Advertisement
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • জুন ৮, ২০২২

নিউটাউনের হোটেলে নৈশ-বৈঠকে নাড্ডা । দিলীপকে বিশেষ গুরুত্ব । দলীয় নেতাদের নির্দেশ, আগামী ভোটের দিকে তাকিয়ে বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গড়ে তুলুন।

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
নিউটাউনের হোটেলে নৈশ-বৈঠকে নাড্ডা । দিলীপকে বিশেষ গুরুত্ব । দলীয় নেতাদের নির্দেশ, আগামী ভোটের দিকে তাকিয়ে বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গড়ে তুলুন।

আগামী নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে, রাজ্যের দলীয় কর্মীদের কর্মসূচি তৈরি করার নির্দেশ দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। গত কাল রাতে নিউটাউনের এক বিলাসবহুল হোটেলে আড্ডার মেজাজে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন দিলীপ ঘোষ আর সুকান্ত মজুমদার । সেই সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পল, নিশীথ প্রামাণিক এবং অমিত মালব্য। দিলীপ ঘোষকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন নাড্ডা। তাঁর অফিসের পরিষ্কার নির্দেশ ছিল, বিজেপির সভাপতির সঙ্গে দিলীপ ঘোষ সবসময় থাকবেন। এ কারণেই দিলীপ ঘোষকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । গত কয়েকদিন আগে অমিত শাহ দক্ষিণবঙ্গ সফরে হেলিকপ্টারে তাঁর সঙ্গে ছিলেন সুকান্ত মজুমদার আর শুভেন্দু অধিকারী । শাহর বৈঠকে তখন দিলীপ ঘোষকে ব্রাত্য করা হয়েছিল । এবারের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। দিলীপ ঘোষকে কোর গ্রুপকে রাখা হয়েছে। সম্ভবত চাপে পড়েই সুকান্ত-শুভেন্দু-অমিতাভ-মালব্যরা তা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

নিউটাউনের হোটেলে নৈশ-বৈঠকে নাড্ডা ।

নিউটাউনের হোটেলের বৈঠকে আড্ডার মেজাজেই নাড্ডা বলেছেন, মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে। লেগে থাকতে হবে। উপর থেকে কেউ এসে জিতিয়ে দেবে না। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে কেউ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন নি। কিন্তু দিলীপ ঘোষের উপস্থিতির গুরুত্ব অনেকেই আন্দাজ করতে পারছেন। দিলীপ বরিষ্ঠ নেতা। তৃণস্তরে সংগঠন করে ধারাবাহিক ভাবে তাঁর উত্তরণ ঘটেছে। মুখে যা বলেন, তা অনেকটাই মুখের কথা। দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করাই তাঁর লক্ষ্য। ধীর, স্থির, সজ্জন বলে পরিচিত । তাঁকে ‘সেন্সর’ করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চিঠি দেওয়ার পর অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে দেন। স্বয়ং নাড্ডাও নাকি এতে অস্বস্তিতে পড়ে যান । এবার দিলীপকে সঙ্গে রেখে তিনি বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মঙ্গলবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে নাড্ডাকে স্বাগত জানান দিলীপ বাবু । আজ কিংবা কাল দুজনের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হতে পারে। নাড্ডা দিলীপের সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে ।

আজ সকালে চুঁচুড়ায় বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত বন্দেমাতরম্ ভবনে যাবেন নাড্ডা। চন্দননগরে রাসবিহারী বসু রিসার্চ ইনস্টিটিউটও পরিদর্শন করবেন। সেখান থেকে সোজা চলে আসবেন ন্যাশনাল লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে দলের বৈঠকে। বৃহস্পতিবার দফায় দফায় বৈঠক করবেন। জেলা নেতাদের বক্তব্য শুনবেন। সামনে পঞ্চায়েত ভোট, তারপর ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। এইসব ভোটকে সামনে রেখে দলকে চাঙ্গা করতে চাইছেন সর্বাভারতীয় সভাপতি । রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, গত কয়েকটি ভোটে বিজেপির বিপর্যয়ের পর, এবার কি রাজ্য বিজেপিকে চাঙ্গা করা সম্ভব? নেতারা একে একে দল ছেড়ে তৃণমূলে পা বাড়াচ্ছেন । আর অনেকেই মুখ উঁচিয়ে আছেন । তৃণমূল তাঁদের গ্রহণ করবে কি না, সেটা স্বতন্ত্র প্রশ্ন। কিন্তু সর্বস্তরে ঘাসফুলের ক্রমবর্ধমান বিস্তার এবং কোথাও কোথাও বাম-প্রন্থীদের প্রত্যাবর্তনের মোকাবিলায় বিজেপি কী কী কর্মসূচি গ্রহণ করবে, তা ভাবনার বিষয়। বিজেপির পুণরুত্থানের চিহ্ন নেই। দলীয় কর্মীরা দ্বিধাগ্রস্ত । তৃণস্তরের বহু কর্মী সংগঠক কার্যত দলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছেন। রাজনৈতিক মঞ্চ বিজেপির সঙ্গে আদি সঙ্ঘ পরিবারের আদর্শ নিয়ে সংঘাত বাড়ছে। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে, বিশেষ করে পঞ্চায়েতে ভারতীয় জনতা দলের ভোট বাড়বে না কমবে, এ নিয়ে ও প্রশ্ন আছে। বিজেপির সর্বভারতীয় বিস্তারে সঙ্ঘের প্রচার ও গোপন এজেন্ডার প্রভাব সর্বজন বিদিত। সঙ্ঘ ছাড়া নাগরিক মধ্যবিত্ত আর দলছুটদের নিয়ে বিজেপির উত্থান অসম্ভব। ধর্মীয় বিভাজনের নীতিও ভেস্তে যাবে । নানা দেশ সম্প্রতি নির্দিষ্ট অবস্থান ঘোষণা করেছে। হজরত মহম্মদকে নিয়ে সম্প্রতি যে কুৎসার আক্রোশ দেখা গেছে, তাতে বিশ্বের নানা দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তি খর্ব হয়ে গেল। এরকম পরিস্থিতিতে ভারতের মতো বহুত্ববাদী, মানবতাবাদী গণতান্ত্রিক দেশে বিজেপির লাগাতার ঊর্দ্ধারোহণ কি সম্ভব? পশ্চিম এশিয়ায় নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা যে ভাবে বাড়ছিল, ঠিক সেভাবেই তাঁর আমলে সামাজিক ঘৃণার বিস্তারে তাঁর ভামূর্তির অবক্ষয় অবশ্যম্ভাবী।


❤ Support Us
error: Content is protected !!