- প্রচ্ছদ রচনা
- জানুয়ারি ১১, ২০২২
মানব শরীরে শূকরের হার্ট! আমেরিকায় যুগান্তকারী অস্ত্রোপচার।আশার আলো দেখছে কলকাতার চিকিৎসকমহল
৫৭ বছরের ডেভিড বেনেটের শরীরে এই হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করেছেন সার্জন বার্টলে গ্রিফিথ।

পৃথিবীতে প্রথমবার। জেনেটিক্যালি পরিবর্তন করা শুয়োরের হৃদযন্ত্র আমেরিকার চিকিৎসকরা নিশ্চিন্ত বসিয়ে দিলেন মানুষের শরীরে । গত শুক্রবার এই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে ইউনভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল স্কুলকে । ৫৭ বছরের ডেভিড বেনেটের শরীরে এই হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করেছেন সার্জন বার্টলে গ্রিফিথ। একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন ডেভিড । ডু-অর-ডাই সিচুয়েশন থেকেই ঝুঁকি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । ডেভিড এখন সুস্থ । ফলে চিকিৎসকরা মনে করছেন, অন্য প্রাণীর শরীরের অঙ্গ মানবদেবে প্রতিস্থাপনের ঘটনার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন ।
শূকরের যে হার্টটি অপারেশনে ব্যবহার করা হয়েছে সেটির ১০ টি জিন ‘এডিট’ করা হয়। তিনটে জিনকে ও শূকরের হার্টের মাত্রাতিরিক্ত বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী জিনটিকেও বাদ দেওয়া হয়। এরপর ছ’টা মানুষের জিন প্রবেশ করানো হয় সেই শূকরের ডিএনএতে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১০ টি জিনের অদলবদল। শূকরের হার্টের ১০ টা জিন বদলে আসল কেরামতি দেখিয়েছে ভার্জিনিয়ার ‘রিভিভিকোর’। ওই জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দৌলতেই এই জেনো ট্রান্সপ্লান্ট সম্ভব হয়েছে ।আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন বর্ষশেষের দিন, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর রাতে এই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়ে অনুমতি প্রদান করে।মহম্মদ মইনউদ্দিন নামে এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিনের একটি গবেষণার ফল এই অস্ত্রোপচার। তাঁর মতে সারা পৃথিবীতে অঙ্গদানের অভাবে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। এ মুহূর্তে শুধুমাত্র আমেরিকায় ১ লক্ষ ১১ হাজার মানুষ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রতি বছর গড়ে ৬ হাজার রোগীর মৃত্যু হয় অঙ্গদানের অভাবে। সই কারণেই জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন বা দুই ভিন্ন প্রাণীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের দিকে এগতে চাইছেন চিকিৎসকরা।
কলকাতার চিকিৎসকরা আশায় বুক বাঁধছেন। শূকরের হার্টে ডেভিড বেনেট যদি সুস্থ থাকেন । তাহলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের মোড় ঘুরে যাবে। হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া বহু মানুষের পুনর্জন্ম হবে। এমনই মত ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন চিকিৎসক তাপস রায়চৌধুরীর।কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডা: প্লাবন মুখোপাধ্যায়ের বলেছেন, ‘এটি একটি মাইলস্টোন। এমন ঘটনা কল্পনাতেও অসম্ভব ছিল। ইউনভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল স্কুলকে অনেক অভিনন্দন। আসলে মনুষ্যেতর প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা বহুদিন ধরেই চলছে। সমস্যা হল, ‘রিজেকশান’। এখন দেখার দশ জিনের বদল সেই প্রত্যাখ্যান আটকাতে পারে কি না।এই অত্যন্ত জটিল কাজটি করেছে ‘রিভিভিকোর’ বলে ভার্জিনিয়ার একটি সংস্থা। গত অক্টোবরে এরাই প্রথম শূকরের দেহে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করেছিল। ব্রেন ডেথ হওয়া এক মানব দেহে শূকরের সেই কিডনি সফলভাবে প্রতিস্থাপিতও হয়েছিল। এবার আরও বড় পদক্ষেপ।
❤ Support Us