- এই মুহূর্তে দে । শ
- অক্টোবর ১০, ২০২৩
১০ বছর পর আবার কামদুনিকাণ্ডে প্রতিবাদীদের মহামিছিল, দাবি একটাই, “বিচার চাই”

কামদুনির আঁচে আবার উত্তপ্ত কলকাতা। ১০ বছর আগের শঙ্খ ঘোষের নেতৃত্বে যে প্রতিবাদ মিছিল কামদুনিকাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতায় হয়েছিল, ১০ বছর পর সেই ছবি আবার কলকাতায় জানিয়ে দিল, প্রতিবাদ জারি আছে। কামদুনিকাণ্ডের দোষীদের চূড়ান্ত সাজা চাই। নাগরিক মহলের তরফে কলকাতার ভিক্টোরিয়া হাউসের কাছ থেকে মঙ্গলবার প্রতিবাদীদের এই মিছিল শুরু হয়ে গান্ধি মূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত যায়। মিছিল থেকে দাবি করা হয়, যে ভাবে ৪ জনকে হাই কোর্ট থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে সেটা তারা মানতে পারছেন না। তাই তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন আগামীকাল বুধবার। এই মামলার শেষ দেখে ছাড়বেন। ২০১৩ সালে মৌসুমী কয়াল,টুম্পা কয়ালরা কামদুনির ধর্ষিতা ও খুন হওয়া তাদের বান্ধবীর জন্য পথে নেমেছিলেন। আজও সেই টুম্পা,মৌসুমীদেবীরা কলকাতার রাজপথে নেমেছেন ন্যায়ের দাবিতে।
মঙ্গলবার টুম্পা কয়াল বলেন, “আমরা আগামীকাল সুপ্রিম কোর্টে যাব। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবো। রাজ্যসরকার যদি আসলে দোষীদের সাজা দেওয়ার কথা একবারের জন্য ভাবতো তাহলে পুলিশ ও সিআইডি কেসটা অন্যভাবে সাজাতো। আসলে সরকারের দোষীদের সাজা দেওয়ার কোনও ইচ্ছেই ছিল না। তাই খুনের, ধর্ষণের আসামিরা হাই কোর্টে ছাড় পেয়ে গেল। আমরা এই মামলার শেষ দেখে ছাড়বো। রাজ্য সরকার আমাদের আজ রাজপথে নামতে বাধ্য করল। নিম্ন আদালতে ফাঁসির আসামি উচ্চ আদালতে সরকারের জন্য মুক্তি পেয়ে গেল।”
এদিন চিত্রশিল্পী সমীর আইচ মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মিছিলে ছিলেন প্রিয়াত সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী ও সিপিএম নেত্রী রমলা চক্রবর্তী, সিপিএম নেত্রী রেখা গোস্বামী, কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচী, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির বহু নেতৃত্ব। রমলা চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্য সরকার চাইলে মামলাটা ঠিক ভাবে সিআইডি দিয়ে তদন্ত করলে আজ রাজ্য সরকারের সুপ্রিম যাওয়ার নাটক করতে হতো না। আমরা ধর্ষক ও খুনিদের চূড়ান্ত সাজার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।”
সমীর আইচ বলেন, “সিআইডি যে ভাবে মামলা সাজিয়েছে তাতে অবাক হয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি। বিচারপতি বলেছেন, যে সব তথ্য এই কেসে উল্লেখ করার কথা ছিল তার কিছুই নেই। দুর্বল কেস রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।” সমীর আইচের দাবি, “ঘটনার দুর্বল কেস সাজানো হয়েছে এই ভেবেই যাতে দোষীদের সাজা না দিয়ে রেহাই দেওয়া যায়। আর আজ রাজ্য সরকার নাটক করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে।”
কৌস্তুভ বাগচী বলেন, “মানুষের প্রতিবাদের পর রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেছে। অথচ ১৪ বার এই মামলা থেকে সরকারি উকিল সরে গেছেন। টুম্পা ও মৌসুমিদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাওবাদী, সিপিএম বলে সমালোচনা করেছেন। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি চাইতেন তাহলে দোষীদের সাজা হতো।”
২০১৩ সালের ৭ জুন যখন কামদুনিতে কলেজ ছাত্রীকে টেনে-হিঁচড়ে একদল মানুষ পৈশাশিক উল্লাসে ধর্ষণ করেছিল, তার পর নির্মম ভাবে খুন করেছিল সেই ক্লেগ পড়ুয়া মেয়েটিকে। সেই সময় কলকাতা থেকে শুরু করে সারা রাজ্য সমালোচনায় ও প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল। সেই প্রতিবাদ থেকে আওয়াজ উঠেছিল দোষীদের ফাঁসির সাজা চাই। কারণ এই ঘটনার কিছু আগেই দিল্লিতে নির্ভয়াকান্ড ঘটেছিল। তবে ১০ বছর পর এই কামদুনি মামলার রায় প্রকাশ পেতেই দেখা যায় ফাঁসির আসামিরা মুক্তি পেয়ে গেল। এদের চারজন সোমবার জেল থেকে বেরিয়েও গেল। আর এরা যেদিন জেল থেকে বার হল সেদিনই রাজ্য সরকার কামদুনিকাণ্ডে স্পেশাল লিভ পিটিশন ফাইল করল সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্য সরকারের এই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়াকে “নাটক” বলে প্রতিবাদে জানিয়ে কামদুনিকাণ্ডের ন্যায্য বিচার চেয়ে কলকাতার রাজপথে মিছিল হল প্রতিবাদীদের, মিছিল থেকে আবার আওয়াজ উঠল কামদুনিকাণ্ডের বিচার চাই, দোষীদের ফাঁসি চাই।
❤ Support Us