Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • জুন ২৭, ২০২৩

কেন্দ্রে বিজেপি আর ছয় মাস, ওরা প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু কাজ করে না । রাজ্যের টাকায় একশো দিনের কাজ হচ্ছে, জলপাইগুড়ির সভায় বললেন মমতা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
কেন্দ্রে বিজেপি আর ছয় মাস, ওরা প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু কাজ করে না । রাজ্যের টাকায় একশো দিনের কাজ হচ্ছে, জলপাইগুড়ির সভায় বললেন মমতা

জলপাইগুড়ির পঞ্চায়েত নির্বাচনী  সভা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিএসএফকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “বিএসএফে সবাই খরাপ বলি না। শুধু বলব মোদি আজ আছে কাল নেই। আপনাদের নিরপেক্ষ হয়ে দেশরক্ষার কাজ করে যেতে হবে। আজও একজন সীমান্তে মারা গেছে, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।” সোমবার মমতা সরাসরি বিএসএফের বিরোধীতা করলেও মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির সভা থেকে সব বিজেপি খারাপ নয় বলেই মমতা মন্তব্য করলেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটে, নিজের বাসভবনে পঞ্চায়েত নির্বাচন কমিটির বৈঠকে বলেছিলেন, “রাজ্য সরকারের সব উন্নয়নমূলক কাজ সবাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে জেলায় জেলায় গিয়ে প্রচার করুণ, সেই মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার নিজেই জলপাইগুড়ির সভা থেকে রাজ্যের সমস্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা তুলে ধরলেন। সব জাতি,ধর্ম,বর্ণের মানুষের পাশে তিনি আছেন জানালেন, বললেন, ৩৪ বছরের বাম সরকার ও ১০ বছরের বিজেপি সরকার কিচ্ছু করেনি। আপনারা তৃণমূলকে ভোট দিলে তৃণমূল আপনাদের পাশে থাকবে। তবে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর থেকে টানা ১৯ দিনে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেই বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের সভা থেকে দিলেন না। উল্টে গ্রাম দখলে জলপাইগুড়ির মানুষদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ” আমি বলব ভয় পাবেন না। মা বোনেদের এগিয়ে দিন। পেছনে ছাত্র-যুবরা থাকুন। আর এদের বুদ্ধি দিন বয়স্করা।” মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জলপাইগুড়ির সভা করতে যাননি। তবে তিনি পদাধীকারবলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী,  তাই এই ভাবে ভোটযুদ্ধে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করা কি সংঘাতের আবহকে আরও বাড়াবে না? এই প্রশ্ন করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা।

জলপাইগুড়ির সভায় মমতা বলেন, “আমি এখনে সব ধর্ম, সব জাতিকে সম্মান জানিয়ে বলছি, সামনেই ইদ। তিনদিন ধরে চলবে। নির্বাচন, তাই আমি মন্দিরে ঢুকলাম না, নিষেধ আছে। চা বাগানের ভাই-বোনেদের  ধন্যবাদ। আপনারা ভালো, সুন্দর থাকুন।”
এর পরেই মমতা চা বাগান প্রসঙ্গে লোকসভা মির্বাচনের আগে বিজেপির সব চা বাগান খুলে দোওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “এখানে ১৮৩টি চা বাগান আছে। সবটাই প্রায় খুলে দিয়েছি। ডানকান ৪টে চা বাগান বন্ধ করে রেখেছে। লোকসভার আগে বিজেপি বলেছিল সব চা বাগান খুলে দেবে কিন্তু খোলেনি। আমি চা বাগানের শ্রমিকের জন্য চা সুন্দরী করেছি। পর্যটনের জন্য ব্যবস্থা করেছি। চা বাগান শ্রমিকদের পাট্টা দেব, কাজ শুরু হয়েছে। চা বাগানের মধ্যে যে হোটেল, দোকান হবে সেখানে আপনাদের বাড়ির লোক কাজ করবে।”

এর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম-বিজেপিকে এক বন্ধনীতে রেখে বলেন, “৩৪ বছর বাম, ১০ বছর বিজেপি কিচ্ছু করেনি। আমি গজলডোবায় আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম সেন্টার করেছি। অনেক কাজ করেছি। পঞ্চানন বর্মার বাড়ি সংস্কার, ইউনিভার্সিটি করেছি। আঞ্চলিক ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছি। জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ, পলিটেকনিক সহ এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, পথসাথী, জলপাইগুড়ি মহিলা থানা, ভুটান, নেপাল সংযোগকারী রাস্তা, চতুর্থ মহানন্দা সেতুর কাজ চলছে। বাংলাদেশ,নেপাল ভুটান গাড়িতে যেতে পারবেন গাড়ি করে। এখানকার ৪ লক্ষ ৩২ হাজার বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেব। দুয়ারে সরকার থেকে সরকারি কাজ দ্রুত সমাধান হয়ে যাচ্ছে। চা বাগানে যাদের পাকা বাড়ি নেই তেমন ১১ হাজারকে পাকা বাড়ি করে দিয়েছি, বাকিটা হবে। কাল আলিপুরদুয়ার জেলার প্রতিষ্ঠা দিবসে আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।”

এর পর উত্তরবঙ্গের আসন প্রাপ্তির হিসাব উল্লেখ করে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে মমতা বলেন, “গত নির্বাচনে জলপাইগুড়িতে ২টি বিধানসভা আসন, আলিপুরদুয়ারের ১টা বিধানসভা আসন আমরা পেয়েছি। বাকি সব বিজেপি পেয়েছে, আপনারা বিজেপিকে দিয়েছেন। আমি কিন্তু লক্ষ্মীর ভান্ডার আপনাদের দিয়েছি। ৬০ বছর হয়ে গেলে ১ হাজার টাকা করেও পাবেন। আপনারাই আমার ঘরের লক্ষ্মী। সরস্বতী। ব্যানার্জি, মুখার্জি, রাজবংশী, ডহর সবাই আমার ঘরের মানুষ। আমি কৃষকদের ১০ হাজার টাকা করে বছরে দুবার দিচ্ছি। কৃষক মারা গেলে ২ লক্ষ টাকা দিই। আমি সব সময় পাশে থাকি। আমি জানি আজ না হলেও পরে আপনারা আমাদের পাশেই থাকবেন।”

এদিন বিএসএফ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে মানুষকে মারা যাচ্ছে। আমি বিএসএফকে খারাপ বলছি না। আরে আজ মোদি আছে, কাল থাকবে না। আপনারা নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করুন। দেশ রক্ষার কাজ আপনাদের করে যেতেই হবে। আজও কোচবিহারে সীমান্তে টপকে এসে মেরেছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিএসএফ-এর গুলিতে যারা মারা যাবে তাদের পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরি দিই।”

কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজ দেশে একটাই কর জিএসটি। এখান থেকে টাকা নিচ্ছে কিন্তু ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। আমেরিকা, রাশিয়া ঘুরছে। মুম্বাইতে টমোটো ১২০ টাকা, দিল্লিতে ১৩০ টাকা প্রতি কিলো। আমরা ১০০ দিনের টাকা আদায় করবোই। এখন রাজ্যের টাকায় ১০০ দিনের কাজ হচ্ছে। মোদি সরকার যাবেই। আর ৬ মাস। ফেব্রুয়ারিতে লোকসভা ভোট, তখন উৎখাত হবে এই বিজেপি সরকার।”

জলপাইগুাড়ি জেলায় তাঁর সরকার কত উন্নয়ন করেছে ও করছে তা উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেচ দফতরকে বর্ষার আগে সচেতন করেছি,যাতে আপনাদের অসুবিধা না হয়। আমার সরকার রাজবংশী, কামতাপুরি, উর্দু, নওশাদ সেখ সবার। আমি শ্মশানঘাট, করবস্থান করেছি। আগামী দিনে মানুষ এসে বলবে, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং কত সুন্দর। কত সেফ হাউস, হোটেল, মেডিক্যাল কলেজ, দেবী চৌধুরানী মন্দির, ১৬ আনা মসজিদ সব করেছি। আমি সবার জন্য।”

এর পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “বাংলার মাটি শক্ত মাটি। এই মাটিকে খামচানো যাবে না। এবার পঞ্চায়েত আমরা দেখছি। কাজ পেতে টাকা দিতে হবে না। কন্যাশ্রী, মেধাশ্রী, স্বাস্থসাথীতে কাউকে এক পয়সা দেবেন না। কেউ চাইলে বলবেন দিদিকে বলে দেব। তৃণমূল পঞ্চায়েত, বিধানসভা,লোকসভায় জিতবে। কার সাধ্য আছে তৃণমূলকে হারানোর।
তিনটে ভোট তৃণমূলকে দিন। জোড়া ফুলে ঠেসে ভোট দিন। তৃণমূল সবার, আমজনতার, সরকারি কর্মীর, রাজবংশীর, উর্দুর সবার। সংখ্যালঘুদের বলছি, রাজবংশী, কামতাপুরিদের বলছি,  দিদি আছে। আপনাদের অধিকার কেউ কেড়ে নেবে না। ”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “উত্তরবঙ্গে একটি ইকোনমিক করিডোর করছি। কাউকে আর কাজের জন্য বাইরে যেতে হবে না। ১০০ দিনের টাকা ছিনিয়ে আনবোই। ১২০০ টাকার গ্যাসে জ্বলছে বিনা পয়সার চাল। মোদি আসার আগে গ্যাসের দাম ছিল ৪০০ টাকা। বাইরে থেকে ওরা লোক ঢোকাবে। আপনারা আটকে দিন।”

এর পর মমতা বলেন,  “বিজেপি সব পারবে, আমাদের মুখ বন্ধ করতে পারবে না। বিজেপির মেয়াদ আর ৬ মাস। ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে। দেশে গুলি করে মারছ, এনআরসি করছে। আর আমেরিকায় গিয়ে বলছ সবার জন্য আমরা আছি। কুস্তিগীরদের আন্দোলন দেখলেন, বিজেপির কেউ অন্যায় করলে গ্রেফতার করে না। উজালা কোথায় গেল? ডাবল ইঞ্জিন ফুটো হয়ে গেছে। আগামী দিনে আমি আরো দেব। আপনারা একটু আমাদের দোয়া, করুণা, ভালোবাসা দিন। যত যাই করো, কুৎসা, মিথ্যা খবর কর, তোমরা হারবেই।”

এর পরই তৃণমূলনেত্রী বাংলা জয়ে কি করতে হবে সেই নিদান দিয়ে মমতা বলেন, “মা বোনেদের এগিয়ে দিয়ে পিছনে বড়রা থাকবেন, ছাত্র-যুবরা পেছনে থাকুন, বুদ্ধি দেবে বয়স্করা।”

দুর্নীতি যে তাঁর দলকে পঞ্চায়েত ভোটে বেগ দেবে সেটা ভালো করেই জানেন। তাই তিনি সভা শেষে এই প্রসঙ্গে বলেন,  “কে একটা ছোট্ট কি করেছে, তাই আমাদের বলছে চোর। সবচেয়ে বড় চোর বিজেপি। টমেটোর দাম ১২০ টাকা প্রতি কিলো। রেড সিগনাল দিচ্ছে দেশ। আমি এত দুর থেকে এই সভায় আসা মা বোনেদের পাগুলোতে প্রণাম জানাই।” আবারও ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবেগকে নির্ভর করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের রুখতে চাইছে, এদিনে সভায় তাঁর বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট হয়ে গেল।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!