Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩

দৃষ্টান্তহীন ঘটনা।গণতন্ত্রে কালো হাতের থাবা। সাসপেন্ড আরো ৪৯ সাংসদ। গণতন্ত্রের মূত্যু, ঐক্যকন্ঠে বললেন বিরোধীরা

প্রতিবাদে মুখরিত সংসদ প্রাঙ্গন।দেশজুড়ে বিক্ষোভের সম্ভাবনা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
দৃষ্টান্তহীন ঘটনা।গণতন্ত্রে কালো হাতের থাবা। সাসপেন্ড আরো ৪৯ সাংসদ। গণতন্ত্রের মূত্যু, ঐক্যকন্ঠে বললেন বিরোধীরা

পৃথীবির সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা ঘটল ভারতীয় সংসদে।  তিনদিনে মোট ১৪১ জন বিরোধী সাংসদকে সংসদ থেকে বহিস্কার করা হল। সারা বিশ্বে এমন ঘটনা ঘটেনি এর আগে। ভারতে তো নয়ই। এই ঘটনাকে নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র বললেও অত্যুক্তি হয় না। গণতন্ত্র সুরক্ষায় এই পরিস্থিতিতে শুধু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবাদ করলেই হবে না, সাধারণ মানুষকেও এখন প্রতিবাদ করতে হবে, এই অগণতান্ত্রিক কাজের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে।

শাসকদলের এই কাজকে বিরোধীরা গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ বলে সমালোচনা করছে। এই স্বর আমজনতার মধ্যেও পৌঁছেছে, কারণ, ভারতের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এই বিপুল সংখ্যক সাংসদকে এর আগে কখনও সংসদ থেকে বহিস্কার করেনি দেশের শাসক দল। ইন্দিরা গদন্ধির মৃত্যুর পর সংসদ থেকে ৬৫ জন সাংসদকে বহিস্কার করা হয়েছিল, সেটাই ছিল সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সাংসদকে সংসদ থেকে বহিস্কারের ঘটনা। তবে নরেন্দ্র মোদি সরকারের নেতৃবাধীন সংসদ বৃহস্পতি,শুক্র ও সোম এই তিনদিনে মোট ১৪১ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করে সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেল। এই ১৪১ জন সাংসদকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিতে দেওয়া হবে না। এই ১৪১ জন সাংসদের ত্রুটি তাঁরা, স্মোক বম্ব কাণ্ডে বিরোধীরা সংসদের উভয় কক্ষে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন। বিরোধী সাংসদরা বলেন, সংসদে স্মোক বম্ব কাণ্ড নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সাক্ষাৎকার দিতে পারেন অথচ কেন সংসদে এই নিয়ে বিবৃতি দেবেন না? এদিকে লোকসভার স্পিকার ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বিরোধী দলের সাংসদদের এই দাবিকে অসাংবিধানিক ও বিধি লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে তাঁদের সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করে দিয়েছেন। এই ঘটনায় সারা দেশ জুড়ে বিরোধীরা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। সরব হয়েছেন সাধারণ মানুষ। শাসকের আইন চলছে দেশে, কন্ঠরোধ করা হচ্ছে বিরোধীদের,এটাই বলছেন বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “এটা গণতন্ত্রের মকারি হচ্ছে। সবাইকে সাসপেন্ড করে দিচ্ছে। এটা স্বৈরাচার।”

মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশন শুরু থেকেই উত্তাল হয়। বিরোধী সাংসদরা সংসদে মোদি,শাহর বিবৃতির দাবিতে তীব্র প্রতিবাদে সরব হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ১২টা পর্যন্ত লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়। ১২টার পর সংসদে অধিবেশন শুরু হলে বিরোধীরা ফের সংসদে স্মোক বম্ব কাণ্ডে মোদি,শাহর বিবৃতির দাবিতে সংসদ উত্তাল করে তোলেন। তখন ফের লোকসভার আরও ৪৯ জন বিরোধী সাংসদকে সাপেন্ড করা হয়। এর মধ্যে ফারুক আবদুল্লা, মনীশ তিওয়ারি, শশী থারুর, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালা রায়ের মতো রাজনৈতিক নেতানেত্রী ও সাংসদ আছেন।

মঙ্গলবার সংসদে অধিবেশন শুরুর সময় থেকেই প্রধানমন্ত্রীর ছবি নিয়ে সংসদে স্মোক বম্ব হামলার প্রতিবাদ জানাতে থাকেন বিরোধীরা। এই সময় লোকসভার অধ্যক্ষ বিরোধী সাংসদদের প্রতিবাদ করতে নিষেধ করেন। সভায় তুমুল হট্টোগোল শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার ৪৯ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়। এই নিয়ে বৃহস্পতি, শুক্র ও সোমবার মিলিয়ে মোট তিনদিনে ১৪১ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হল।

বিরোধী সাংসদরা বলছেন, সংসদের ইতিহাসে এতোবড় নৈরাজ্য সংসদে হয়নি।

কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, সংসদ বিরোধীদের বলার জায়গা। সেই অধিকার খর্ব করছে স্বৈরাচরী নরেন্দ্র মোদি সরকার। প্রথম দিন ১৪, দ্বিতীয় দিন ৭৮ জন ও তৃতীয় দিন ৪৯ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হল।”
দুপুর ২টো পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন মুলতুবি করা হয়েছে। এই ১৪১ জন বিরোধী ও সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের বাকি দিনগুলিতে সংসদে উপস্থিত হতে পারবেন না।

বহিস্কৃত কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন, “এই সরকার পুলিশ রাজ চালাচ্ছে।”

সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “স্বৈরাচার চালাচ্ছে মোদি সরকার। বিরোধীদের কন্ঠরোধ করতে এই সরকার মরিয়া।”
ফারুক আবদুল্লা বলেন,”ওদের হাতে ক্ষমতা, তাই ওরা যা খুশি তাই করছে।” শশী থারুর বলেন, “গণতন্গ্রকে ধ্বংস করার জন্য যা প্রয়োজন তাই করছে এই সরকার। সংসদ বিরোধীদের কথা বলার জায়গা। অথচ এখানে শাসকদল বিরোধীদের কন্ঠরোধ করছে। গণতন্ত্রকে চূড়ান্ত অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”

এদিকে সংসদের সিঁড়িতে বহিস্কৃত সাংসদরা বিক্ষোভ অবস্থানে বসেছেন। এদিন বহিস্কৃত সাংসদরা মক রাজ্যসভা পরিচালনা করেন। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের মিমিক্রি করতে থাকেন। রাহুল গান্ধিকে কল্যাণের মিমিক্রির ভিডিও করতে দেখা যায়।

এদিকে বিরোধীদের মক রাজ্যসভা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় বলেন, “রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে ভ্যাঙানো হচ্ছে, বিরোধীরা কোনও সংসদীয় নিয়ম মানছেন না।” অধীর রঞ্জন চৌধুরী সোমবার বলেছিলেন, “সাংসদদের সাসপেন্ড করায় সেঞ্চুটি করবেন নরেন্দ্র মোদির সরকার।” মঙ্গলবার সেটাই হল।

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পাঁচবার জিতেছি লোকসভায়। এই প্রথমবার সাসপেন্ড হলাম। গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করছে। এটা একটা কালা দিন।আমার পাশে বসেন ফারুক আবদুলা। আমার পর সাসপেনশনের তালিকায় যখন তাঁর নাম বলা হল তখন তিনি বিস্মিত হয়ে যান। প্রহ্লাদ যোশী বলেছেন আমরা প্লাকার্ড নিয়ে চিৎকার করেছি। আমরা বলতে চেয়েছিলাম। বলতে দেওয়া হল না। আজ সংসদে অমিত শাহর থাকার কথা। তাঁর কাছে আমরা সংসদে স্মোক বম্ব হামলায় বিবৃতি দাবি করেছিলাম। তাই সংসদে অমিত শাহকে নিরাপদ করতে বিরোধী সাংসদদের বহিস্কার করা হল। বিভাজন করতে চাইছে বিজেপি। তাঁরা রামমন্দির, লক্ষ কন্ঠে গীতাপাঠ করে দেশে বিভাজন সৃষ্টি করছে।”
লোকসভার শীতকালীন অধিবেশন চলবে ২২ তারিখ পর্যন্ত, পেশ হবে মোদি সরকারের শেষ ভোট অন অ্যাকাউন্ট, তবে তা হবে প্রায় বিরোধীশূন্য সংসদে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!