- দে । শ
- জুলাই ৩, ২০২৪
খাগড়াগড়ই মডেল জঙ্গিদের মঙ্গলকোটের আনোয়ার গ্রেপ্তারে উঠে এল খাগড়াগড় কাণ্ডের দুঃস্বপ্ন

জঙ্গিযোগে গ্রেপ্তার মঙ্গলকোটের আনোয়ার শেখকে জেরা করে ফের ভেসে উঠল খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ভয়ঙ্কর স্মৃতি। খাগড়াগড়কেই মডেল করে রাজ্যজুড়ে সংগঠন বিস্তারের জাল বেছানোই লক্ষ্য বাংলাদেশের আনসার আল ইসলাম বা শাহ্দাত জঙ্গিগোষ্ঠীর। এই গোষ্ঠীর লিঙ্কম্যান হিসেবে নিযুক্ত মঙ্গলকোটের কুলশুনো গ্রামের বছর বত্রিশের আনোয়ার শেখকে চেন্নাই থেকে গ্রেপ্তার করেছে এসটিএফ। শনিবার আনোয়ারকে দুর্গাপুর আদালতে পেশ করা হলে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে বর্ধমান শহরের উপকন্ঠে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সময় মঙ্গলকোটের শিরোনামে আসে। এখানকার শিমুলিয়া গ্রামে একটি খারিজি মাদ্রাসায় রীতিমত জঙ্গি প্রশিক্ষণের আখড়া ছিল। সেইসময় মঙ্গলকোটের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করে এনআইএ। তখন এনআইএ-র জেরার মুখে পড়ে এই আনোয়ার। তবে সেরকম কিছু না পাওয়ায় ছাড় মেলে আনোয়ারের।
পরবর্তী সময়ে আনোয়ার শাহ্দাত জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতা সালাউদ্দিন সালেহার সংস্পর্শে এসে প্রথমে পূর্ব বর্ধমান ও পরে চেন্নাইয়ে সংগঠন বিস্তারের কাজে যুক্ত হয়। বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র চালানোয় সিদ্ধহস্ত আনোয়ার। বোমা তৈরির পাঠ দেওয়ার কাজেও তাকে ব্যবহার করত জঙ্গি নেতৃত্ব। নিজে ক্লাস থ্রি পাশ হলে কী হবে, সমাজমাধ্যম ব্যবহারে তুখোড় আনোয়ার কয়েকটি গ্রুপ খুলে নতুন সদস্য সংগ্রহ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগ ছিল আনোয়ারের। সে বাংলাদেশেও গিয়েছিল। জানা গেল, মগজ-ধোলাইয়ে জুড়ি মেলা ভার আনোয়ারের। এসব কাজে আনোয়ার প্রশিক্ষণও নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আনোয়ারকে সামনে রেখে এই রাজ্যে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির খোলার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশি জঙ্গিদের। আনোয়ারের গ্রেপ্তারের পর সেই পরিকল্পনা এখন শিকেয়।
আনোয়ারের স্ত্রী রেজিনা বিবি, মাসি জাবেদা বিবি থেকে শুরু করে পড়শিরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না যে আনোয়ার ‘দেশদ্রোহী’। আনোয়ারের বাবা কেরালায় পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। মা মারা গিয়েছেন। আনোয়াররা তিন ভাই। আনোয়ার মেজ। ৪টি কন্যাসন্তান রয়েছে তার। খাগড়াগড় কাণ্ডের সময় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ চেন্নাই গিয়ে আনোয়ারকে জেরা করে। তারপর গ্রামে ফেরে সে। দিনমজুরি করত আর অবসরে ধর্মের বইপত্র পড়ত। দিনমজুরি করে সংসার টানতে না পারায় মাস ছয়েক আগে ফের চেন্নাই যায় আনোয়ার। সেখানে কখনও লন্ড্রি-শ্রমিক কখনও রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করত। সেখানেই বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে আনোয়ার। কিন্তু কাঁকসা থেকে হাবিবুল্লা গ্রেপ্তার হওয়ার পর মুষড়ে পড়ে আনোয়ার। আশঙ্কায় ছিল, এবার তার পালা। কারণ হাবিবুল্লার মোবাইলেই আনোয়ারের নাম পায় স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। গ্রেপ্তারের আগের দিনই স্ত্রী রেজিনার মোবাইলে একটা মেসেজ পাঠায় আনোয়ার। তাতে লেখা ছিল, ‘আর ভালো লাগছে না। তোমরা ভালো থেকো।’ কিছু একটা যে হবে, আর সেটা যে তার পক্ষে ভালো হবে না, স্ত্রীকে পাঠানো মেসেজেই আনোয়ার তা স্পষ্ট করে দেয়।
❤ Support Us