- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- জুন ১৫, ২০২৩
ভোট এক্সপ্রেসের গতি কোন দিকে? নেতৃত্বের আশ্বাসকে কতটা আমল দেবে ময়দানের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ?
গেরুয়া উত্থানের সম্ভাবনা সম্ভবত দূরঅস্ত, লাল ঝড়ের পূর্বাভাসে এখনো সংশয়

♦ পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০২৩ ♦
পঞ্চায়েত ভোটে প্রাথমিক পর্ব শেষ। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দলের, কোন্দলের, এক দলের সঙ্গে আরেক দলের সংঘর্ষ আপাতত বন্ধ। পরিস্থিতি অস্বস্তিকর হলেও মনোনয়ন জমা পড়েছে ১ লক্ষেরও বেশি। মনোনয়নের বহর দেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, বিরোধীরা বাধা দেওয়ার কথা বলছেন বটে, তাঁদের অভিযোগ সত্য হলে এত সংখ্যক মনোনয়ন জমা পড়ে কীভাবে। শাসকগোষ্ঠী, বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গ, তার মানে স্বীকার করতে চাইছে না।
বিষয়টি এতটা স্বস্তিজনক নয়। ভাঙড় থেকে ক্যানিং, ডোমকল, মুর্শিদাবাদের অন্যত্র ব্যাপক হাঙ্গামা হয়েছে। এরকম অবস্থায় মাত্র তিনের মধ্যে লক্ষাধিক মনোনয়ন পেশের ঘটনা অন্তত আশাপ্রদ। তৃণমূল সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন জমা দিয়েছে, ৪৯,৪৫১টি। সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় সারিতে বিজেপি (৪৬,৩০৮)। তৃতীয় বামপন্থীরা (৩৮০৩৯)। চতুর্থ কংগ্রেস।
মনোনয়নকে ঘিরে বামপন্থীদের ঘরোয়া কোন্দল প্রায় নেই। বিবাদ রয়েছে বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেসের ঘরে। শেষ পর্যন্ত ঘরের ঝগড়া ঘরেই মিটবে। বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা মুখ ভার করবেন, তা কি হয়? তৃণস্তরের নির্বাচন এবং রাজ্যটি পশ্চিমবঙ্গ। অন্যান্য রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রায়ই টের পাওয়া যায় না। জেতে প্রধান শাসক গোষ্ঠী। কদাচিৎ ব্যতিক্রম হয়। রক্তপাতের ঘটনাও বিরল। বিধানসভা থেকে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটে বাংলায় রক্তপাত প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। সিপিএম জমানায় প্রথম কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে বিধানসভা ভোট হয়। বামপন্থীদের আধা সেনার প্রয়োগ নিয়ে বিস্তর প্রতিবাদ দেখা দেয়। কেন্দ্র বিরোধীদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামিয়ে ভোট করে, ২০১১ সালে গদিচ্যুত হয়। পরে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াই ভোট হয়।
ভোট না প্রহসন ? বিরোধীরা সব অঞ্চলে প্রার্থী দিতে পারেন নি। ভোটের দিনেও হতাশ হয়ে ফিরতে হয় ভোট কেন্দ্র থেকে। আধা-সেনাহীন ভোটের স্মৃতি তৃণমূলকে ধাওয়া করছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জনজোয়ারের মিছিল থেকে বারবার সতর্ক করে বলেছেন, ভোট প্রয়োগ করতে দিতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেওয়া চলবে না। রাজ্য সরকার এবং রাজভবন এ ব্যাপারে ভিন্নমত প্রকাশ করে নি। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্র ৬১,৬০৬। প্রতি বুথে দুজন করে পুলিশ কর্মী নিয়োগ হলে দরকার অন্তত ১.২৩ লক্ষ পুলিশকর্মীর। বিরোধীদের দাবি মেনে স্পর্শকাতর এলাকায়, আধা সেনা নিয়োগ করার সিদ্ধান্তে যে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আপত্তি, সেখানে কিন্তু অন্যান্য এলাকায় ভোটের আগে-পরে বেহাল পরিস্থিতি তৈরি হবে না— তার নিশ্চয়তা কোথায়?
প্রশাসন প্রশাসনের জায়গায় আছে। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিকদের ক্ষমতামত্ততা নিয়ন্ত্রণ করবেন মুখ্যমন্ত্রী, তৃণমূলে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য নেতারা— কিংবা বিরোধীদের নেতৃত্ব নিয়মের ভোটতন্ত্রকে গুরুত্ব দেবে। কিন্তু ক্ষমতাধর ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং উস্কানি দিচ্ছে। লাল, গেরুয়া, সবুজ ও তেরঙ্গার হুল্লোড়কে, তাঁদের আয়ত্তে নিয়ে আসা কি এতই সহজ ? বাংলার কংগ্রেস-উত্তর রাজনীতিতে কয়েকবছর হিংসাহীন ভোট হয়েছে। পরে ক্ষমতা বদল আর ক্ষমতা দখলের নামে ওই স্থিতি বদলে যায়। হিংসা ঝাঁপিয়ে পড়ে। হিংসা থেকে হিংসার জন্ম হচ্ছে। সস্তা দামের লাঠি, সস্তা বোমা মজুত করে রেখেছে, বিপরীত দিকে কঠোর, নিয়মনিষ্ঠ গেরুয়া ও লাল বাহিনীও মারকে লেঙ্গে দর্প নিয়ে প্রস্তুত। এরকম আবহে শান্তিপ্রিয় ভোট কতটা সম্ভব, বল মুশকিল। হ্যাঁ শান্তিতে ভোট হলে, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটকে রাজ্যের এক্তিয়ারে অবাধভাবে ছেড়ে দিলে, শহরের উপকণ্ঠ থেকে দূরস্থিত গ্রামীন স্তরের নিয়ন্ত্রক রাজনীতির চেহারা খানিকটা বদলে যাওয়া অসম্ভব নয়। বাতাসে ফিসফাস বইছে।চায়ের দোকানের সান্ধ্য আড্ডা ভরে উঠছে তরজায়। সংবাদ মাধ্যমের তথাকথিত অমুকপন্থী,তমুকপন্থীদের কাঙ্খিত হিসেব-নিকেশকে ধুলিসাৎ করে ভেতরের রূপ দেখাবে মামলু কাতুল বঙ্গলদের রাজ্য।
❤ Support Us