- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- এপ্রিল ৪, ২০২৩
এনসিইআরটির সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকের গৈরিকীকরণ।দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে কোপ
এনসিইআরটি তাঁদের সমাজ বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে বড়ো রকমের পরিবর্তন ঘটাল। সবথেকে লক্ষ্যণীয় দিক হল, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বইতে মুঘল দরবার সম্পর্কিত যে অধ্যায়টি রয়েছে সেটিকে সম্পূর্ণ ভাবে বর্জন করা হয়েছে। তাই এবার থেকে যেসব বিদ্যালয়ে এনসিইআরটি বই পড়ানো হয়, সেখানে বাদ থাকবে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস আর পড়ানো হবে না। ন্যাশনাল এডুকেশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল রিসার্চ এণ্ড ট্রেনিং বা এনসিইআরটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, পাঠ্যসূচিতে কিংস এণ্ড ক্রনিকলস নামক যে অধ্যায়টি রয়েছে সেটিকে বাতিল করা হল। একই ক্লাসে সিভিক্সের বই থেকে ‘আমেরিকন হেজিমনি ইন ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স’ এবং দ্য কোল্ড ওয়ার এরা’, এই দুটি অধ্যায় বাদ পড়বে। এছাড়াও ইণ্ডিয়ান পলিটিক্স আফটার ইণ্ডিপেন্ডেন্স পাঠ্য পুস্তক থেকে রাইস অফ পপুলার মুভমেণ্টস, এরা অফ ওয়ান পার্টি ডমিন্যান্স বাদ দেওয়া হতে পারে বলে সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে। পরিবর্তন আসবে একাদশ শ্রেণির ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকেও। সেখানেও বাদ দেওয়া হয়েছে, সেণ্ট্রাল ইসলামিক ল্যান্ড ,ক্ল্যাশ অফ কালচার, এবং শিল্প বিপব সম্পর্কিত।
কেবলমাত্র একাদশ-দ্বাদশ নয়, দশম শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বইয়েও পরিমার্জন করা হয়েছে। পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডেমোক্র্যাসি এণ্ড ডাইভার্সিটি, পপুলার স্ট্রাগলস এণ্ড মুভমেণ্টস এবং চ্যালেঞ্জেস অফ ডেমোক্র্যাসি এই অধ্যায়গুলো আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত থাকছে না।
সময়ের সঙ্গে পাঠ্যপুস্তকে রদবদলের প্রচেষ্টা সাধুবাদযোগ্য। তবে একথাও বিচার করা প্রইয়োজন কোন লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এনসিইআরটি ভারত সরকার স্বীকৃত স্বশাসিত সংস্থা। পাঠ্যপুস্তক তৈরি ও তাঁর মানোন্নয়নের জন্য পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত কর্তাব্যক্তিরা নিরলসভাবে সচেষ্ট থাকেন। বহু প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও ঐতিহাসিকররা সংস্থা উপদেষ্টা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাই এনসিইআরটির পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মহলে যে সমাদৃত হবে তা বলা বাহুল্য। নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে চলা কোনো সংগঠন তাই পাঠ্যপুস্তককে তাঁদের আদর্শের রঙে রাঙিয়ে তুলতে চাইবে সেটাই স্বাভাবিক। ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে আরএসএসের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বিজেপিও সে ভাবনার অন্যতম সমর্থক। এনসিইআরটির বইয়ে রাষ্ট্রীয় কোপ নতুন্নয়। ১৯৭৭ সালে জনতা সরকার ক্ষমতায় এসে রামশরণ শর্মার অ্যানসিয়েণ্ট হিস্ট্রি পাঠ্যপুস্তক তালিকা থেকে বাতিল করে দেয়। যেসরকারের অন্যতম শরিক ছিলেন জনসংঘের প্রতিনিধিরা। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে একই ধারা অনুসরণ করতে চেয়েছে। বার বার মুঘলদের তাঁরা বহিরাগত বলে দাবি করেছেন। শিল্প-স্থাপত্য, সাহিত্য সংস্কৃতিতে তাঁদের অবদান অস্বীকার করবার প্রবণতা আজকের নয়। ভারতের সমন্বয়বাদী সংস্কৃতিকে বাতিল করে একরৈখিক এবং এককেন্দ্রিক ছাঁচে গড়ে তুলতে চাইছে গেরুয়া শিবির। তাঁর সঙ্গে চলছে ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী দেশ বানাবার প্রক্রিয়া। সিলেবাসের রদবদলের প্রক্রিয়ায় বহুজাতিক পুঁজি-হিন্দুত্বের আঁতাত স্পষ্ট। নবীন প্রজন্ম শুধু মাত্র ভারতের গৌরবময় অতীতের কথা জানবে যে অতীতের নির্মাণ হয়েছে কেবলমাত্র হিন্দুদের দ্বারা। বৈচিত্র্যের মধ্যে একতার চিরাচরিত ভারতীয় সংস্কৃতি আজ বিপদাপন্ন। এনসিইআরটির নতুন পাঠ্যপুস্তকে রয়েছে তার ইঙ্গিত।
❤ Support Us