- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- অক্টোবর ২৫, ২০২৩
রামমন্দিরের দ্বারোৎঘাটন দিয়েই ২০২৪ এর নির্বাচনে সাফল্য পেতে তৎপর সঙ্ঘ । প্রস্তুতিতে কতটা ঐক্যবদ্ধ বিরোধী “ইন্ডিয়া” জোট ?
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের মুখেই সংঘ পরিবার ও তাদের অনুসারী রাজনৈতিক দল বিজেপি রামমন্দির-এর দ্বারোদ্ঘাটনের কথা একই দিনে ঘোষণা করে দিল। সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত আরএসএস-এর বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ঘোষণা করে দিলেন, “আগামী ২২ জানুয়ারী খুলে যাচ্ছে অযোধ্যায় রামমন্দিরের দরজা।” অন্যদিকে সেই একই দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রামলীলা ময়দানের বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠান থেকে জানিয়ে দিলেন, “আগামী রামনবমী অনুষ্ঠান হবে রামমন্দির থেকে।” এ ভাবেই প্রধানমন্ত্রীও জানুয়ারির ২২ তারিখ, অর্থাৎ মোহন ভাগবত যেদিন রামনবমীর উদ্বোধনের কথা ঘোষণা করেছেন সেই সময়টাকেই রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিন হিসেবে জল্পনা উস্কে দিলেন।
#WATCH | Delhi: Prime Minister Narendra Modi at Dwarka Sector-10 Ram Leela, to attend ‘Ravan Dahan’#Dussehra pic.twitter.com/LTzsJ8zBve
— ANI (@ANI) October 24, 2023
ভারতে আগামী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে রামন্দিরকে সামনে রেখে বিজেপি যে দেশের হিন্ধু ভোট নিজের ঝুলিতে টানতে চেষ্টা করবে তাতে কোনও সংশয় নেই। ২০২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আরএসএস-এর শতবর্ষ পূর্তি। বিজেপির লক্ষ্য, সংঘ পরিবারের শতবর্ষ পূর্তি বর্ষে রামমন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া। আর এই রামমন্দির উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে হিন্দু ভোট সম্বল করে লোকসভা নির্বাচনে জিততে চাইছে বিজেপি। “ভারত মাতা কি জয় “, স্লোগান দিয়ে কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার যে সংঘ পরিবারের জন্ম দিয়েছিলেন, নরেন্দ্র মোদি “জয় শ্রী রাম” স্লোগান দিয়ে সেই সংঘ পরিবারের শতবর্ষে রামমন্দিরের দরজা খুলে দিতে চলেছেন।
এই পরিস্থিতিতে দেশের বিজেপি বিরোধী জোট “ইন্ডিয়া” কি ভাবে বিজেপির এই গতিকে প্রতিহত করতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা দেশে বিজেপি বিরোধিতার প্রধান মুখ হলেও লোকসভা আসনে তৃণমূলের ৪২টি বাংলার আসনেই লড়ার শক্তি আছে। তাও আবার এই ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে আবার বাম, কংগ্রেস-এর মতো “ইন্ডিয়া” জোটের বন্ধু শক্তির সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই অনিবার্য। তাই বলা যায় বাংলায় এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা না হওয়ার ফলে ধরেই নেওয়া যায় বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপির সঙ্গে বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে চতুর্মুখি লড়াই হতে চলেছে। একই ভাবে দিল্লি, পাঞ্জাব, কেরলেও কংগ্রেস, আপ, সিপিএম পর্যায়ক্রমে পরস্পরের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তাই বলা যায় জোটসঙ্গীদের এই অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের ছবিকে স্পষ্ট করে প্রচারে এনে বিজেপি তার কৌশলী রাজনীতিতে লোকসভা নির্বাচনে জিতে বাজি মাত করার বাড়তি সুযোগ আগাম পেয়েই আছে। তার উপর ২২ জানুয়ারী রামমন্দির খুলে দেওয়া হলে সারা দেশ জুড়ে যে হিন্দুত্বের হাওয়া বইবে সেই হাওয়ায় বিজেপির নৌকো লোকসভা নির্বাচনের রাজনীতির সমুদ্রে যে যথেষ্ট গতিতেই বয়ে যাবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
ভারত এমন একটা দেশ যে দেশে এখনও জাতপাত,ধর্ম, সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভোট হয়। আন্তর্জাতিক খিদে সূচকের তালিকায় ভারত কতটা পিছনের সারিতে রয়েছে তা নিয়ে ভারতবাসীর বিশেষ মাথাব্যথা নেই। তার চাইতে ভারতের জনগণ বেশি নিজেকে মগ্ন রেখেছে রামমন্দির নির্মাণ ও উদ্বোধনের সময় সূচিতে। এটা হাটে-বাজারে,মাঠে-ময়দানে কান পাতলেই শোনা যায়। অর্থনীতি, বেকারি, উন্নয়নে ভারত মুখে মুখে এগিয়ে চলছে যতটা বাস্তবে অগ্রগতি ততোটা নয়, সেটা বোঝার ক্ষমতা সমগ্র ভারতবাসীর যেমন হয়নি তেমন রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ছোট ছোট বিষয় নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে দেশের, দেশের মানুষের আসল সমস্যাটা আড়াল করেই চলেছে। আর এই সুযোগটাকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগিয়ে দেশের বেশিরভাগ মানুষ যেমন চান তেমন ভাবে ধর্মের নামে রাজনীতি করে বিজেপি তার বিজয়রথের গতি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে স্থির রয়েছে। এই দিক থেকে দেখতে হলে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন দেশের এ পর্যন্ত হওয়া লোকসভা নির্বাচনগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওই যে রাহুল গান্ধি বলেছিলেন, “ইন্ডিয়া” একটি ধারণা, সেই ধারণাটা হচ্ছে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের, এই বৈচিত্র রক্ষায় রাহুল গান্ধি ও তাঁর সহযোগী দলের দায়িত্ব এখন অনেক। এখন ভাববার সময় এসেছে ভারতের জন্য কোন রাজনীতি সঠিক, তুষ্টিকরণের না ভারতের সংবিধান রক্ষার, ঐক্য-সংহতি রক্ষার। তাই “ইন্ডিয়া” জোটের সঙ্গীদেরএখন নিজেদের মধ্যে সমস্ত বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপিকে প্রতিহত করতে হবে, যেটা ভারতীয় রাজনীতিতে এবং “ইন্ডিয়া” জোট গঠনের প্রাথমিক ধারণায় কোনও যাবেই সম্ভব নয়। এদিকে বিজেপি কিন্তু চাইবে তার মতো করে দেশে হিন্দুত্বের ধ্বজা ওড়াতে, এটা তারা সততার সঙ্গেই ঘোষণা করে চলেছে যে তারা হিন্দু রাষ্ট্র চায়। তাই তাদের এই দাবি এক দেশ, এক আইন প্রণয়নের মধ্যদিয়ে তারা সফল করার দিকে যে এগিয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। তবে যারা বিজেপির এই হিন্দুত্বের বিরোধিতা করছে তাদের প্রমাণ করতে হবে তাঁরা নিজেদের শপথের কাছে, ঐক্যের কাছে সৎ। না হলে সংঘ পরিবারের ১০০ বছর পূর্তিতে সংঘ তাদের লক্ষ্যেই পৌঁছে যাবেই। কিন্তু এই কঠিন লড়াই লড়ার শক্তি কি “ইন্ডিয়া”-জোটের আছে? তারা কি নিজেরা ঐক্যবদ্ধ? নিজেদের মধ্যের লড়াই সরিয়ে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে যৌথ লড়াই সারা দেশে দিতে পারবে? প্রশ্ন সেটাই।
❤ Support Us