- প্রচ্ছদ রচনা
- সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
মানবতাময় বিশ্বায়ন জরুরি। কাউকে পেছনে ফেলে রাখা অন্যায়

• নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি •
যৌথ ভবিষ্যত গড়তে হবে।বিচ্ছিন্নতাকে নির্মূল করতে সবার চিন্তা, সবার চেষ্টা আর অনুশীলনকে গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য।জি২০ শীর্ষ বৈঠক আয়োজন এবং সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেয়ে আমারা বলেছিলাম, প্রতিটি কন্ঠস্বর শুনতে হবে, প্রতিটি দেশের অবদানকে স্বীকার করতে হবে, প্রতিটি দেশের অবদানকে স্বীকার করতে হবে। এসব ভাবনা চিন্তা আর ইতিবাচক প্রচেষ্টাকে জড়ো করে বৈশ্বিক টেবিলকে আরো মজবুত করা প্রয়োজন।
‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ শব্দ দুটির গভীর দর্শনকে বাস্তবায়িত করা জরুরি। এই শব্দযুগলের অর্থ হচ্ছে এই যে, ‘বিশ্ব একটি পরিবার’ ।এটি শুধু দর্শন নয়, চিন্তা নয়, এর ফলিত ধারণায় ছড়িয়ে আছে সর্বাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি। যা আমাদের সর্বজনীন পরিবারকে দেশের সীমানা, ভাষা ও দর্শনসমূহের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে উৎসাহিত করে ।অগ্রগতির দিশা দেখায়। ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ মানবতাময় মঞ্চে পরিণত হয়েছে। তার আহ্বান আজ বিশ্বেরই আহ্বান, তার দৃষ্টিতে বিশ্ব একটি বৃহৎ আর যৌথ পরিবার। ক্ষুদ্রতাকে সে সহ্য করে না। নির্মূল করতে চায়। এক পৃথিবীর সদস্য হিসেবে আমাদের গ্রহের সবাই একত্রিত হচ্ছি। মানবিক সাধনার সঙ্কল্প হয়ে উঠেছে আমাদের বিশ্বাস। এক বিশ্বাস, এক মানুষের অভিপ্রায়ের গুরুত্ব এই সময়ে অনস্বীকার্য। আমরা ক্রমশ পরস্পরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, অভিন্ন অন্তঃসংযুক্তিকে অবলম্বন করছি।
করোনা পরবর্তী পর্বে বিশ্বজুড়ে তিনটি পরিবর্তন আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, বিশ্বের জিডিপি কেন্দ্রীকতাকে মানবিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে স্থানান্তর করা দরকার।দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থাপনার স্থিতিস্থাপকতাকে নির্ভরযোগ্য ভাবতে হবে, বিশ্ব এ সত্য স্বীকার করছে।তৃতীয়ত, বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলির বহুপাক্ষিকতাকে বাড়িয়ে তুলতে সবাই আগ্রহী। এক্ষেত্রে ভারতের সক্রিয় ভূমিকাকে বিশ্ব বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। জি২০-র সভাপতি হিসেবে আমারা অনুঘটকের কাজ করছি।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে বারত ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে জি২০-র সভাপতিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করে।তখনই আমি, লিখেছিলাম, জি২০কে ভরসা করে মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ, দক্ষিণ গোলার্ধের পৃথিবী আর আফ্রিকার প্রান্তিক আকাঙ্খাকে মূল স্রোতে নিয়ে আসার যোগ্য প্রেক্ষাপট গড়ে তোলার প্রয়োজনকে মান্যতা দিতে হবে।২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ১২৫টি দেশ আমাদের নেতৃত্বাধীন শীর্ষ বৈঠকের সাক্ষী হয়ে আছে, তারা শুনেছে ওই সম্মেলনের মর্মকথা। সম্মেলনে ভারতের উদ্যোগ, ভারতের ঐকান্তিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন, যা প্রতিটি উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশ স্বীকার করছে। ইতিপূর্বে জি২০ এত বড়ো অংশগ্রহন কখনো দেখেনি। ভারত আফ্রিকান ইউনিয়নকে সদস্যভূক্ত করতে জোর দেয়। ভারতের দাবিকে সমর্থন করে গোটা বিশ্ব।
জলবায়ু বিষয়ক কর্মকান্ডের আকাঙ্খা, অর্থায়ন আর প্রযুক্তির হস্তান্তরের মধ্যে সামঞ্জস্য গড়ে তুলতে হবে, জীবন-যাপনের প্রয়োজনের সঙ্গে জলবায়ু কেন্দ্রিক কর্মকান্ডের ভারসাম্য রক্ষা করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, অবশ্যই এসব বিষয়ে সমন্বয়ের মসৃণ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। কী করা উচিত, অনুচিত এরকম সংশয়কে এড়িয়ে, সীমাবদ্ধ চিন্তাকে বর্জন করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে মনান্তরকে হেয় করে মতান্তরের পরিসর গড়তে হবে
অনেকেই অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন, এস ডিজির অগ্রগতি পথভ্রষ্ট। অগ্রগতিকে শুদ্ধপথে ফিরিয়ে আনতে, ত্বরান্বিত করতে জি২০-র অ্যাকশন প্ল্যান ভবিষ্যতের দিশারি হয়ে উঠবে, আন্তর্জাতিক মঞ্চটির দিক নির্ণয় করবে।
প্রকৃতির সঙ্গে দিনযাপনের সামঞ্জস্য প্রাচীনকাল থেকে ভারতের অন্যতম আদর্শ। আমরা এক আধুনিক সময়ে বাস করছি, জলবায়ু বিষয়ক কর্মকান্ডে জড়িয়ে আছি, যখন পরিবেশ দূষণ, জলবায়ুর অপব্যবহার জটিল সমস্যার চেহরা নিচ্ছে। জলবায়ুকে দূষণমুক্ত, বিষমুক্ত করার ক্ষেত্রে ভারতের অবদান বিশ্বের দৃষ্টিপাতকে আকৃষ্ট করছে।গ্লোবাল সাউথের বহু দেশ উন্নয়ণের বিভিন্ন স্তরে উপনীত। জলবায়ু বিষয়ক কর্মকান্ডকে পরিপূরক সাধনায় রূপান্তরিত করা আবশ্যিক কর্তব্য। জলবায়ু বিষয়ক কর্মকান্ডের আকাঙ্খা, অর্থায়ন আর প্রযুক্তির হস্তান্তরের মধ্যে সামঞ্জস্য গড়ে তুলতে হবে, জীবন-যাপনের প্রয়োজনের সঙ্গে জলবায়ু কেন্দ্রিক কর্মকান্ডের ভারসাম্য রক্ষা করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, অবশ্যই এসব বিষয়ে সমন্বয়ের মসৃণ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। আমরা বিশ্বাস করি, কী করা উচিত, অনুচিত এরকম সংশয়কে এড়িয়ে, সীমাবদ্ধ চিন্তাকে বর্জন করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়তে হবে, মনান্তরকে হেয় করে মতান্তরের পরিসর গড়তে হবে, গঠনমূলক মনোভাবকে সর্বস্তরে গ্রহণ করতে হবে।এই মুহূর্তে কী কী করণীয়, তা ঠিক করার কর্মসূচি এবং বাস্তবে তার প্রয়োগকে সহজ রাস্তায় নিয়ে যেতে হবে। টেকসই আর স্থিতিশীল ব্লু ইকোনমির জন্য চেন্নাই সম্মেলনে গৃহীত নীতিমালাকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।ভারত মহাসাগরগুলিকে সুস্থ রাখার আহ্বান জানায় ওই বৈঠক।গ্রিন হাইড্রোজেন ইনোভেশন কেন্দ্রগুলিকে বিশুদ্ধ রাখার তাগিদ বাড়ছে। দূষণমুক্ত রাখতে পারলে এসব কেন্দ্রকে ঘিরে বৈশ্বিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উদ্ভব হবে। ২০১৫ সালে ভারত আন্তর্জাতিক সোলার সহযোগিতা প্রকল্পের সূচনা করে। এখন আমরা সার্কুলার ইকোনমির সুযোগ সুবিধার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্বালানির আধুনিকায়নকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এব্যাপারে, জ্বালানির রূপান্তর আর রসদ বদলকে সক্ষম করতে ভারত সক্রিয় সহযোগিতা করবে।জলবায়ু বিষয়ক কর্মকান্ডের গণতন্ত্রীকরণ খুবই জরুরি। এটাই জি২০-এর সঠিক আন্দোলনের সেরা রাস্তা। ব্যক্তি মানুষ যেমন দৈনন্দিন কাজের ভিত্তিতে দীর্ঘ মেয়াদি সিদ্ধান্ত নেয়, যাপনের দিক নির্ণয় করে, স্বাস্থ্যরক্ষার কৌশল গড়ে তোলে, ঠিক তেমনি সর্বগ্রাহ্য নীতি গ্রহন করে জি২০ ব্যক্তিক ও সামাজিক অগ্রগতির রাস্তা দেখাচ্ছে। ভারতের নেতৃত্বের দিক নির্ণয়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যোগ-ব্যায়ম আজ বিশ্বব্যাপী গণ আন্দোলনের চেহারা নিয়েছে। একইভাবে, দূষণমুক্ত পরিবেশের জন্য জীবনধারা বদলে দিচ্ছি। আমাদের সঙ্কল্প আর অভিমুখ দেখে বিশ্ব আলোড়িত। অভিভূত।
ভারতের জনতত্ত্ব, গণতন্ত্র, বৈচিত্র, উন্নয়ন ইত্যাদি অন্যের চোখে দেখা, অন্যের ভাষায় শোনা এক কথা।প্রত্যক্ষভাবে এসবের সাক্ষী হয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের মূল্য সম্পূর্ণ আলাদা। আমি নিশ্চিত, জি২০ সদস্য আর আমন্ত্রিত দেশগুলির প্রতিনিধিরা সরাসরি ভারতের অবদান দেখতে পাবেন, আমাদের হৃদয়ের উষ্ণতা প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবেন।
ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ সবধরণের বিভাজন কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। সহযোগিতার বীজ বপন করতে চাইছে।যা বিশ্বকে পুষ্ট করছে এবং করবে। অনৈক্য নয়, সবরকমের অবিচ্ছেদ্য ঐক্যের নির্মাণ আমাদের স্পষ্ট অভিমুখ। এখানে ক্ষতচিহ্নকে বরদাস্ত করার সুযোগ নেই। বিচ্ছিন্নতার প্রশ্রয় নেই। সে যৌথ পরিবারের সাধনা আর মানবিক ঐক্য নিয়ে বাঁচতে চায়, জেগে থাকতে চায়, অন্যকেও জাগাতে চায়। গড়তে চায় বৃহৎ যৌথ পরিবার। আমি নিশ্চিত, আমরা আমাদের কর্মকান্ড, বিশ্বাস আর অঙ্গীকারের মধ্যে সামঞ্জস্য গড়ে তুলতে সক্ষম।আমাদের যাত্রা অভিন্ন।যাত্রাপথ বহু হলেও গল্তব্য এক আর অবিচ্ছেদ্য।আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে আত্মবিশ্বাসের সংযোগ ছিন্ন হবার নয়।একই মোহনার দিকে স্রোতধারা বইছে। যে গড়ে তুলবে তরঙ্গায়িত সৌন্দর্য্য এবং সমস্ত বিচ্ছিন্নতাকে হটিয়ে বায়ুকে, জলকে, মানুষের মনকে আরো আরো নির্মল করতে থাকবে।
লেখক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারত
❤ Support Us