- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- অক্টোবর ২৫, ২০২৩
স্কুল পাঠ্যে আর নয় “ইন্ডিয়া”। দেশের নাম “ভারত” নির্দেশিকা এনসিইআরটির।কী অভিমত শিক্ষাবিদদের ?
দেশের সংবিধানে “ইন্ডিয়া”কে “ভারত” বলে উল্লেখ করা আছে। দেশ এখন “ইন্ডিয়া” থেকে “ভারত” হতে চলেছে নরেন্দ্র মোদির সরকারের সৌজন্যে। আর এই নিয়ে বিরোধীরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তবে এই প্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ অ্যান্ড সাউথ-ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ-এর প্রধান, অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীর অভিমত, “আমাদের সংবিধানের প্রথমে লেখা আছে India that is Bharat , তাই এসব নিয়ে এতো বিতর্কের কি আছে। তাছাড়া বাংলা মাধ্যমে যাঁরা লেখাপড়া করেছেন তাঁরা ইতিহাস বইতে দেশের নাম হিসেবে ভারত পড়েছেন, ইন্ডিয়া পড়েননি। যাঁরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়েছেন তাঁরা দেশের নাম ইন্ডিয়া পড়েছেন। ইন্ডিয়া ব্রিটিশদের দেওয়া নাম। সবাই এখন মুলে যেতে চাইছেন। তাই ব্রিটিশদের দেওয়া ইন্ডিয়া নামটা পাল্টে ভারত বললে ক্ষতি কি? তাছাড়া সংবিধানে যাহাই ইন্ডিয়া তাহাই ভারত। এখন এনসিইআরটি যদি ইন্ডিয়ার পরিবর্তে পাঠ্য বইতে ভারত লেখে তাতে সমস্যা কোথায়?” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ অ্যান্ড সাউথ-ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ-এর প্রধান অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীর এই যুক্তি রাজনীতিকরা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্যম নরেন্দ্র মোদি দেশের নাম পাল্টে দিচ্ছেন।
এই মুহূর্তে দেশজুড়ে জল্পনা চলছে, সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশন সংবিধান সংশোধন করে দেশের নাম থেকে ‘ইন্ডিয়া’ বাদ দিয়ে শুধু ভারত নামটিকেই স্বীকৃতি দিতে পারে নরেন্দ্র মোদির সরকার। ঠিক এই আবহেই স্কুল পাঠ্যবই থেকে “ইন্ডিয়া” বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করল কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন এনসিইআরটি বা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং অনুমোদিত সমস্ত পাঠ্যপুস্তকে নাম বদলের নির্দেশিকা জারি হতে চলেছে। এনসিইআরটি অনুমোদিত সমস্ত স্কুল পাঠ্যপুস্তকে ‘ইন্ডিয়া’ নামটি বাদ দিয়ে “ভারত” লেখার নির্দেশ দেওয়ার জন্য সংস্থার সংশ্লিষ্ট বিষয়ক কমিটি সুপারিশ করেছিল। সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে চলতি বছর সেপ্টেম্বরের শুরুতে নয়া দিল্লিতে জি২০ শীর্ষবৈঠকে অংশ নেওয়া বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের কাছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ্যে আসার পরেই দেশের নাম বদল নিয়ে জল্পনা শুরু হয়, লোকসভা ভোটের আগে দেশের নাম শুধুই “ভারত” করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। কারণ, ভারতের রাষ্ট্রপতি কাউকে কোনও চিঠি লিখলে তাতে চিরাচরিত ভাবে লেখা থাকে “প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া” কিন্তু জি২০-র রাষ্ট্রনেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর চিঠিতে “প্রেসিডেন্ট অফ ভারত” কথাটি লেখা হয়। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, আচমকা এমন বদলের কারণ কি?
এই নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইন্দোনেশিয়া সফরের সূচি এক্স হ্যান্ডলে প্রকাশ করেছিলেন বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। তাতে নরেন্দ্র মোদির নামের পাশে লেখা হয়েছিল, “প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত”। প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি বিরোধী জোট “ইন্ডিয়া” বা “ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স” আত্মপ্রকাশের পরেই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের এবং বিজেপি শিবিরের দেশের নাম ইন্ডিয়া থেকে বদল করে ভারত লেখার বিষয় “সক্রিয়তা” সশুরু হয়।
আসলে আর সবটাই হচ্ছে জাতীয়তাবাদের প্রতি কে কতটা একনিষ্ঠ সেটা বোঝাবার কৌশল। বিজেপি ভাবছে তাদের বিরুদ্ধে যে দেশ জুড়ে জোট তৈরী হয়েছে তার সংক্ষেপ নাম “ইন্ডিয়া”। তাই নামের জেরে বিরোধী শিবির জাতীয়তাবাদে বুঝি ভাগ বসাতে পারে। তাই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার “ইন্ডিয়া” জোট শিবিরকে খোঁচা দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘জঙ্গি সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’-র নামেও ‘ইন্ডিয়া’ রয়েছে। ভারত দখলকারী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামেও ‘ইন্ডিয়া’ ছিল।’’ কিন্তু “ইন্ডিয়া” জোটের নাম নিয়ে যে মোদির চিন্তা বেড়েছে, তাতে সন্দেহ নেই।
নরেন্দ্র মোদি বিরোধী “ইন্ডিয়া” জোটের নামোল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘‘বিরোধী জোটের নামের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে পাপ।’’ ইন্দিরা গান্ধির আমলে কংগ্রেসের স্লোগান ‘ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া’-কে কটাক্ষ করেছিলেন মোদি।
তবে শুধু বিরোধীদের জোটই নয়, দেশের নাম বদলের জন্য মোদি সরকারের সম্ভাব্য উদ্যোগ আসলে “ইন্ডিয়া বনাম ভারত” তত্ত্ব নিয়ে আরএসএসের পুরনো অবস্থানের অনুসারী বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন।
তাঁদের মতে সঙ্ঘ পরিবার বরাবরই “ইন্ডিয়া” নামটিকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার প্রতীক বলে চিহ্নিত করেছে। ভারতীয় সংবিধান যা-ই বলুক না কেন, আরএসএস নেতাদের যুক্তি, ব্রিটিশদের দেওয়া ওই নাম সনাতন সংস্কৃতি এবং “অখণ্ড ভারত” চেতনার পরিপন্থী। এমনকি, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ২০১৩ সালে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত অসমের শিলচরে বলেছিলেন, ‘‘ধর্ষণের ঘটনা ইন্ডিয়ায় ঘটে, ভারতে নয়।” এই আবহেই এনসিইআরটির “ভারত”-নির্দেশিকা নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিল।
এদিকে “ইন্ডিয়া” জোটের তরফে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকারের এই দেশের নাম বদলে “ইন্ডিয়া” থেকে “ভারত” করার বিরোধিতা প্রথম থেকেই করা হচ্ছে। বিরোধীদের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসে সংঘ পরিবারের মুখপাত্র বা আজ্ঞাবহের কাজ করছে। তাই সংঘ পরিবারের দাবি পূরণকে নরেনের মোদির সরকার অগ্রাধিকারের প্রথম সারিতে রেখেছে।
❤ Support Us