- প্রচ্ছদ রচনা
- ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২
তিন দিক থেকে রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমন। হামলা রুখতে ইউক্রেন মরিয়া।ভূপততি ৫ রুশ যুদ্ধবিমান। বিধ্বস্ত ইউক্রেনের দুই সেনা কামান্ডের পোস্ট।

সব জল্পনার আর প্ররোচনার অবসান ঘটিয়ে আশঙ্কাই সত্য হয়ে উঠল । ইউক্রেনে প্রায় তিন দিক থেকে ঝাপিয়ে পড়ল রাশিয়া। পুতিনের আদেশের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আকাশপথে এবং স্থলে রুশ সেনার আক্রমন চলছে । ইউক্রেনের নৌঘাটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। রাশিয়ার একটি যুদ্ধ বিমান উড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন সেনারা । পুতিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ইউক্রেন আক্রমনের অনুমোদন পাশ করিয়ে নিয়েছিলেন । সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার ফরমান দিয়েছিলেন বেশ কয়েক দিন আগে। বেলারুশে দুই দেশের যৌথ মহড়া এবং ইউক্রেন সীমান্তে ক্রমাগত সেনা সমাবেশে বোঝাই যাচ্ছিল, মস্কো সরাসরি যুদ্ধের পথে এগোচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত কয়েকদিন ধরে বলে যাচ্ছেন, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমন আসন্ন । ইতিমধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুটি দেশের স্বাধীনতাকে স্বীকূতি দিয়ে বসলেন পুতিন । তখনই তার গোপন কৌশল প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসে। আমেরিকা আর গোটা ইউরোপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে । তারা নানা ধরনের চাপ তৈরি করছিল । তবু কিছুই পরোয়া করেন নি পুতিন । স্থলেও আকাশ পথে ক্রমাগত আক্রমন হানতে শুরু করল রুশ বাহিনী। সামরিক শক্তিতে অপেক্ষাকূত দুর্বল ইউক্রেন কতদিন রাশিয়াকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে ? বিশ্বের দ্বিতীয় বড়ো সামরিক শক্তি রাশিয়া নতুন উদ্যোমে আবার আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালে মস্কো ক্রিমিয়া দখল করেছিল । তখন বিশ্ব তাকে রুখতে পারে নি। অবিভক্ত সোভিয়েত রাশিয়ার পূর্ব চেহারায় ফিরতে চাইছে মস্কো। পুতিন ওই ক্ষমতা মত্ততা ভোলেন নি। তাঁর চোখ গোটা পূর্ব ইউরোপে । বেলারুশ মস্কোর দোসর কিন্তু পোল্যান্ড ও সংলগ্ন অন্যান্য দেশ ন্যাটোর কবলে । রাশিয়া ন্যাটোর প্রভাব রুখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ইউক্রেনের সাম্প্রতিক শাসক ন্যাটোপ্রন্থী । কিন্তু পুতুল মাত্র । দেশের মানুষ অসহায়। ন্যাটো মস্কোর দ্বন্দ্বে গোটা দেশ বলির পাঠা।
ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলনস্কি শঙ্কিত হলেও অভয় দিয়ে যাচ্ছেন দেশবাসীকে। রাশিয়া ইউক্রেন বাহিনীকে আত্মসমর্পন করতে বলেছে। কিন্তু ইউক্রেন সেনারা মরিয়া হয়ে যুদ্ধ চালাচ্ছে। বহু বিদেশী নাগরিক আত্মরক্ষ্মার্থে হাতে অস্ত্র তুল নিয়েছেন। ইউক্রেনবাসীকে জেলনস্কির আশ্বাস ‘ যুদ্ধ থামাবে না। একমাত্র সাধারণ মানুষই আগ্রাসন রুখতে পারেন। পুতিনকে ফোন করে কথা বলতে চেয়েছিলেন, ফোন তোলেননি পুতিন। তিনি বিভিন্ন দেশকে হুমকি দিয়েছেন, অযথা হস্তক্ষেপ নয়, পরিণতি ভালো হবে না ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন—রুশ হামলা প্ররোচনাহীন, অযৌক্তিক। রাশিয়ার আগ্রাসনে নিরীহ মানুষের প্রাণ যাবে। উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করবে বিশ্ব । যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো জোট বেঁধে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সমস্যার সমাধানে অবিলম্বে আলোচনায় বসুন। আজ সকাল থেকেই ইউক্রেন জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেনের তিন দিক থেকে যুদ্ধ জাহাজের উড়াউড়ি আর বিসফোরনের বিকট আওয়াজে সন্ত্রস্ত্র মানুষ নিরাপত্তার খোঁজে দিশেহারা । বহুদিন এরকম রুশ আগ্রাসনের চেহারা দেখা যায় নি। পরিকল্পিত হামলার সম্মুখীন হয়নি ইউক্রেন । রাশিয়া প্রাক-প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে নিরব। ইউক্রেন জানিয়েছে, রুশ হামলায় তাদের নৌসেনার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মিসাইল ও রকেট হানায় বিধ্বস্ত কিয়েভ ও খার্কিভের সেনা কম্যান্ডের পোস্ট । ভূপাতিত রাশিয়ার পাঁচটি যুদ্ধ বিমান ।রাশিয়ান বাহিনীর বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৭ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের পুলিশ। নিখোঁজ ১৬।
প্রসঙ্গত বলা জরুরি, যুদ্ধ ভয়াবহ মোড় নিতে পারে। আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুপ করে বসে থাকবে না। সরাসরি ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ব্যাপক । বাস্তবের সঙ্কেত, আমেরিকা ও ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলি যদি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে চিন চুপ করে বসে থাকবে না। ভারত ও পাকিস্তান নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে । রাশিয়া সংলগ্ন মধ্য এশিয়ার দেশগুলি চাপের মুখে অথবা কৌশলগত কারণে মস্কোকে সমর্থন করবে।
❤ Support Us