Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • ডিসেম্বর ২০, ২০২৩

মমতা-মোদি বৈঠক প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক । কটাক্ষ সেলিমের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
মমতা-মোদি বৈঠক প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক । কটাক্ষ সেলিমের

মোদি-মমতা বৈঠক নিয়ে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বুধবার সিপিএম রাজ্য দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে ১০০ দিনের বকেয়া টাকা নিয়ে বৈঠক করে তৃণমূল সাংসদদের ব্যার্থতা প্রমাণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, “২০২০ সালে যখন গোটা শহর এনআরসি, এনপিআরের বিরুদ্ধে গো ব্যাক মোদি স্লোগান তুলেছিল তখন তৃণমূল নেত্রী রাজভবনে গিয়ে চুপি চুপি দেখা করে এসেছিলেন। তারপর বাইরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন টাকা আটকে রেখে তাই বলতে গিয়েছিলাম। আজ পর্যন্ত কোন হিসাব দিতে পারেনি কতো টাকা বাকি আছে।”

উল্লেখ্য সিপিএম এবং বামপন্থীদের পক্ষ থেকে বার বার দাবি করা হয়েছে দুই সরকারের পক্ষ থেকে ১০০ দিনের টাকা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার জন্য। কিন্তু তা হয়নি করেনি কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার। এই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, “আমরা বলছি কতো টাকা বাকি বলুক আমরা দিল্লি যাবো গিয়ে লড়াই করবো রাজ্যের টাকার জন্য। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সাহস নেই বলার যে কতো এলো, কতো খেলো আর কতো দিলো।”

উল্লেখ্য ১০০ দিনের কাজের জন্য রাজ্যের বকেয়া টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন নিজেদের মধ্যে দড়ি টানাটানি করছে কেন্দ্র এবং রাজ্য। একাধিক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজ্য এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি ১০০ দিনের টাকা লুঠ হয়েছে বলে বিজেপির দাবি। অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই নিয়ে দিল্লি অভিযান করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার জানিয়েছেন কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বিভিন্ন খাতে বাকি ১ লক্ষ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

এই প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘এটা কোন প্রশাসনিক বৈঠক নয়। গিয়েছেন রাজনৈতিক বৈঠক করতে। এই বৈঠক যদি প্রশাসনিক বৈঠক হতো তবে দুই সরকারের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রীরা থাকতেন, সচিবরা থাকতেন এদিন তাদের মধ্যে থেকে কেউ ছিলেন না।”

সংসদ থেকে বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে আগামী ২২ ডিসেম্বর রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে সিপিএম। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানিয়েচেনে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। তিনি বলেন, “ইন্ডিয়া মঞ্চের বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ২২ তারিখ গোটা দেশ জুড়ে সাংসদদের সাসপেন্ড করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হবে। সেই মতো রাজ্যে সিপিএম-এর পক্ষ থেকে পাড়ায় মহল্লায় প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে। ওই দিন ইনসাফ যাত্রা যাদবপুরে শেষ হচ্ছে সেখানে সমাবেশও হবে।”

এদিকে বুধবারও সেলিম ফের আর একবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে তৃণমূলের সাথে বামপন্থীদের কোন জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা বাংলায় হবে না। তিনি বলেন, “আমরা আগে থেকেই বলছি তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী যে কোন রাজনৈতিক দলের হাত ধরতে আমরা তৈরি। কিন্তু যেই রাজনৈতিক দল আরএসএসকে নিজের ন্যাচেরাল অ্যালি বলে তাদের সাথে ইনকিলাব জিন্দাবাদ বলে এমন কোন বামপন্থী দল যেতে পারে না। এরা শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ভাঙে। আগেই মমতা বলেছিল আরএসএস ইজ মাই ন্যাচেরাল অ্যালি। সেই নিয়ে আজ পর্যন্ত তিনি কোন অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। উল্টে কয়েকদিন আগে বলেছেন যে, আমি মনে করিনা যে আরএসএস খারাপ।”

এদিন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, “উগ্র দক্ষিণপন্থার বিপদ কিভাবে সংবিধানকে আক্রান্ত করে তা সংসদে প্রতিদিন স্পষ্ট হচ্ছে। এরা সংসদকে ভিতর থেকে এবং বাইরে থেকে দুই দিক থেকেই আক্রমণ করে।” অসাংবিধানিক ব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে ১৪৩ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, “আরএসএস এর ঘোষিত কর্মসূচি হচ্ছে সংসদীয় গনতন্ত্রকে ভেঙে দেওয়া। এরা সংবিধানকে মানে না। বিরোধী শূন্য করতে চায় আরএসএস এবং বিজেপি। তাই তারা কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদিকে ব্যবহার করছে বিরোধী শূন্য করার জন্য এবং রাজ্যে মমতাকে ব্যবহার করছে রাজ্যকে বিরোধী শূন্য করার জন্য।”

উল্লেখ্য বুধবার লোকসভায় পাস হয়েছে ন্যায় সংহিতা বিল। কার্যত বিরোধী শূন্য লোকসভায়  ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি বিচারবিধি এবং সাক্ষ্য আইন বদলের তিন বিল পাস হয়। এদিন লোকসভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা এবং জঙ্গী দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে এই সংশোধনী বিল আনা হয়েছে।
বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেন, “বিজেপি এবং আরএসএস জাতীয় নিরাপত্তাকে একমাত্র মাথা ব্যাথার কারণ করে তোলে সব সময়। সন্ত্রাসবাদ ঘিরে আতঙ্ক তৈরি করে রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে চায়। অথচ পুলওয়ামা কান্ড নিয়ে তদন্ত শেষ হলো না। আমরা বামপন্থীরা সব সময় সামাজিক সুরক্ষার দাবি তুলি। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চাকরি, স্বাস্থ্য, বয়স্কদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা এই সব বিষয় নিয়ে বামপন্থীরা সরব হয়। এখন সংসদে এই বিষয় কোন আলোচনা হয়না।”

উল্লেখ্য বিজেপি এবং আরএসএস বিভিন্ন সময় কমিউনিস্ট, সংখ্যালঘুদের সমাজের শত্রু বলে আক্রমণ করে। এদিন সেলিম বলেন, ‘‘দক্ষিণপন্থীরা জাতীয় সূরক্ষার বিষয়কে সমানে রেখে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে। সমাজের মধ্যে তারা শত্রু চিহ্নিত করতে থাকে। মতাদর্শগত ভাবে আদর্শগত ভাবে যাদের সাথে তাদের লড়াই সেই কমিউনিস্টদের তারা সমাজের শত্রু বলে চিহ্নিত করতে থাকে। আমাদের দেশে লালকৃষ্ণ আডবানির সময় থেকে এই কাজ শুরু হয়েছিল। সেই সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”

সংসদে স্মোক অ্যাটাক সম্পর্কে সেলিম বলেন, “যারা এই কাজ করেছে তাদের দোষ না দিয়ে সরকার খুঁজে বার করুক কেন এই কাজ তাদের করতে হয়েছে।” কেন্দ্রের সরকার কি দেশের বেকার সমস্যাকে এড়িয়ে যেতে পারে? সেলিমের কথায় সেই ইঙ্গিত ছিল।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!