- দে । শ
- অক্টোবর ৩, ২০২৩
মঙ্গলে মহারণ, আজ অভিষেকের আগে শুভেন্দুকে সময় দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মঙ্গলবারও চাপে রাখছে বিজেপি। সোমবার তৃণমূলের দিল্লি অভিযানের প্রথম দিনেই সেটা বিজেপি বুঝিয়ে দিয়েছে। তিন জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বাংলায় দলের রাজ্য সম্পাদক এবং আরও একাধিক নেতানেত্রীকে নিয়ে তিনটি সাংবাদিক সম্মেলন করেছে কেন্দ্রের শাসকদল। তাই আজ মঙ্গলবার কী হবে এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়, তবে একটা মহারণ-এর দিকে যে বিষয়টা এগোচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেও যে অভিষেককে বিজেপির প্রাণকেন্দ্র দিল্লিতে ফাঁকা ময়দানে খেলার জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না সেটা স্পষ্ট। আর এই বিষয়টি পরিষ্কার হল সোমবার সন্ধ্যায়, যখন জানা গেল, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী স্বয়ং দিল্লি যাচ্ছেন। এবং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতি অভিষেকের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ঘণ্টাদুয়েক আগে অর্থাৎ বিকেল চারটায় শুভেন্দুকে কথা বলার সময় দিয়েছেন। বিজেপি অভিষেককে ‘বিশেষ’ মর্যাদা দিয়েছিল সোমবারই। শুধু তিন বার অভিষেকের দাবি-খণ্ডনে সাংবাদিক বৈঠক করাই নয়, বাংলায় দলের রাজ্য সম্পাদক সুকান্ত মজুমদার এ-ও দাবি করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, বাংলা চালাচ্ছেন অভিষেক। বাংলা থেকে সুকান্তর দিল্লি গিয়েছিলেন শুধু অভিষেকের বিরুদ্দে সাংবাদিক সম্মেলন করতে।
দিল্লিতে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে আগাম হঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘মাঠ আপনার, রেফারি আপনার, ময়দানও আপনার। কিন্তু লড়াই হবে জোরদার।’’ সোমবারের থেকে মঙ্গলবারের ‘খেলা’ আরও টানটান হবে বলে মনে করছেন অনেকে। ওই ‘খেলা’য় শুভেন্দু খোলসা করেছেন তাঁর দায়িত্বের কথা। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। কিন্তু তার আগে বিকেল ৪টেয় তাঁর সঙ্গে বৈঠক হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা জেনুইন জব কার্ড হোল্ডার, তাঁদের নিয়ে তো আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমি দিল্লিতে গিয়ে সুনিশ্চিত করব, ভুয়ো জব কার্ডে যাঁরা টাকা তুলছেন, তাঁরা যেন আইনের আওতায় আসেন। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে পঞ্চায়েত প্রধানেরা ভুয়ো জব কার্ড ইস্যু করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ আঙুল উঁচিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘যাঁরা দেশের টাকা চুরি করেছেন, মানুষের ট্যাক্সের টাকা লুট করেছেন, এই লুটের রাজের বিরুদ্ধে যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তার জন্য বিরোধী দলনেতা দিল্লি যাবেন।’’
ভুয়ো জব কার্ড নিয়ে অবশ্য পাল্টা বক্তব্য রেখেছে তৃণমূলও। ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড বাতিল করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে তারা। পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি করা হয় অবিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে বিজেপিশাসিত কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার সন্ধ্যায় এক্স (পূর্বতর টুইটার) হ্যান্ডলে তৃণমূলের পক্ষে লেখা হয়েছে, “২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে উত্তরপ্রদেশে ৪৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৩৪টি মনরেগা জব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। যা কিনা সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গের দ্বিগুণ। কিন্তু বিজেপিশাসিত ওই রাজ্যের কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। বন্ধ করা হয়েছে শুধু অবিজেপিশাসিত পশ্চিমবঙ্গের।” ওই একই টুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, নিজেদের কেউ দোষ করলে সেটা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না, তাই না!” সোমবার তৃণমূলের কর্মসূচি চলাকালীনই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ তাঁর লোকসভা কেন্দ্র বিহারের বেগুসরাই থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় ১০০ দিনের কাজে যে পরিমাণ অনিয়ম হয়েছে, তার জন্য সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।’’ অভিষেক পাল্টা বলেন, ‘‘গত দু’বছরে বাংলায় ২৬টি মামলায় সিবিআই তদন্ত হয়েছে। কী হয়েছে? সারদা, নারদ তদন্তের কী সুরাহা সিবিআই করতে পেরেছে? আর যদি সিবিআই তদন্ত হয়ে বাংলার মানুষ তাঁদের প্রাপ্য টাকা পান, তা হলে তাকে আমি স্বাগত জানাব।’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘দু’বছরে ৬৯টি কেন্দ্রীয় দল বাংলায় পৌঁছে তদন্ত করেছে। কী পেয়েছে? বিজেপি ক’টা এফআইআর করেছে?’’
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় যন্তরমন্তরে সভা ছিল তৃণমূলের। কিন্তু পরে অভিষেক জানিয়েছেন, তা শুরু হবে দুপুর ১টায়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত সভা চলবে। তার পর তৃণমূলের প্রতিনিধি দল যাবে কৃষিভবনে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। অভিষেক জানিয়েছেন,‘‘প্রতিমন্ত্রী যদি সদুত্তর দিতে পারেন ভাল, যদি না পারেন, তা হলে সেখান থেকে বেরিয়েই পরের কর্মসূচি ঘোষণা করব।’’ তৃণমূলের সেনাপতির বার্তা, বাংলার মানুষের ‘হক আদায়ে কোনও ছাড়’ দেবেন না তাঁরা! মঙ্গলবারের কর্মসূচি নিয়ে অভিষেক বলেছেন, ‘‘যন্তর মন্তরে তৃণমূলের কর্মসূচিতে যদি এক জন সাধারণ মানুষের গায়েও আঁচড় পড়ে, তা হলে তার পরিণাম হবে ভয়ঙ্কর! যেখানে নরেন্দ্র মোদী থাকেন, যেখানে অমিত শাহ, জেপি নড্ডা থাকেন, সেখানে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছি। বিজেপি যে ভাষা বোঝে, আমি সেই ভাষাতেই জবাব দিতে জানি!’’ এ যেন মঙ্গলে মহারণ !
❤ Support Us