- খাস-কলম
- মে ১৩, ২০২২
লোকসভা ভোটের দুবছর আগেই মোদির ঘোষণা, ২৪-শের নির্বাচনেও দলের মুখ হিসেবে লড়ব ।
আকার ইঙ্গিতে কী বলতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী, দলে তাঁর বিকল্প নেই? না, জনপ্রিয়তার শীর্ষে তাঁর অবস্থান । অসম্পূর্ণ প্রকল্প শেষ করা কিংবা পরিবারতন্ত্রের অবসানই তাঁর প্রধাণ লক্ষ্য ।

গুজরাটের ভারুচে, ‘উৎকর্ষ সমারোহে’ ভার্চুয়াল ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘একবার একজন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল আমার। তিনি অত্যন্ত প্রবীণ নেতা। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও, আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। একদিন তিনি আমার সঙ্গে দেখা করলেন, কয়েকটি ইস্যু নিয়ে কথা বলতে। বলেছিলেন, ‘মোদিজি, আপনি আর কী চান? দেশ তো আপনাকে দু’বার প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিল।’ তিনি ভেবেছিলেন দু’বার প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা বুঝি বিরাট কূতিত্ব । তিনি জানতেন না মোদি কী দিয়ে তৈরি… গুজরাটের মাটিই আমাকে নির্মাণ করেছে । এখনই আমার বিশ্রাম নেওয়ার সময় হয়নি।’
প্রসঙ্গত প্রধানমন্ত্রী জানালেন, সরকারি প্রকল্পগুলির ১০০ শতাংশ রূপায়ন ঘটানোই তাঁর লক্ষ্য। এর আগে বিশ্রাম নেবেন না । যা থেকে আগামী লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির ‘প্রধানমন্ত্রীর মুখ’ হিসেবে লড়বেন।হঠাৎ কেন মোদি একথা বললেন? তাঁর বিকল্প খুঁজে বের করতে বিজেপির কি সমস্যা হচ্ছে? না, হার্ডটাস্কার প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্যতামূলক ভাবে নির্বাচনের শীর্ষে তাঁকে রাখতে হবে । জনপ্রিয়তার নিরিখে মোদি দেশের সর্বোচ্চে। বিদেশেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রায় তূলনাহীন । রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কূটনীতির শীর্ষস্তরে তাঁর খ্যাতির অর্জন বিস্ময়কর। রাশিয়া ও আমেরিকা কারোর দিকে না ঝুঁকেই চিরাচরিত নিরপেক্ষ অবস্থানে ভারতকে টিকিয়ে রেখে মোদি দেশবাসিকে, আন্তর্জাতিক মহলকেও বুঝিয়ে দিলেন—তিনিই তাঁর বিকল্প । আমেরিকার পরোক্ষ হুমকি শর্তেও বিদেশ নীতিতে প্রবল ঝুঁকি নিয়েছেন । আফগান ইস্যু থেকে চিন ভারত সীমান্ত সঙ্ঘর্ষ পর্যন্ত, তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রতিষ্ঠা জগৎ সভায় তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছে । অনেকেই বলে থাকেন, মোদি জামানায় বিদেশ নীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে । কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত । পশ্চিম এশিয়ায় আগের চেয় অনেক বেশি ভারত মুখী হয়েছে। মধ্য এশিয়াও দিল্লির দিকে তাকাচ্ছে। চিনও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কখনও সহজ কখনও জটিল । সম্প্রতি দুদেশের সম্পর্ক সহজাত হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ।
ভারতের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সামাজিক সত্ত্বা মোদিকে পুরোপুরি বর্জন করেনি । করোনা অতিমারি থেকে এ পর্যন্ত বহুবিদ সঙ্কটের মোকাবিলায় তাঁর সাফল্য ব্যর্থতার চেয়ে বেশি । এই পর্বে কেন্দ্রও রাজ্যের নির্বাচনে দলের সাফল্যে তাঁর ভাবমূর্তি উজ্জ্বলিত । একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া সার্বিক ব্যর্থতার নজির নেই। আসন কমলেও তাঁর নেতূত্বাধীন বিজেপি যথাসম্ভব তার ক্ষমতাকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে । এসব কারণেই আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদির বদলে বিকল্প প্রধানমন্ত্রীকে ভারত গ্রহণ করবে না । মোদি একথা জানেন । আগাম সত্য নরেন্দ্র মোদির চোখের সামনে ভাসছে । তাই আকার ইঙ্গিতে জানিয়ে দিলেন ২৪-এর নির্বাচনে লড়বেন এবং তিনিই প্রধানমন্ত্রীর অবশ্যম্ভাবী মুখ । এটা কি তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত? মনে হয় না। দলের চিন্তন শিবির ইঙ্গিত দিয়েছে বলেই তাঁর রাজনীতির ‘জন্মগূহ’ গুজরাট থেকেই দু’বছর আগেই ঘোষণা করে দিলেন, আগামী ভোটে তিনি লড়ছেনই ।
ভারতে প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন কংগ্রেস আজ দিশেহারা । পারিবারিক শাসনের আবর্ত থেকে বেরুতে পারে নি । লোকসভাও প্রাদেশিক নির্বাচণে পরপর সমূহ বিপর্যয় দলটিকে ভেতর থেকে প্রায় নিঃস্ব করে তুলেছে । পারিবারিক শাসনের আওতা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে । কতটা পারবে সন্দেহ বিস্তর। অন্ধ আনুগত্য, অন্ধ সন্তান স্নেহ এবং অন্ধতা যুক্ত অহং তাঁকে ঝাড়বে না । যাঁরা বলে বেড়াচ্ছেন, গান্ধি পরিবারের নেতূত্ব ছাড়া কংগ্রেসের টিকে থাকা অসম্ভব । তাঁরা ভুলের গর্তে পা আরও ডুবিয়ে দিচ্ছেন । ইতিহাসকে ভুলে যাচ্ছেন । রাজনৈতিক ইতিহাসে পরিবারতন্ত্রের স্থায়িত্ব নেই । রাজা আসে, রাজা যায়। গণমন আর তাঁদের সামাজিক সুবিচারের মাপকাঠি গণতান্ত্রিক ইচ্ছা টিকে থাকে । এই ইচ্ছার বিরোধিতা মানেই গণ ইচ্ছার গলায় ফাঁস পরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা।
❤ Support Us