- এই মুহূর্তে দে । শ
- জুন ১৫, ২০২৩
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে চাহিদা তুঙ্গে বোমার। ভিন রাজ্য থেকে আসছে কারিগর

ভানু বাগের বোমার কারখানায় বিস্ফোরণের পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী অভিযোগ করেছিলেন, “এই বোমার কারখানা থেকে whatsapp -এ বোমার অর্ডার দেয় তৃণমূলীরা। আর এই বোমা দিয়েই পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের পরাস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল।” মুরশিওদাবাদের কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর এই অভিযোগের অনেকটাই বাস্তবতা পাওয়া যাচ্ছে মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক বোমার চাহিদার চিত্র থেকে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বের পঞ্চম দিনেও রাস্তায় জমায়েত হওয়া বিরোধ দলের ওপর আচমকা বোমা এসে পড়ছে। একটা নয় একের পর এক। বিকট শব্দে সকেট বোমা ফেটে গোটা এলাকা কেঁপে বিকট শব্দে। বোমা পড়ার পরমুহূর্তেই উত্তজনা বাড়ছে, তবে শাসক দলের দুষ্কৃতীরা এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে। বিরোধীরা বলছে এই ঘটনার সঙ্গে পলিসি যোগ আছে। কেননা বোমা মেরে বিরোধীদের এলাকা ছাড়া করেই আবার শাসক দলের লোকজন এসে কয়েক মিনিটের মধ্যেই এলাকা দখল করে নিচ্ছে। বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের এটাই মনোনয়ন পর্বের ছবি।
এই সব দিক নজরে রেখে মুর্শিদাবাদে বোমার কদর বাড়ছে, যদিও সারা বছরই মুর্শিদাবাদে বোমার চাহিদা তুঙ্গে থাকে। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে সেই বোমার চাহিদা এখন লাফিয়ে বেশ কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। আর এই হঠাৎ বেড়ে যাওয়া চাহিদা সামাল দিতে পড়শি রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ বোমার কারিগরদের ডেকে আনা হচ্ছে বলে খবর। মুর্শিদাবাদের বোমার কারিগরদের এটাই দাবি। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের চিন্তা বাড়াচ্ছে এই বোমার চাহিদা।
পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার আগে থেকেই মুর্শিদাবাদে বিপুল পরিমাণে বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের খবর বার প্রকাশ্যে এসেছে। ভোট-পর্ব শুরু হওয়ার পরেও সেই বোমার আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বিন্দুমাত্র ছেদ তো পরেইনি উল্টে আরও বেড়েছে। গত শনিবারই শমসেরগঞ্জ থেকে উদ্ধার হয়েছে ব্যাগ ভর্তি ২৫টি তাজা সকেট বোমা। ব্যাগ ভর্তি সকেট বোমা উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হুমাইপুর অঞ্চলের লালনগর এলাকায়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, হরিহরপাড়া থানার পুলিশ রবিবার সকালে লালনগর ঘোষপাড়া সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩০টি তাজা বোমা। বুধবার দুপুরে মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর থানার তেঘরি নাজিরপুর বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হয় দু’টি নাইলন ব্যাগ। সেই ব্যাগ থেকে মোট ৪০টি তাজা বোমার সন্ধান মিলেছে। ভোটের মরসুমে যে বোমার চাহিদা বেড়ে গিয়েছে, এই ঘটনা সেটাই প্রমাণ করছে ? বহরমপুর পুলিশ জেলার সুপার সুরিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নিয়মিত অভিযান চলে। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বাড়তি সর্তকতা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের সোর্স ও জেলা গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয় হওয়ায় বোমা উদ্ধারের পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে।’’ এদিকে অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলছেন, “পুলিশে সোর্স বলে বস্তুটাই উবে গেছে। এখন রাজ্যে কি কোনও মুখ্যমন্ত্রী আছেন? নাকি রাজ্যে দুটো মুখ্যমন্ত্রী দিদিভাই ও খোকাবাবু! নাহলে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে এই হরে বোমাবাজি, বোমা উদ্দ্রারের পরেও এতো নীরব কেন মুখ্যমন্ত্রী?”
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বোমার চাহিদা বাড়ার কারণ বোমার দাম কম। বোমা প্রস্তুতকারীরা বলছেন, “দেশি বন্দুক-সহ এক রাউন্ড গুলির দাম যেখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা সেখানে মাত্র ৮০ টাকায় পাওয়া বোমা পাওয়া যাচ্ছে। একটু ভাল মানের সকেট বোমার দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তাই কোনও অঞ্চলে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বন্দুকের থেকে দুষ্কৃতীদের বেশি পছন্দ কম দামি এই সব সকেট বোমা, সুতলি বোমা। শমসেরগঞ্জের এক বোমা কারিগর বলেন, ‘‘এখন বোমার প্রচুর চাহিদা। মুড়িমুড়কির মতো বোমা বিক্রি হচ্ছে। ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকে লোকদের আনতে হচ্ছে বোমা তৈরির জন্য। রাত জেগে বোমা তৈরী চলছে । এক একটা সকেট বোমায় আমরা ৩০-৩৫ টাকা পাই। বাজারে যা বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকায়। পেটের দায়ে এই বেআইনি বোমা করতেই হয়।’’
প্রশ্ন একটাই এই বেআইনি বোমা তৈরির কারখানা কি পুলিশের নজরে পড়ছে না? না হলে ক করে শমসেরগঞ্জে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এলাকার দখল নিতে এই বোমা শাসক, বিরোধী সবাই কিনছে, আর রাত জেগে কারিগররা বোমা তৈরী করছে? আবার কি একটা বিস্ফোরণে বেশ কিছু লোকের প্রাণ গেলে পুলিশ-প্রশাসনের টনক নড়বে?
❤ Support Us