- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- জুন ২৪, ২০২৩
প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন জয়ে এগিয়ে তৃণমূল। ত্রিস্তরের ৯০০৯ আসন ঘাসফুলের দখলে। বিনাযুদ্ধে জমি ছাড়তে নারাজ বাম, গেরুয়া শিবির

ভোটের আগেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৯ হাজার ৯টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ! আর এই জয়ে শীর্ষে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ৬ হাজার ৩৮৩-র মধ্যে বিনা যুদ্ধে জয় ১ হাজার ৭৬৭টিতে। “এগিয়ে বাংলা” স্লোগানের সঙ্গে মিলিয়ে এ যেন পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার আগেই পঞ্চায়েতে “এগিয়ে তৃণমূল”।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা তথ্য অনুযায়ী এখনও পুরো রাজ্যে ১২% আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হয়েছে। এর মধ্যে শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জেলাতেই ২৬% পঞ্চায়েত আসনে ভোট দিতে ভোটারদের লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হচ্ছে রাজ্যের মডেল লোকসভা কেন্দ্র, এখানে গণতন্ত্রের এমনি অবস্থা যে ১০০-র মধ্যে ২৬ শতাংশে কোনও ভোটই হবে না। এই লোকসভার সাংসদ আবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগে থেকেই রাজ্যে স্লোগান ছিল “এগিয়ে’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা”, কারণ এটা রাজ্যের মডেল লোকসভা কেন্দ্র, এই কেন্দ্রের সাংসদ তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে যেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১২ শতাংশ আসনে জয় এসেছে, সেখানে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রায় ২৬.৬২ শতাংশ আসনে পঞ্চায়েত ভোটই হবে না। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন-পর্বের আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবার একটি উল্লেখযোগ্য বার্তা দিয়ে বলেছিলেন, বিরোধীরা যদি মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারেন, তাহলে যেন তাঁকে ফোন করেন। বিরোধীরা কেন তাঁকে মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে ফোন করবেন সেই প্রশ্ন তুলে বিরোধীরা বলেছিলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন ফোন করতে যাবো? তিনি কি নির্বাচন কমিশনার? ভোট তো পরিচালনা করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।” এখানেই প্রশ্ন আসছে তাহলে কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানতেন যে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর দলের তরফে বাধা দেওয়া হবে বা হতে পারে।”
রাজর পঞ্চায়েত নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুসারে গত মঙ্গলবার, ২০ জুন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন ছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ছাড়া ২১টি জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনের সংখ্যা প্রকাশ করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। অবশেষে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরিসংখ্যানও প্রকাশ করা হয়েছে। তাতেই প্রতিফলিত হয়েছে এই জেলায় বিনা লড়াইয়ে জয়ের নিরিখে শীর্ষে তৃণমূল। দক্ষিন ২৪ পরগনা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এই জেলায় ৬ হাজার ৩৮৩-র মধ্যে বিনা যুদ্ধে তৃণমূল জয় পেয়েছে ১ হাজার ৭৬৭টিতে।
শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ মিলিয়ে মোট ৭৩, ৮৮৭টি আসনের মধ্যে ৯,০১৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফয়সালা হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ ১২.১৯ শতাংশ আসনে এবার কোনও পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে না। গ্রাম পঞ্চায়েতে সেরকম আসনের সংখ্যা ৮,০০২ , শতাংশের হিসেবে যা ৬৩,২২৯, পঞ্চায়েত সমিতিতে এই সংখ্যাটা ৯৯১, শতাংশের হিসেবে যা ৯,৭৩০ এবং জেলা পরিষদে এই সংখ্যাটা ১৬, শতাংশের হিসেবে যা ৯২৮। গতবার সার্বিকভাবে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছিল। এবার সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১২.১৯ শতাংশে। এই হিসেবে বলছে তৃণমূল ২০১৮-র তুলনায় ২০২৩-এ পঞ্চায়েত নিৰ্বাচনে অনেকটাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
জেলাভিত্তিক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের তালিকা :-
১. আলিপুরদুয়ার:
- গ্রাম পঞ্চায়েতে আসনের সংখ্যা ১,২৫২টি ।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ৮টি আসনে।
২. বাঁকুড়া:
- গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের সংখ্যা ৩,১২৯টি ।
- ভোট হচ্ছে না ৬৬৪টি আসনে।
- এর মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসনের সংখ্যা ৫৬১টি ।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ১০৬টি আসনে।
৩. বীরভূম:
- গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের সংখ্যা ২,৮৫৯টি।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ৮৯৩টি আসনে।
- পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন সংখ্যা ৪৯০টি ।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১২৮টি আসনে জয়।
- জেলা পরিষদে মোট ৫২টি আসন।
- একটি আসনে ভোট হবে না।
৪. কোচবিহার:
- গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের সংখ্যা ২ হাজার ৫০৭টি।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ১৫৭টি আসনে।
- পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট ৩৮৩টি আসন।
- ১৭ টি আসনে কোনও ভোট হবে না।
- জেলা পরিষদের মোট আসন সংখ্যা ৩৪টি।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ১টি আসনে।
৫. দক্ষিণ দিনাজপুর:
- গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন ১ হাজার ৩০৮টি।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ১১টি আসনে।
৬. দার্জিলিং:
- গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ৫৯৮টি।
- ভোট হবে না ৪০টি আসনে।
- পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন ১৫৬টি ।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ৯টি আসনে।
৭. হুগলি:
- গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৮০টি।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৯৮টি আসনে জয়।
- পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট ৬১৯টি আসন।
- ৫৮টি আসনে কোনও ভোটগ্রহণ হবে না।
৮. হাওড়া:
- গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ৩ হাজার ১০২টি ।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ৭১৭টি আসনে।
- পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন সংখ্যা ৪৭০টি।
- ভোট হবে না ৯৮টি আসনে।
৯. দক্ষিণ ২৪ পরগনা:
- মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ৬ হাজার ৩৮৩টি।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ১ হাজার ৭৬৭টি আসনে।
- পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসনের সংখ্যা ৯৩৬টি ।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৩৩টি আসনে জয়।
- জেলা পরিষদের মোট আসনের সংখ্যা ৮৫টি।
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮টি আসনে জয়।
অর্থাৎ মোট ৭ হাজার ৫৪২টি আসনের মধ্যে ২ হাজার ০০৮টি আসনে ভোট হবে না এই জেলায়। যা শতাংশের বিচারে ২৬.৬২ শতাংশ।
❤ Support Us