Advertisement
  • দে । শ
  • মে ১২, ২০২৪

নিষিদ্ধ চটি-জুতো-ছাতা, লেখা হবে শুধুই লালে। ফি বৈশাখে আজব এ গ্রাম

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
নিষিদ্ধ চটি-জুতো-ছাতা, লেখা হবে শুধুই লালে। ফি বৈশাখে আজব এ গ্রাম

মাসভর হাজারো কৃচ্ছ্রসাধন। মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে। বৈশাখ মাসজুড়ে। বৈশাখ মাস শেষ এলে গ্রামবাসীদের নানা কষ্টজনক রীতিতে ইতি পড়ে। রীতিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, বৈশাখের দাবদাহে রাস্তায় পা রাখাই দায় হলেও মাসভর চটিজুতোয় পা গলানোর জো নেই ১৮ পাড়ার ক্ষীরগ্রামের বাসিন্দাদের। কারণ, গ্রামের আরাধ্যা দেবী যোগাদ্যার হুকুম। ৫১ পীঠের অন্যতম এই ক্ষীরগ্রামে সতীর ডান পায়ের আঙুল পড়েছিল বলে কথিত। এই গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী যোগাদ্যার ‘হুকুমে’ পয়লা বৈশাখ থেকে সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত গ্রামের আট থেকে আশি সকলেই খালি পায়ে হাঁটেন। বাইরে যেতে হলে ব্যাগে চটি-জুতো ভরে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত গিয়ে তবে চটিজুতো পরে বাসে চড়েন। শুধু তাই? রোদের তেজ যতই হোক, এই মাসটা গ্রামের কোনও বাসিন্দার ছাতা ব্যবহারেরও হুকুম নেই। কিছু লিখতে গেলে একমাত্র লাল কালি ব্যবহার করতে হবে। অন্য কোনও রঙের কালি ব্যবহার করা যাবে না। এমনকী দেবী যোগাদ্যাকে শ্রদ্ধা জানাতে গোটা বৈশাখ মাসজুড়ে কেউ জমিতে লাঙল দেন না। মাসকাবারের দিন যোগাদ্যা মন্দিরে বিশেষ হাল-লাঙল পুজো হয়। তারপর জমিতে চাষ দেওয়ার সম্মতি মেলে কৃষকদের।

বৈশাখ মাসটা আরও বহু নিয়মের নিগড়ে বাঁধা সতীপীঠ ক্ষীরগ্রাম। পুরো মাসটা প্রদীপ জ্বালানোর জন্য সলতে পাকানো যাবে না। এমনকী এই মাসে গোটা গ্রামে কোনও সন্তানসম্ভবা নারীকে রাখা যাবে না। এমনই সব আজব আইনের উৎপত্তির ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারলেন না। যোগাদ্যা পুজো কমিটির সদস্য বরুণ চক্রবর্তী বা এলাকার বাসিন্দা অরিন্দম মণ্ডলদের কথায়, ‘কবে থেকে কীভাবে এই নিয়ম চালু হয়েছিল কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। দেবী যোগাদ্যার প্রতি সম্মান জানাতেই বছরের পর বছর ধরে এইসব কঠোর নিয়ম গ্রামের মানুষজন হাসিমুখে মেনে চলেন।’ গ্রামের মানুষজন বিশ্বাস করেন, নিয়মগুলো না মানলে দেবী ক্ষুণ্ণ হবেন। সংসারের ক্ষতি হবে। যোগাদ্যা হল পাথরের মহিষমর্দিনী মূর্তি। বছরভর গ্রামের প্রান্তের বিশাল ক্ষীরদিঘিতে চোবানো থাকে। বৈশাখের সংক্রান্তিতে একদিনের জন্য দেবীকে জল থেকে তোলা হয়। অন্ত্যজ শ্রেণীর কোনও বাসিন্দার নররক্তে বেলপাতা রাঙিয়ে সূচনা হয় পুজোর। একসময় এই পুজোর পৃষ্ঠপোষক ছিল বর্ধমানের রাজ পরিবার। ১৩৬৯ বঙ্গাব্দ থেকে এই পুজো পরিচালনার দায়িত্ব গ্রামের ট্রাস্টি বোর্ডের হাতে বর্তায়। তা হলেও আজও প্রথমে রাজপরিবারের দেওয়া পুজো দেবীকে নিবেদন করা হয়। ফি-বছর ২৭শে বৈশাখ যোগাদ্যা মন্দিরের সামনে ‘মহীরাবণ বধের’ অনুষ্ঠান হয়। দীর্ঘদিনের এইসব ‘আজব আইন’ মানার ব্যাপারে গ্রামের নানান জায়গায় চাপা বিদ্রোহ ডানা ছড়াচ্ছে। নিয়ম ভাঙারও নজির মিলছে টুকটাক। তবু গ্রামের সিংহভাগ মানুষ আজও দেবীর ফরমান মানার চেষ্টায় জানকবুল। মুখে কষ্টের জলছাপ সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে বলছেন, ‘একটা মাসতো! দেখতে দেখতেই কেটে যায়।’


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!