Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • নভেম্বর ৫, ২০২৫

উত্তরপূর্ব ভারতে নয়া জোটের সূচনা ! এনপিপি-তিপরা মোথার ‘একক কণ্ঠ’ গড়ার পরিকল্পনা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
উত্তরপূর্ব ভারতে নয়া জোটের সূচনা ! এনপিপি-তিপরা মোথার ‘একক কণ্ঠ’ গড়ার পরিকল্পনা

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সভাপতি কনরাড সাংমা ও তিপরা মোথার প্রধান প্রদ্যোত দেববর্মা একত্রিত হয়ে উত্তর-পূর্বের জন্য একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক উদ্যোগের ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার দিল্লিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। দুই নেতা জানান, নতুন দলটি হবে ‘উত্তর-পূর্বের জন্য একক, স্বদেশী ও শক্তিশালী রাজনৈতিক কণ্ঠ’।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বিজেপি মুখপাত্র ও নাগাল্যান্ডের প্রাক্তন মন্ত্রী মমোনলুমো কিকন এবং অসমের ‘নর্থ কাচার হিলস অটোনমাস কাউন্সিল’-এর প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা ড্যানিয়েল লাংথাসা। সবাই একমত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলি একত্রিত করে একটি সাধারণ প্রতীক এবং পতাকার অধীনে নতুন সত্তা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কনরাড সাংমা জানান, দীর্ঘদিন ধরে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যের তরুণ নেতারা একাধিক প্ল্যাটফর্মে একই ধরনের সমস্যা তুলে ধরছেন। তাই এখন মূল লক্ষ্য হলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের কণ্ঠকে শক্তিশালী করা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে একই বিষয় নিয়ে কথা বলছি, কিন্তু আলাদা আলাদা জায়গা থেকে। আমাদের শক্তি এখনই হলো ঐক্য। জনগণের স্বার্থে এই একত্রীকরণ অত্যন্ত জরুরি।’

প্রদ্যোত দেববার্মা বলেন, এই নতুন জোটের লক্ষ্য কোনো রাজনৈতিক বিরোধ তৈরি করা নয়। বরং এটি তৈরি হচ্ছে জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জনগণকে এমন দৃঢ় কণ্ঠ দেওয়া যা শুধুমাত্র উত্তর-পূর্বে নয়, দেশের বড়ো শহরগুলোতেও সুপষ্টভাবে শোনা যাবে। আমাদের সমস্যার দিকেই আমাদের মনোযোগ, ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়।’ নতুন দলটি গঠনের জন্য একটি নয়-সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার আহ্বায়ক হিসেবে থাকবেন এনপিপি-র কার্যনির্বাহী সভাপতি জেমস সাংমা। কমিটির কাজ হবে দলের কাঠামো, কার্যক্রম এবং অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্তির পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, যার রিপোর্ট আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নয়া এই একত্রীকরণের ফলে নতুন দলটি মূলত উত্তর-পূর্বের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করবে। তারা জমি ও অঞ্চল সংরক্ষণের পাশাপাশি সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন রোধ, উপজাতি ভূমির নিরাপত্তা, শিক্ষার্থী ও যুবকদের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা এবং বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বর্তমানে এনপিপি-এর বাইরে উত্তর-পূর্বের কোনো রাজনৈতিক দল একাধিক রাজ্যে উপস্থিত নয়। এনপিপি মেঘালয়ের বাইরে মণিপুর, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্রদেশে বিধায়ক বা সাংসদ দিয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে। সাংমা বলেছেন, নতুন দল ভোটে স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণ করবে। যদিও বর্তমানে এনপিপি বর্তমানে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র সঙ্গে জোটে আছে, কিন্তু তারা জোটের বাইরে নিজের পরিচিতি বজায় রাখতেও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সাংমা বলেন, ‘শুধু জোট করলেই সব সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তাই আমরা একক, ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এগোচ্ছি।’

প্রদ্যোত দেববর্মা কনরাড সাংমাকে একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান। গত বছরের অক্টোবর মাসে ত্রিপুরায় তিপরা মোথার প্রচারের সময় সাংমা সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘উত্তর-পূর্বের উপজাতি জনগোষ্ঠীর জন্য সংবিধানগত সমাধান আনা জরুরি। এই সমাধান আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিম জুড়ে প্রযোজ্য হবে।’ এদিন নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই উদ্যোগ এক ধরনের ‘একক উত্তর-পূর্বাঞ্চল’-এর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবে। যেখানে উত্তর-পূর্বের মানুষ একক কণ্ঠে নিজেদের দাবির প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। নতুন দলটি শুধু রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে না, বরং জনগণের দৈনন্দিন সমস্যা ও স্বার্থকে কেন্দ্র করে কাজ করবে। তবে উদ্দেশ্য যাই হোক, নয়া জোট যে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনীতিতে যে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল তা বলবার অপেক্ষা রাখে না।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!