- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪
শিক্ষকতায় বেনজির দৃষ্টান্ত জালুইডাঙার মহামায়ার
পূর্বস্থলী ১নং ব্লকের জালুইডাঙা গোপালচন্দ্র পাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বিনা মাইনের শিক্ষিকা মহামায়াদেবী। স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে রয়েছেন প্রায় ৪০ বছর
পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। বেরনোর সময় কর্তব্যরত মহিলা পুলিশকর্মী পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করেন, ‘দিদিমণি ভালো আছেন ? চিনতে পারছেন? আমি পায়েল।’ এটাই প্রাপ্তি। বললেন সত্তরোর্ধ্ব মহামায়া মালাকার। পূর্বস্থলী ১নং ব্লকের জালুইডাঙা গোপালচন্দ্র পাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বিনা মাইনের শিক্ষিকা মহামায়াদেবী। স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে রয়েছেন প্রায় ৪০ বছর। চাকরি পাকা হয়নি। তাতে অবশ্য খেদ নেই তাঁর। পায়েলের মত যে তাঁর কত ছাত্রী নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন, প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তাতেই প্রাপ্তির ভাঁড়ার কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে মহামায়ার। সেই প্রাপ্তির পরিসর বাড়াতে এই বয়সে আজও শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় রোজ স্কুল আসেন কালনার ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দা মহামায়া।
মহামায়াদেবীর গল্পটা সংগ্রাম আর দুঃখে ভরা। এসটিকেকে রোডের ধারে জালুইডাঙায় স্কুলটির পথ চলা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৮৩-র মার্চ মাসে স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন সংস্কৃতে অনার্স মহামায়া। সূচনার বছর ১২ বাদে স্কুলটির উচ্চপ্রাথমিকের (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী) সরকারি অনুমোদন মেলে। ৫ সহকর্মীর চাকরি পাকা হলেও মহামায়াদেবীর চাকরি স্থায়ী হয়নি। তাতে অবশ্য কোনও খেদ নেই তাঁর। একটা সময়ে সংসারে অভাব ছিল প্রচুর। স্বামীর তেমন আয় ছিল না। তাই সংসার চালাতে স্কুলের পর টিউশানি পড়াতেন মহামায়া। বছর বারো আগে স্বামী প্রয়াত হন। ভেঙে না পড়ে দাঁতে দাঁত লড়াই চালিয়েছেন। ২ মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। বিয়ে দিয়েছেন। বললেন, ‘চাকরিটা স্থায়ী হবে, আশা ছিলই। হল না বলে কখনও স্কুলে আসব না ভাবিনি। স্কুল আমার প্রাণ।’ মহামায়াদেবীর প্রাণের স্পর্শে উচ্ছল দ্বাদশের পড়ুয়া পার্বতী বসাক, সপ্তমের ছাত্রী পূর্বা নন্দীদের উপলব্ধি, ‘আর্টস, সায়েন্স ২ বিভাগের বিষয়ই অদ্ভুত দক্ষতায় পড়ান দিদি। ওনার ক্লাসের জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি।’ স্কুলের প্রতি মহামায়াদেবীর ভালবাসার উদাহরণ শোনালেন ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা মণিদীপা ভট্টাচার্য, ‘উনি যে সময়ে অনার্স পাশ করেছিলেন, চেষ্টা করলে অন্য কোনও স্কুলে অনায়াসে শিক্ষকতার চাকরি পেতেই পারতেন। কিন্তু এই স্কুলের প্রতি দুর্বলতার জন্যই ওনার চাকরি পাকা না হলেও এখানেই রয়ে গিয়েছেন।’ মহামায়াদেবী বললেন, ‘পড়ুয়াদের সঙ্গে থাকছি। তাদের নিঃশ্বাস, প্রশ্বাস বুক ভরে নিতে পারছি, এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কীই-বা থাকতে পারে!’ এভাবেই শিক্ষকতার আদর্শ দর্শন সত্তর বছর বয়সেও বয়ে বেড়াচ্ছেন মহামায়াদেবী।
❤ Support Us