- এই মুহূর্তে দে । শ
- ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
অযোধ্যার রামপথে রোড শো, রামের নামেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু মোদির
২০১৪ ও ২০২৩-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের অভিমুখ সেই হিন্দুত্বেই আটকে রইল। ২০১৪ তে অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির স্লোগান দিয়ে, লোকসভা নির্বাচনে জিতে ভারতের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। তারপর নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যদিয়ে অবশেষে ভারতের শীর্ষ আদালতের রায়কে সঙ্গে নিয়ে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয়বারের সরকার অযোধ্যায় রাম জন্মভূমিতে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছে গেল। তাই আজ আর বিজেপিকে কেউ দোষ দিতে পারবে না যে বিজেপি জোর করে অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি করল। বরং এটাই বলা হচ্ছে, ৫০০ বছরের দাবিকে সফল করে নরেন্দ্র মোদিই পারলেন অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি করতে, এটা বিজেপির দাবি, এই দাবি অমূলক নয়। আর এই রামমন্দির উদ্বোধনের প্রারম্ভিক অনুষ্ঠান হিসাবে ২৯ ডিসেম্বর অযোধ্যায় রোড শো করলেন নরেন্দ্র মোদি, অযোধ্যার ধর্মপথ, রামপথ, হনুমানগড়ি হয়ে অযোধ্যাধাম রেলওয়ে জংশন স্টেশনের দিকে এগিয়ে গেল নরেন্দ্র মোদির ১৪ কিলোমিটারের দীর্ঘ রোড শো। নরেন্দ্র মোদি যখন রোড শো করছেন, তখন তাঁকে অভিবাদন জানাবার জন্য রাস্তার দুপাশে অগনিত মানুষ, সাধু-সন্ত পুষ্পবৃষ্টি করছিলেন, যা বর্ষিত হচ্ছিল নরেন্দ্র মোদির উপর। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই রোড শো তে। পুষ্পবৃষ্টি হল তাঁর উপরও। বলা যায় অযোধ্যাবাসী রামের আগে নরেন্দ্র মোদিকেই রাম হিসাবে বরণ করে নিলেন।
সংঘ পরিবারের দীর্ঘদিনের দাবি অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ করা। ১৯৯২ সালের, ৬ ডিসেম্বর লালকৃষ্ণ আদবানী, মুরলী মনোহর যোশীর নেতৃত্বে করসেবকরা বাবরি মসজিদ ভেঙে যে সংখ্যালঘু বিদ্বেষের অপবাদ মাথায় নিয়েছিলেন, কৌশলে নরেন্দ্র মোদি সেই অপবাদের ছিটেফোঁটা গায়ে না মেখে, আইনি পথে, শীর্ষ আদালতের নির্দেশে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করলেন। ১৯২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২৪ সালে ১০০ বছরে পা রাখছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। বলা যায় নরেন্দ্র মোদি একজন সংঘ সেবক হিসাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ১০০ বছরে সংঘকে রামমন্দির উপহার দিলেন।
শনিবার নরেন্দ্র মোদির রোড শো যখন অযোধ্যার বিভিন্ন পথ অতিক্রম করছে, তখন রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে অগনিত জনতা বলছেন, ৫০০ বছর ধরে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দাবি সফল করে রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করলেন নরেন্দ্র মোদি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অযোধ্যার সাধারণ মানুষ, সাধু-সন্তরা যখন নরেন্দ্র মোদিকে পুরানের চরিত্র রামচন্দ্রর সঙ্গে তুলনা করছে, তখন রামপথ বেয়ে রামমন্দিরের সামন দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় এগিয়ে চলেছে, অগণিত, অসংখ্য মানুষের দিকে হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রী একদিকে যেমন অভিবাদন গ্রহণ করেছেন অন্যদিকে তেমন শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ধর্মপথ, সূর্যস্তম্ভ, হনুমানগড়ি, রামপথ পার করে ১৪ কিলোমিটার পথ রোড শো করে পরিক্রমা করেন নরেন্দ্র মোদি। রোড শো শেষে মহর্ষি বাল্মিকী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অযোধ্যা ধাম রেলওয়ে জংশন উদ্বোধন করলেন। অমৃত ভারত, বন্দে ভারত ৮টি ট্রেন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী, এর মধ্যে একটি অমৃত ভারত ট্রেননমালদা থেকে বেঙ্গালুরুর মধ্যে চলবে। রেলযাত্রা শুরু করাবার আগে প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে উঠলেন, টিটিইদের সঙ্গে কথা বলে সব বুঝে নিলেন, তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে অযোধ্যার মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তারপর প্রধানমন্ত্রী সবুজ পতাকা নাড়িয়ে নতুন বন্দে ভারত ও অমৃত ভারত ট্রেনের যাত্রা শুরু করিয়ে দিলেন। মোট ৮টি ট্রেনের ফ্ল্যাগ অফ করেন প্রধানমন্ত্রী।
নরেন্দ্র মোদির অযোধ্যায় এই ১৪ কিলোমিটার রোড শো তাঁকে ২০২৪ -র লোকসভা নির্বাচনে জয়ী করে আগামী ৫ বছরের জন্য ভারতের সিংহাসনে বসিয়ে দেবেই, এই দাবি করছে বিজেপি। তবে যাঁরা বিজেপির এই দাবি প্রকাশ্যে মানতে পারছেন না, মমে মমে মানেন, তাঁরা অবশ্যই বিজেপি বিরোধীগোষ্ঠী, তাঁরা চাইছে কৌশলে বিজেপির এই প্রচারের বিরুদ্ধে মানুষকে গুলিয়ে দেওয়ার জন্য পাল্টা প্রচার করতে।
অযোধ্যায় নরেন্দ্র মোদির এই ১৪ কিলোমিটার রোড শো -এর সাক্ষী থাকলেন অগনিত সাধারণ মানুষ, সাধু-সন্ত, সন্যাসী। তাঁরা গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি, গাঁদা ফুলের পাঁপড়ি বর্ষণ করলেন তাঁদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। অযোধ্যার হৃৎস্পন্দনের সঙ্গে যেন ভারতের হৃদস্পন্দনের একটা সমন্বয় ঘটিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদি, আগামী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এর চাইতে বড় প্রচার আর কি হতে পারে?
❤ Support Us