ? একটা সঙ্গত প্রশ্ন যা সম্ভাবনায় পর্যবসিত হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের নব জোয়ার যাত্রার প্রথম দিনই ব্যলট নিয়ে দুপুরে সিতাই এবং রাতে মাথাভাঙায় অভিষেকের সামনেই তৃণমূলের বিবদমান দুই গোষ্ঠী মারামারি করল, ব্যালট বাক্স ভাঙল, টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলল ব্যালট পেপার। এই নির্বাচন কিন্তু ভোটে প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার ছিল না। ছিল তৃণমূলে গণতন্ত্র যে প্রতিষ্ঠিত তা প্রমাণের। তাতে মাথাভাঙায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে যা হল তাতে স্পষ্ট হয়ে গেল তৃণমূলে গণতন্ত্র এখন অলীক কল্পনা।
অতীতে কলকাতার বিধানভবনে, কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের সময়, প্রণব মুখোপাধ্যায়ে সামনেই প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল। মঙ্গলবার রাতে মাথাভাঙার তাঁবুতে অভিষেকের সামনে ঘটে যাওয়া দলীয় কর্মীদের বিশৃঙ্খলা সেই ঘটনাকেই স্মরণ করিয়ে দিল। এটাই কী কংগ্রেসের রাজনৈতিক সংস্কৃতি? সেই প্রশ্নও উঠছে। কেননা আজ যাঁরা তৃণমূল, অতীতে তাঁরাই কংগ্রেসে ছিলেন। অভিষেকের সেই সময়ে রাজনীতিতে অভিষেক হয়নি, কিন্তু তাও মাথাভাঙায় অভিষেকের সামনেই রাতে নিজের প্রার্থী নিজে নির্বাচনের জন্য যে ব্যবস্থা করা হয়েছিলে তাতে তৃণমূল কর্মীরাই জল ঢেলে দিল। আতঙ্কে জ্ঞান হারালেন এক তৃণমূল কর্মী । মাথায় জল ঢেলে জ্ঞান ফেরাতে হলো তাঁর।
অন্যদিকে অভিষেকের কর্মসূচির প্ৰথম দিনেই দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বকে ঘিরে সমালোচনা করলেন বিরোধী রাজনীতিবিদরা।বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বললেন, “তৃণমূল কর্মীদের এটা যদি উচ্ছ্বাসের প্রকাশ হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত নেতাকেই না কিডন্যাপ করে নেয়।” বিশৃঙ্খলার ঘটনায় কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি বলেছেন,‘‘ভাইপো পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ব্যালট বাক্স নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা ওঁর দলের লোকেরাই উল্টে দিয়েছে। এ থেকেই পরিষ্কার তৃণমূলে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। তাহলে রাজ্যে কি করে গণতন্ত্র থাকবে?’’
মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নিজের প্রার্থী নিজে নির্বাচনকে ঘিরে দফায় দফায় মারামারি, ধাক্কাধাক্কিতে জড়ালেন তৃণমূল নেতা এবং কর্মীরা। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন তাঁরা। নিজেরাই বলছেন গোষ্ঠীকোন্দলের কথা।
সোমবার থেকে অভিষেকের ৬০ দিনের জনসংযোগ যাত্রা কর্মসূচি শুরুর দিনই অভিষেক জানিয়ে দেন, তিনি ভাল মানুষের খোঁজে পথে নামছেন। সন্ত্রাসবিহীন ভোট করতে হলে চাই ভাল প্রার্থী। মানুষকেই নেতা বেছে নেওয়ার ভার দিচ্ছেন তাঁরা। মানুষের মত জানার পরই পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাই করবে তৃণমূল। এমন একটি কর্মসূচি সারা ভারতে অভিনব বলেও দাবি করেন অভিষেক। কিন্তু সেই কর্মসূচি শুরুর দিনেই কোচবিহারের নানা জায়গায় ঝামেলা হল দলীয় কর্মীদের মধ্যেই।
অভিষেক অবশ্য জানান, অত্যুৎসাহীরা ভোট দিতে গিয়েই ব্যালট বাক্স ভেঙে ফেলছেন। তবে নেতাদের উদ্দেশে সতর্কবাণীও দিয়েছেন। তিনি বলেন ‘‘যদি কেউ ভাবেন, গায়ের জোরে, ব্যালট বাক্স ভেঙে নিজেদের নাম ঢুকিয়ে প্রার্থী হবেন, তা হলে তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। কারণ, পাহারাদারের নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি এই কারণেই তৃণমূলের ‘নবজোয়ার’ শুরু করেছি।’’ এই বার্তা অভিষেক সিতাইয়ের বিকেলের বিশৃঙ্খলার পর শীতলকুচি থেকে দিয়েছিলেন। তারপরও রাতে মাথাভাঙায় সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল এবং সেটা হল অভিষেকের সামনেই। তাহলে ভালো মানুষ বাছাই করার জন্য ভালো মানুষ কী তৃণমূলে সত্যিই নেই? না হলে নেতার সামনে এ কেমন ভালোমানুষির উদাহরণ রাখল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা? আর এই অস্থির রাজনীতির পরিবেশ দেশের মানুষের কাছেই বা কী বার্তা পৌঁছে দিল! কেন না তৃণমূলে নব জোয়ার কর্মসূচির মূল উদ্যোক্তা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছেই।
❤ Support Us