- এই মুহূর্তে দে । শ
- অক্টোবর ২০, ২০২৩
“হীরানন্দানি এবং তাঁর বাবাকে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তৈরি খসড়া “হলফনামা”-য় সই করার জন্য”, অভিযোগ করলেন মহুয়া মৈত্র
টাকার বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, এমনই অভিযোগ তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে উঠেছে। যে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মহুয়া টাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন লোকসভায় , এই অভিযোগ উঠেছে, এবার বিবৃতি প্রকাশ করে তা কার্যত মেনেই নিয়েছেন সেই ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানি। এই বিবৃতি প্রকাশ্যে আসতেই তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। আর এরই মধ্যে পাল্টা বিবৃতি প্রকাশ করে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া। মহুয়ার প্রশ্ন, হীরানন্দানির বিবৃতির যে বয়ান প্রকাশ্যে এসেছে, তা কি আদৌ তাঁর লেখা? না কি সেই বয়ানের খসড়া তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতর বা পিএমও থেকে? মহুয়ার বক্তব্য, হীরানন্দানির “হলফনামা” সাদা কাগজে লেখা হয়েছে। সেটা কোনও “অফিশিয়াল লেটারহে়ড”-এ লেখা হয়নি বা “নোটারি” করা নেই। তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন, মাথায় বন্দুক ঠেকানো না হলে কি হীরানন্দানির মতো এক জন সম্মাননীয় এবং শিক্ষিত ব্যবসায়ী কখনও এ রকম সাদা কাগজে সই করবেন?
সাংসদ মহুয়া মৈত্র দাবি করেছেন, “হীরানন্দানি এবং তাঁর বাবাকে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তৈরি খসড়া “হলফনামা”-য় সই করার জন্য। তাঁদের সমস্ত ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।” মহুয়ার বক্তব্য, ‘‘দর্শন হীরানন্দানির পিতা আবাসন শিল্পে রয়েছেন। তাঁকে সরকারি লাইসেন্সের উপর নির্ভর করতেই হয়। হীরানন্দানিও যে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, সেখানেও দরকার হয় সরকারি লাইসেন্স। উত্তরপ্রদেশেই ওঁর ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। ওঁদের বলা হয়েছে, ওঁদেরকে সব ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সিবিআই অভিযান চালাবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ওদের ঋণ পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।’’ মহুয়ার দাবি, চাপে পড়েই ‘হলফনামা’য় সই করতে বাধ্য হয়েছেন হীরানন্দানি।
হীরানন্দানির “হলফনামা”-য় কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি এবং শশী তারুরের কথাও উঠে এসেছে। তার প্রেক্ষিতে প্রেস বিবৃতিতে মহুয়ার মন্তব্য, “সব কা নাম ঘুসা দো, অ্যায়সা মওকা ফির নেহি আয়েগা!” অর্থাৎ, সকলের নাম ঢুকিয়ে দাও, এ রকম সুযোগ আর কখনও আসবে না।
দুবাই-কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী হীরানন্দানির কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে মহুয়া লোকসভায় প্রশ্ন করেছেন এমন অভিযোগ তুলে গত রবিবার লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি পাঠান বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। স্পিকারের কাছে মহুয়াকে সাংসদ পদ থেকে সাসপেন্ড করার আর্জিও জানিয়েছেন নিশিকান্ত। আবার আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাই মহুয়ার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই মঙ্গলবার লোকসভা স্পিকার মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্যি, তা খতিয়ে দেখতে বলেছে লোকসভার এথিক্স কমিটিকে। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে এল দুবাইকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী হীরানন্দানির “হলফনামা” , আর এই হলফনামা নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন মহুয়া।
মহুয়ার বিরুদ্ধে নিশিকান্ত এবং দেহাদ্রাইয়ের অভিযোগ স্বীকার করে “হলফনামা”-য় হীরানন্দানি জানিয়েছেন, তিনি মহুয়াকে ব্যবহার করে লোকসভায় আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কিত প্রশ্ন তুলেছেন সংসদে। মহুয়া ওই শিল্পপতিকে সংসদের লগ-ইন আইডি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন নিশিকান্ত। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহুয়ার পাল্টা বক্তব্য, হীরানন্দানিকে তো সিবিআই বা এথিক্স কমিটি বা অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থা এখনও ডাকেনি। তা হলে এই “হলফনামা” কাদের মদতে প্রকাশ করা হল? মহুয়ার দাবি, পিএমও-র কেউ এই “হলফনামা”-র খসড়া তৈরি করেছেন! মহুয়া মৈত্রের আরও প্রশ্ন, হীরানন্দানি কেন কোনও সাংবাদিক বৈঠক করে এই “হলফনামা”-র বয়ান নিজে পড়ে শোনালেন না বা নিজে টুইট করলেন না? যদি তিনি সত্যিই সব “স্বীকার” করে থাকেন, তা হলে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ না করে বিভিন্ন মাধ্যমে কেন তা “ফাঁস” করে দেওয়া হল?
মহুয়ার বিরুদ্ধে হীরানন্দানির থেকে বিভিন্ন উপহার নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন নিশিকান্ত এবং দেহাদ্রাই। তাতেও মান্যতা দেওয়া হয়েছে হীরানন্দানির “হলফানামা”-য়। “হলফনামা”-য় বলা হয়েছে, মাঝে মাঝেই নানা আব্দার করা হত। দাবি থাকত বিলাসবহুল সামগ্রী, দিল্লির সরকারি বাসভবন সংস্কার করিয়ে দেওয়া, ছুটি কাটানো বা বেড়ানোর খরচের জন্যও দাবি করা হত। সেটা যেমন দেশের বিভিন্ন জায়গায়, তেমন বিদেশেও। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে মহুয়ার পাল্টা বক্তব্য, হীরানন্দানির মতো এক জন সফল ব্যবসায়ী, যাঁর সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রী, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দফতরেরও যোগাযোগ রয়েছে, তিনি কেন এক জন প্রথম বারের বিরোধী সাংসদের দাবি মানতে বাধ্য হবেন? মহুয়ার দাবি, ‘‘এতেই প্রমাণিত, ওই চিঠি দর্শন লেখেননি। খসড়াটা প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তৈরি হয়েছে।’’
❤ Support Us