- প্রচ্ছদ রচনা
- জুন ১, ২০২২
শিক্ষিকা হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় কাশ্মিরী পন্ডিতরা। উপত্যাকায় উত্তেজনা বাড়ছে । বর্ষায় সন্ত্রাসের রূপান্তরের আশঙ্কা।

কাশ্মীরে শিক্ষিকা খুন। প্রতিবাদে রাস্তায় পন্ডিতরা। ক্ষুদ্ধ মেহবুবার প্রশ্ন, কেন্দ্র এখনও কি বলবে কাশ্মীর স্বাভাবিক? মঙ্গলবার সকালে কুলগ্রামের স্কুলে ঢুকে জঙ্গিরা গুলি চালিয়ে খুন করল একজন শিক্ষিকাকে। বয়স ৩৬। নাম রজনী বালা। জম্মুর সাম্বা জেলার বাসিন্দা। সম্প্রতি চাকরি পেয়েছেন এবং গোপালপুরার একটি স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। মহ্গলবার সকাল ১০ টায় একদল জঙ্গি স্কুলে ঢুকে গুলিতে তাঁকে ঝাঁঝরা করে দেয়।
কয়েকদিন আগে বদগ্রাম জেলায় নিহত হয়েছিলেন সরকারি কর্মী রাহুল ভাট। এই নিয়ে সম্প্রতি দুইজন পন্ডিত উপত্যকায় পর পর সন্ত্রাসের বলি হয়েছেন। সরকারি কর্মী হত্যার জন্য সরাসরি কেন্দ্রকে দায়ি করেছেন কাশ্মীরি পন্ডিতরা । এবার শিক্ষিকা হত্যার অভিযোগ নিয়ে তাঁরা রাস্তায় নামলেন। নিহত শিক্ষিকা ছিলেন নিহত সরকারী কর্মী রাহুল ভাট-এর মাসি । রাহুলের বাবা তাঁর শ্যালিকা হত্যার পর বলেছেন, বেছে বেছে কাশ্মীরিদের হত্যা করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে আমার শ্যালিকা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। বাস্তবে তাই ঘটল। শিক্ষিকা রজনী বালার হত্যার পর কাশ্মীরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
ওমর অবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতি
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, ঘৃণা ঘটনা । টার্গেট করে কাশ্মীরিদের খুন করা হচ্ছে।কশ্মীরিরা সাধারণত ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর ভোটার । জম্মুতে তাঁরা আবার বিজেপির সমর্থক । পর পর পন্ডিত হত্যায় এনসিপির উদ্বেগ বেড়েছে কিন্তু বিজেপি ফায়দা তোলার চেষ্টা করবে।বিধানসভা কেন্দ্রের পুনবিন্যাসে কাশ্মিরী পণ্ডিতদের কী উপকার হবে, জানা নেই । তাঁদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। বাড়ছে রুটি-রুজির সঙ্কট। এ সব তথ্য সর্বজনবিদিত। কয়েকদিন আগে আরম্ভ বিশ্লেষণাত্মক ভঙ্গিতে বলে ছিল, বর্ষার শুরুতে বিশেষ করে অমরনাথ তীর্থ যাত্রার আগে উপত্যকায় জঙ্গিদের সন্ত্রাস বাড়তে পারে। এই অনুমান ক্রমশ সত্যের দিকে এগোচ্ছে। কিছুদিন আগেই জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঝরা হয়ে যান জনপ্রিয় টিভি তারকা আমরিন ভাট। তাঁর মৃত্যুতেও অসন্তোষের ব্যপ্তি দেখা দেয়।
কাশ্মীরি পন্ডিত হত্যার প্রতিবাদে কাশ্মীরের রাস্তায় মিছিল পন্ডিত সম্প্রদায়ে ।
প্রতিটি ঘটনাই কি প্রমাণ করছে না, কাশ্মীর তলে তলে অসন্তুষ্ট । বাইরে অসন্তোষের আচমকা প্রকাশ ঘটছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক হাওয়া বদলের পরেও ক্রুদ্ধ কাশ্মীর কাশ্মীরেই আছে। দিক বদলের চিহ্ন নেই। নতুন শাসকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায় নি। পুরনো খাঁচা থেকে বেরিয়ে আরেক খাঁচায় ঢুকছে, প্রায়ই খাঁচার বাইরে এসে উসকানি আর হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। আমরা আগেও একাধিকবার বলেছি, আবার বলছি—কাশ্মীরিরাই কাশ্মীর সমস্যার প্রধান স্টেক হোল্ডার। তাঁদের বাদ দিয়ে সমস্যার সমাধান অসম্ভব। বিষয়টি নিয়ে পাক-ভারতের যে কোনও আলোচনায় তাঁদের ডাকতে হবে। এরকম বাস্তবিক পদক্ষেপ জরুরি। সন্ত্রাসের মদতদাতা বলে অভিযুক্ত পাকিস্তানকে জনিয়ে দেওয়াও জরুরি যে, গোটা বিশ্ব স্বীকার করে নিয়েছে, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ভারত ৩৭০ ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। অবিভক্ত কাশ্মীর নিয়েই কাশ্মীরের পন্ডিত-অপন্ডিত সকলেই একসঙ্গে থাকতে চায়। কাশ্মিরিয়ত তাঁদের গর্ব। সেকুলার গণতান্ত্রিক ভারত থেকে নিজেদের সত্ত্বাকে বিচ্ছিন্ন করার স্বপ্ন দেখেনি। যে স্বপ্ন অবাস্তব। ভিত্তিহীন এবং দৃষ্টিহীন। এ জন্যই শেখ আব্দুলার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল কনফারেন্স, গান্ধীজির কংগ্রেস এবং পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর পূর্বপুরুষের স্বপ্নভূমি মহম্মদ আলি জিন্নাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয় । কাশ্মীরি ভূখণ্ড রক্ষায় তিন বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। আজও তার রক্তাক্ত হূদয়ে, রক্তাক্ত সংগ্রাম অব্যাহত। কাশ্মীরে সন্ত্রাস নির্মূল করতে হলে তার অর্থনৈতিক রূপান্তর দরকার। জরুরি দিল্লি শাসকের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এবং দুর্নিতীমুক্ত কাশ্মির গড়তে নবীন নেতৃত্বের সন্ধান।
❤ Support Us