- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- নভেম্বর ১৩, ২০২৩
জয়নগরে তৃণমূল নেতা খুনের জের, জনরোষে নিহত অভিযুক্ত । দোলুয়াখালি গ্রামের একাধিক বাড়িতে লুঠ, অগ্নিসংযোগ । গৃহহারা বহু মানুষ। শুরু শাসক বিরোধী তরজা
![জয়নগরে তৃণমূল নেতা খুনের জের, জনরোষে নিহত অভিযুক্ত । দোলুয়াখালি গ্রামের একাধিক বাড়িতে লুঠ, অগ্নিসংযোগ । গৃহহারা বহু মানুষ। শুরু শাসক বিরোধী তরজা](https://aramva.co/wp-content/uploads/2023/11/joynagar-conflict.jpg)
জয়নগরের বামুনগাছির তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সইফুদ্দিন লস্করকে সোমবার ভোরে দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করে। তার পর দুষ্কৃতীদের একজনকে ধরে বেধড়ক পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। বামুনগাছির থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের দোলুয়াখালিতে ১৫ থেকে ১৬টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দোলুয়াখালির বাসিন্দাদের অভিযোগ এই গ্রামের সবাই সিপিএম করে। তাই তৃণমূল কর্মীরা পুলিশকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে তাদের বাড়িঘর থেকে জিনিসপত্র লুঠ করে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। দমকল কর্মীদের কাজ করতে দেয়নি আগুন লাগানোর পর প্রায় এক ঘণ্টা। এক কথায় তান্ডব চালিয়েছে তৃণমূল। বামুনগাছির তৃণমূল নেতার খুনের ঘটনায় বিজেপি ও সিপিএম-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। তাদের বক্তব্য তৃণমূল অভিযুক্ত দুষ্কৃতীকে পিটিয়ে মারেনি, জনরোষে তার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর এডিজি সাউথ বেঙ্গল সিদ্ধিনাথ গুপ্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বলেছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
এদিকে জোড়া এই খুনের ঘটনায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জয়নগরে। ভোরে নমাজ পড়তে যাওয়ার পথে বাড়ির কাছেই গুলি করে খুন করা হয় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে। এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তাড়া করে এক দুষ্কৃতীকে ধরে বেধড়ক মারতে শুরু করে উত্তেজিত জনতা। তাতে মৃত্যু হয় ওই হামলাকারী অবলে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির। এরই মধ্যে অপর এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তাতে জনতার রোষ প্রশমিত হয়নি। জোড়া খুনকে কেন্দ্র করে ভয়ঙ্কর উত্তেজনা রয়েছে এলাকায়।
এদিকে যতই বেলা বাড়তে থাকে ততোই আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জয়নগরের পরিস্থিতি। বামুনগাছির তৃণমূল নেতাকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের দোলুয়াখালি গ্রামের সিপিএম সদস্য-সমর্থকদের বাড়িতে নির্বিচারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ১৫ থেকে ১৬টি বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়, আটকে দেওয়া হয় দমকলের গাড়ি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে এখন এলাকা জুড়ে বিরাট পুলিশ বাহিনী। সঙ্গে রয়েছে ব়্যাফও।
মৃত সইফুদ্দিন লস্কর তৃণমূলের বামনগাছি অঞ্চলের সভাপতি। সইফুদ্দিনের স্ত্রী বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান। স্থানীয় সূত্রে খবর, আজ ভোর পৌনে ৫টা নাগাদ নমাজ পাঠের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সইফুদ্দিন লস্কর। অভিযোগ, সেই সময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় ৪-৫ জন দুষ্কৃতী। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির।
খুনের কারণ ঘিরে যদিও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। মৃত তৃণমূল নেতার বাবার দাবি, সিপিএম ও বিরোধীরাই এই খুনের জন্য দায়ী। একই দাবি করেছেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকত মোল্লাও। যদিও বারুইপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক বিভাস সর্দার দুষ্কৃতীদের দিকেই আঙুল তুলেছেন। খুনের কারণ খতিয়ে দেখছে জয়নগর থানার পুলিশ।
এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সওকত মোল্লা আঙুল তুলেছেন সিপিএম এবং বিজেপির দিকে। সওকতের দাবি, “সিপিএম এবং বিজেপি আশ্রিত সমাজবিরোধীরা সইফুদ্দিনকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। এর মূল উদ্দেশ্য হল এটাই যে গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। কারণ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়, তাদের পায়ের তলার মাটি নেই।”
এদিকে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “যেখানে সিপিএম-এর কোনও অস্তিত্ব নেই সেখানে সিপিএ এত ক্ষমতা পেলো কথা থেকে? আসলে তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে বোখরার লড়াই, তার জেরে খুন। আর সেদিক থেকে নজর ঘোরাতে তৃণমূল এই নাটক করছে। এই ঘটনা ২০২২ সালের ১০ মার্চ বগটুই -এর শিশু-মহিলা সহ ১০ জনকে বাড়িতে বন্ধ করে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সেখানে তৃণমূলের ভাদু শেখ, যিনি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছিলেন, তিনি খুনের পর ১০ জনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনার সময় দমকলের গাড়ি, পুলিশকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।” অন্যদিকে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের দাবি, “তৃণমূল নেতা খুনের পর জনরোষেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালের পর রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন বদলা নয়, বদল চাই। তৃণমূ হিংসায় বিশ্বাস করে না।”
এদিকে যাদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের অভিযোগ, আমরা সিপিএম করি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা পরাজিত হয়েছি। তৃণমূলের হাতে এখানকার পঞ্চায়েত। আমরা সিপিএম করি এই দোষে আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে, খাবার চাল, রান্নার বাসন, পরার পোশাক সব পুড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। পুলিশ দাঁড়িয়ে সব দেখেছে। আমাদের এখন থাকা খাওয়ার কোনও অবস্থা , কোনও জায়গা নেই।
❤ Support Us