- স | হ | জ | পা | ঠ
- জুন ১১, ২০২২
বট আর পাকুড় বিয়ে উপলক্ষ্যে বরযাত্রী, যৌতুক, পাত পেড়ে খেলেন ৫০০০ গ্রামবাসী।

মানুষ নয়, বট আর পাকুড় গাছের বিয়েতে খেলেন প্রায় ৫০০০ মানুষ। যৌতুকে দেওয়া হোলো সোনার গহনা। অভিনব বিয়েকে কেন্দ্র করে হুলুস্থুল কান্ড জলপাইগুড়িতে।
জলপাইগুড়ির অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন সেবাগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সন্তোষ শীল। গ্রামের রাস্তার ধারে ২৫ বছর আগে একটি বট গাছ লাগিয়েছিলেন। নিয়ম করে সেই গাছে জল সার দিয়ে লালন পালন করতেন । গাছটি তাঁর স্নেহে তরতর করে বেড়ে ওঠে । এরপর সেই গাছের মধ্যে জন্ম নেয় একটি পাকুড় গাছ । দুটি গাছ এমন ভাবে বাড়তে থাকে । যেন একে অপরের সঙ্গী । এলাকাবাসীদের চোখ এড়ায় নি। অরবিন্দ বাবুকে তাঁরা বলেন—তুই যেভাবে বটগাছ দেখাশোনা করিস, মনে হয় ওটাই তোর মেয়ে । অরিন্দম হেসে সম্মতি দিতেন ।
দীর্ঘ ২৫ বছর পর সেই গাছ যথেষ্ট বড় হয়েছে। এলাকাবাসী এবার সন্তোষ বাবুকে মেয়ের বিয়ের কথা বলেন। রাজি হয়ে যান তিনি । তবে খরচের কথা ভেবে চিন্তিত সন্তোষবাবুকে আশ্বাস দেন গ্রামবাসীরা। বলেন, আমরা সবাই আছি। স্থানীয় ক্লাব ‘ভক্ত সংঘ’ এগিয়ে আসে । গ্রামের মানুষে প্রত্যেকেই নিজেদের সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। খবর চাউর হতেই পাত্র পক্ষ হিসেবে রাজি হয়ে যান গ্রামেরই ঝন্টু ঘোষ। ব্যস, শুভস্য শীঘ্রম বলে শুরু হয় তোড়জোড়। স্থানীয় পুরোহিত মানিক ব্যানার্জী উপস্থিতিতে ৯ জুন বিয়ে সব আচার অনুষ্ঠান মেনে বট আর পাকুড় গাঁটছড়া বাঁধা হয়। কয়েকদিন ধরে নাওয়া খাওয়া ভুলে বাজার করে এলাকার মানুষ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় সমস্ত আচার অনুষ্ঠান। হলুদ কোটা। এরপর কোটা হলুদে তেল সিঁদুর গাছে মাখিয়ে গাছকে স্নান করাবার পর সকালে বৃদ্ধির মাধ্যমে পুরোহিত বিয়ের কাজ শুরু করেন। সন্ধ্যা নামতেই আসে বরযাত্রী। লাইট প্যান্ডেলে ব্যান্ড বাজিয়ে তাদের বরন করে শুরু হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। পরে কন্যাদানের মাধ্যমে শেষ হয় বিয়ে। বিয়ে উপলক্ষে বিশাল ভোজের আয়োজন করা হয়। এদিন মেনু ছিলো ভাত, ডাল, ভাজা, পটলের ডালনা, পনির কারি, চাটনি, মিষ্টি ইত্যাদি। অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ।
কনের বাবা সন্তোষ শীল বলেন বিয়ে উপলক্ষে তাঁদের গ্রামবাসীরা আগের রাতে গঙ্গা নিমন্ত্রণ করে। আজ সকাল থেকে হলুদ কোটা সহ বিয়ের সব নিয়ম পালন করা হয়। রাতে বরযাত্রী আসে এবং তিনি কন্যাদান করেন। সকলের সাহায্যেই তিনি তাঁর কন্যা বটকে পাত্তস্থ করতে পেরে খুশি। আর পাকুড় অর্থাৎ পাত্রের বাবা ঝন্টু ঘোষ বলেন, ছেলের বিয়ে দিলাম। খুব আনন্দ লাগছে। বটের মা কৃষ্ণা শীল বলেন, ‘মেয়ের বিয়ে দিলাম। বিয়েতে সোনা সহ যাবতীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে। সবার সাহায্য নিয়ে মেয়েকে পার করলাম।’ পুরোহিত মানিক ব্যানার্জী কথায়, বহু বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু গাছের বিয়ে কোনও দিন দিইনি। এই প্রথম । খুব ভালো লাগছে।’
এলাকাবাসীদের এই কর্মকাণ্ডে উচ্ছ্বসিত পরিবেশবীদরা।সাইন্স এন্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউতের মতে, বট এবং পাকুড়ের বিয়ে আসলে পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা। বট একটা এমন গাছ যে প্রকৃতিকে সবথেকে বেশি রিটার্ন দিয়ে থাকে। দূষণ কমানোর ক্ষমতা সব ধরনের গাছের চেয়ে এই গাছের বেশি। একটা পূর্ণ বয়স্ক বট গাছ সবথেকে বেশি অক্সিজেন দেয়। বটের ফল প্রচুর পাখি এবং পশুরা খেয়ে বেঁচে থাকে। বটের গাছ প্রচুর পশু পাখির থাকার জায়গা করে দেয়। এক কথায় এই গাছ আমাদের প্রকৃতিকে যা রিটার্ন দেয় তা সব কিছুর উর্ধ্বে।
❤ Support Us