Advertisement
  • এই মুহূর্তে মা | ঠে-ম | য় | দা | নে
  • জুন ১৪, ২০২৩

হরিয়ানার ষোড়শী পূজার স্বপ্নের উত্থান, তুষের বস্তায় লাফ কেটে হাইজাম্পে জাতীয় রেকর্ড

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
হরিয়ানার ষোড়শী পূজার স্বপ্নের উত্থান, তুষের বস্তায় লাফ কেটে হাইজাম্পে জাতীয় রেকর্ড

২০২১ সাল। গুয়াহাটিতে জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে দিল্লি থেকে বিমানে গুয়াহাটি যাচ্ছিল। সেই প্রথম বিমানে ওঠা। আকাশপথে যেতে যেতে জানালা দিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন বাইরের দৃশ্য। সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে বাবা–মা, ঘাম ঝড়িয়ে তাঁকে বিমানে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছেন, তাঁদের একদিন বিমানে চাপাবেন। সেই স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলেছেন হরিয়ানার এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে পূজা সিং।

সম্প্রতি ইয়েচিওনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে হাইজাম্পে জাতীয় রেকর্ডসহ রুপো জিতেছে পূজা সিং। লাফিয়েছে ১.৮২ মিটার। ভেঙে দিয়েছে পাঁচ বছর আগে তৈরি করা রুবিনা যাদবের ১.৮১ মিটারের রেকর্ড। অনূর্ধ্ব ১৮ বিভাগে চলতি বছরে বিশ্বের এটাই তৃতীয় সেরা লাফ। এছাড়া যে কোনও ভারতীয় অ্যাথলিটের এই বছরে এটাই সেরা লাফ। অনূর্ধ্ব কুড়ি বিভাগে এখনও চার বছর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে পূজা সিং। তাঁর লক্ষ্য ২০১২ সালে তৈরি করা সাহানা কুমারীর ১.৯২ মিটারের রেকর্ড ভেঙে দেওয়া।

হরিয়ানার ফতেহাবাদ জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম পূজা সিংয়ের। দিল্লি থেকে সড়কপথে তার গ্রামে পৌঁছতে প্রায় চার ঘন্টা সময় লাগে। পরিবারে খেলাধুলার তেমন কোনও পাট ছিল না। তার বাবা হংসরাজ শিং রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। যদিও রাজমিস্ত্রির কাজ নেওয়ার আগে স্কুলে পড়াশোনা করার সময় কাবাডি খেলতেন হংসরাজ। কিন্তু বেশিদুর এগোতে পারেননি। পরে পড়াশোনা ছেড়ে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগদান।

পূজাকে নিয়ে হংসরাজের কোনও বড়ো স্বপ্ন ছিল না। ছোটবেলায় পূজা খুবই নমনীয় ছিল। অনায়াসে দু’‌পায়ে লাফিয়ে উঠত এবং দড়ি দিয়ে অনেকটাই ওপরে উঠে পড়ত। কিন্তু তাকে খেলাধুলার মধ্যে রাখলে যে এই পর্যায়ে পৌঁছবে কখনো ভাবেননি হংসরাজ। অ্যাথলেটিক্সের কথাও তাঁর মাথায় আসেনি। গ্রামে একটা অনুষ্ঠানে যোগব্যায়াম প্রদর্শনের পর পূজা তার বাবাকে বলেছিল, সে যোগব্যায়াম শিখবে। এরপর ১০ বছর বয়সী পূজাকে নিয়ে হংসরাজ পাশের পার্টা গ্রামে যান এবং সেখানে বলবন সিংয়ের কাছে যোগ ব্যায়ামের প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি করে দেন। সেখানে যোগ ব্যায়ামের পাশাপাশি পূজা অন্যান্য খেলাধুলার প্রতিও আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।

চিত্র সংগৃহীত

পার্টার সরকারি স্কুলের মাঠে খোলা জায়গায় বলবান সিংয়ের অ্যাকাডেমি। তিনি একজন ৮০০ মিটার দৌড়বিদ। কোচ হিসেবে তাঁর কোনও ডিগ্রি নেই। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে যোগ ব্যায়ামের পাশাপাশি ট্র‌্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে রাজ্য স্তরের একাধিক অ্যাথলিট ও ক্রিকেটার তিনি তৈরি করেছেন। তাঁর কাছেই পূজার যোগ ব্যায়াম শেখা শুরু। ১ বছর পূজাকে দেখার পর বলবনের মনে হয়েছিল হাই জাম্পে দক্ষতা রয়েছে। তখন থেকেই তিনি পূজাকে হাই জাম্পার হিসেবে তৈরি করেন।
নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে উঠে আসতে হয়েছিল পূজা সিংকে। অ্যাকাডেমিতে কোনও ল্যান্ডিং ম্যাট ছিল না। সেখানে ধানের তুষের বস্তা ল্যান্ডিং ম্যাট হিসেবে ব্যবহার করা হত। দুধারে বাঁশের খুঁটিকে হাইজাম্পের বার হিসেবে ব্যবহার করা হত। এভাবেই হাইজাম্পে হাতেখড়ি পুজার। এভাবেই এক বছর কেটে গিয়েছিল। তারপর এক সরকারি আধিকারিক একটা ল্যান্ডিং ম্যাট কিনে দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে থার্মোকল জুড়ে স্প্রিং বোর্ডের পরিবর্তে পুরনো রাবারের টায়ার ব্যবহার করে সেটাকে ল্যান্ডিং ম্যাট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। কোনও প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে পারেনি পুজা সিংকে। তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে মেলে ধরেন এবং জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৪ মেয়েদের বিভাগে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতে। এরপর চোটের জন্য প্রায় দেড় বছরের জন্য মাঠের বাইরে চলে যায়। চোট থেকে ফিরে এসে ২০২২ সালে জুনিয়ার পর্যায়ে ১.৭৬ মিটার লাফিয়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়ে। ২০২২ সালে যুব জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের অনূর্ধ্ব ১৮ বিভাগে আরও একটা সোনা জেতে। তারপর এবছর ইয়েচিওনে ইতিহাস ভারতীয় এই অ্যাথলিটের।

এই মুহূর্তে পুজার পদকগুলি রাখার জন্য কোনও জায়গা নেই বাড়িতে। হংসরাজের ইচ্ছে, বাড়িতে আর একটা ঘর তৈরি করার। যেখানে পদকগুলি রাখতে পারবে পুজা। আর পুজা স্বপ্ন দেখছে বাবা–মাকে বিমানে চাপানোর। তাঁর কথায়, ‘‌আমি অনেক ফ্লাইটে গেছি। কিন্তু আমার বাবা–মা কখনও ফ্লাইটে চাপেনি। আমার স্বপ্ন, একদিন আমি আমার বাবা–মাকে প্লেনে নিয়ে যাব।’‌


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!