ছয় ঘণ্টার মধ্যে গাজা ছাড়তে ফিলিস্তিনিদের নির্দেশ সিরায়েলের

ছয় ঘণ্টার মধ্যে গাজা ফাঁকা করে দিতে হবে। ফিলিস্তিনি গাজাবাসীদের এই নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল সেনা। তাই নিজের জায়গা ছাড়তে হাতে সময় আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা, তার মধ্যেই গাজা ছাড়তে হবে। ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, গাজাবাসীর গাজা ছাড়লেই উত্তর এবং মধ্য গাজায় ইসরায়েলি স্থলসেনারা ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীদের দমন অভিযান শুরু করবে। তেল আভিবের দেওয়া ২৪ ঘণ্টার “চরম সময়সীমা” মেনে প্রায় ২৩ লক্ষ গাজাবাসীর অর্ধেকই এখন বিকল্প বাসস্থান খুঁজতে বাড়ি ছেড়ে পথে নেমেছেন।

গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার “চরম সময়সীমা” ঘোষণার পরেই, গাজার অসামরিক প্যালেস্তেনীয় নাগরিকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ছেড়ে দক্ষিণ প্রান্তে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিমান থেকে প্রচারপত্র ফেলতে শুরু করে ইসরায়েলি বায়ুসেনা। তার পরেই হামলা এড়াতে ঘর-বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছেন উত্তর এবং মধ্য গাজার বাসিন্দারা। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ইসরায়েল গাজাবাসীদের গাজা থেকে চলে যাওয়ার জন্য চায় ঘণ্টা সময় সময় দিয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় গাজা ছাড়ার ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গাড়ির মাথায় বাক্সপেটরা বেঁধে প্রাণ নিয়ে দ্রুত মানুষ গাজা ছাড়ছেন। গাজা উত্তরের এই মানুষগুলো কোন অজানার উদ্দেশে রাস্তায় নেমেছেন, সেটা তারা নিজেরাও হয়তো জানেন না।

বৃহস্পতিবার রাতেই ইসরায়েলের সেনা রাষ্ট্রপুঞ্জকে জানিয়েছে যে, তারা ২৩ লক্ষ প্যালেস্তেনীয় নাগরিকের আবাসভূমি গাজার অন্তত ১০ লক্ষ মানুষকে সরে যাওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা অসম্ভব বলে প্রকাশ্যে জানিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিন্তু প্রাণের ভয়ে গাজার  সাধারণ মানুষ এখন দিকভ্রান্তের মতো রাস্তায় নেমে পড়েছেন।

এদিকে ইসরায়েলি বিমান নির্বিচারে গাজায় হামলা চালিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্মীদের মতে, গাজা শহর থেকে পালিয়ে আসা কনভয়গুলিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছে বহু মহিলা ও শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে ইসরায়েলি বিমান হানায়।

আল জাজিরার সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, ইসরায়েলের ৬ ঘণ্টার মধ্যে গাজা ছাড়ার হুমকির মুখে পরে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি সাধারণ নাগরিক, যারা গাজায় থাকতেন, তাঁরা উত্তর গাজা ছেড়ে পালিয়েছেন। দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের জেরে রয়টার্সের এক চিত্র  সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ৬ জন সাংবাদিক। এদের মধ্যে আল জাজিরার সাংবাদিক আছেন।

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হানায় অন্তত ১৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ৭৬৯৬ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলেরও ১৩০০ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৪০০ জন। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিরা শুক্রবার ১৬ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা ৫২তে পৌঁছেছে।
ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অফ জাস্টিস। তারা যুক্তরাজ্যের সরকারকে জানিয়েছে যে এই যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা, অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্য ও অন্যত্র রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে, এই কাজ যুদ্ধাপরাধ।

এদিকে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাজারী সতর্ক করে বলেছেন, যে বা যারা নিরাপত্তা বেষ্টনীর কাছে যাবে বা লেবাননের ইসরায়েলি অংশের কাছে যাবে তাকে বা তাদের হত্যা করা হবে। তিনি বলেন, লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্তের কাছে যা ঘটছে তার সবটাই লেবাননের ভেতর থেকে ঘটছে। এই ঘটনার জন্য লেবানন সরকারের দায়িত্ব নিতে হবে এবং এই ঘটনা ঘটানোর মূল্য দিতে হবে।