- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- মার্চ ২৯, ২০২৩
পঞ্চায়েত ভোট গ্রামে, সভা-মিছিলের বহুমুখী লড়াই মহানগরে ! যানজটে স্তদ্ধ শহর। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে মিছিল বাম-কংগ্রেসের, রেড রোডে ধর্না মুখ্যমন্ত্রীর
শহিদ মিনারের সমাবেশে দৃপ্ত অভিষেক, শ্যামবাজারে শুভেন্দুর আওয়াজে পাল্টা অভিযোগ
সভা, মিছিল, বিক্ষোভ আর ধর্নায় মহানগরের প্রাণকেন্দ্র আজ অচল। আর্থিক বঞ্চনা আর রাজ্যের পাওনার দাবিতে রেড রোডে ধর্না মুখ্যমন্ত্রীর। অদূরে বর্ধিত মহার্ঘ ভাতার দাবিতে মঞ্চ বেঁধে সামিল হলেন সরকারি কর্মীরা। নিয়োগ দুর্নীতি আর ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রীয় প্রতিবাদে বিশাল মিছিলে হাঁটলেন বাম-কংগ্রেসের নেতারা। শ্যাম বাজার মেট্রোর সামনে ‘দুর্নীতি’-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অবস্থান করলেন বিজেপির নেতারা।
কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে রেড রোডে ধর্না মঞ্চে সামিল হয়েছেন মমতা। অনুষ্ঠানে দলীয় প্রতীক ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান রূপে তিনি মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন। তাই ঘাস ফুল চিহ্নের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা রয়েছে । তাঁর মতে, তিনি দ্বৈত দায়িত্ব পালন করছেন, একদিকে তৃণমূল শীর্ষ নেত্রীর ও অন্যদিকে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের। বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি জানিয়েছেন, সরকারি টাকায় কোনো অনুষ্ঠান তিনি করছেন না। দলের তহবিল থেকে মেটানো হচ্ছে সভার খরচ।
তৃণমূলের দলীয় মঞ্চে মন্ত্রীদের উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে। এ ব্যাপারে মমতার যুক্তি, তৃণমূলের সভা হলেও সরকারের প্রতিনিধি রূপে তাঁরা রয়েছেন। সামনে রাখা সংবিধানকে দেখিয়ে বললেন, এ গ্রন্থ তাঁরাই রাখে যাঁরা ভারতের গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা কর, সম্মান করে। ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব, ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষতা, ভারতবর্ষের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য আজকে আমরা এখানে বসেছি। এদিন ওয়াশিং মেশিন নিয়ে এসে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান মমতা। শ্লোগান তোলেন, ‘কালো হল সাদা’। তিনি বলেন, বিজেপিতে গেলেই মুছে যায় দুর্নীতির দাগ।
কয়েক শো মিটার দূরে শহিদ মিনারের পাদদেশে তৃণমূলের ছাত্র যুব দের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার প্রধান আহ্বায়ক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা জানান। তিনি বলেন, বাংলা জুড়ে বিপুল পরিমাণ রাস্তার কাজ হবে, কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হবে। কিন্তু কেন্দ্র একটা টাকাও দিচ্ছে না। বাংলার সরকার মানবিক সরকার। দল যে কেন্দ্রে হেরেছে, সেখানে কাজ হবে না এমনটা নয়, সব জায়গায় উন্নয়নমূলক কাজ হবে। তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের কাজ মানুষের পাশে দাঁড়ানো।’দলের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাতে আজ অভিষেক স্পষ্ট জানিয়েছেন, বেনিফিট অফ ডাউট দিয়ে হলেও আমরা তাঁদের বহিষ্কার করেছি। তুলনায় অন্য দলের কথা টেনে এনে বলেন অন্য দল সেই পদক্ষেপ নেয় না।
কেন্দ্রীয় সরকারকে আদানি প্রসঙ্গ থেকে শুরু করে একশ দিনের কাজে টাকা না দেওয়া একাধিক বিষয়ে সমালোচনা করেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, বিপুল টাকা বাংলায় এলে ৫০ লক্ষ পরিবারকে বাড়ি করে দেওয়া হত, নদী সমস্যা মিটে যেত, প্রতি বিধানসভায় ব্রিজ তৈরি হতে পারত বিপুল খরচ করে, তৈরি হত পাকা রাস্তা। কৃষক, মৎস্যজীবীদের বাড়তি সহায়তা হত। কেন্দ্রীয় সংস্থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি। তিনি বলেছেন, ইডি- সিবিআই যদি কাউকে মিথ্যে মামলায় ডাকে, তাহলে তাঁরা যেন ‘একডাকে অভিষেক-এ’ ফোন করেন। তিনি তাঁর পাশে দাঁড়াবেন। সারদা, নারদা মামলার প্রসঙ্গ তুলে এনে বলেন, শুরু থেকেই বারবার আক্রমণ ছিল তাঁর দিকে। দুর্নীতিতে ইডি সিবিআই, বা কোনো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যদি তাঁর যোগ সাজশ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে শহিদ মিনারে এসে মৃত্যুবরণ করবেন। বক্তৃতার শেষে তিনি বললেন, দিল্লি অচল করে দেখাব, এটা আমার প্রতিজ্ঞা।
দলীয় মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অভিষেক। রাহুল গান্ধীকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, একটি সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত করবার জন্য কংগ্রেস নেতার সাংসদ পদ যদি বাতিল হয়, তাহলে ২০২১ সালের নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করবার জন্য তাঁর প্রধানমন্ত্রীর পদ কেন খারিজ হবে না? বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারির বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, বীরবাহা হাঁসদা, সুকুমার হাঁসদাকে উদ্দেশ্য করে তিনি অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন। আদিবাসী মানুষের ভাবাবেগে এটা আঘাত নয়? তাহলে কেন জেলের বাইরে থাকবে বিরোধী দলনেতা? কেন তাঁর পদ খারিজ হবে না?
নিকটে রয়েছে সরকারি কর্মচারীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সভা। সেখানে ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনকারীরা দীর্ঘ দিন ধরে বসে রয়েছেন। তাঁদের উদ্দেশে অভিষেক বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ আজ শহিদ মিনারের নীচে এই মঞ্চে রয়েছেন, তার তিন গুণ মানুষ রাস্তায় রয়েছেন। আমি ভেবেছিলাম, সভা শুরুর আগে শহিদ মিনারের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে সভা শুরু করব। কিন্তু হাই কোর্টের বাধ্যবাধকতা মেনে এই সভা করতে হচ্ছে।
বামফ্রণ্টের নেতা কর্মীরাও মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে লেডি ব্রেবোর্ন পর্যন্ত মিছিলের পথ হাঁটলেন। যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। একশো দিনের কাজে কেন্দ্রের বঞ্চনা ও গ্রামাঞ্চলে মনরেগায় তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিবাদ। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, রামচন্দ্র ডোম মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়, সিপিআই’র প্রবীর দেব, কংগ্রেসের অসিত মিত্র রয়েছেন মিছিলে।
পিছিয়ে নেই বিজেপি। শ্যামবাজার মেট্রোর সামনে পালটা ধর্না কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। উপস্থিত রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদারসহ বঙ্গ বিজেপির বড়ো বড়ো নেতারা। নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের শাসক দলের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বরাদ্দে চুরির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এব্যাপারে তাঁদের পক্ষ থেকে দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
বহুদিন একই দিনে শহরের উত্তর থেকে প্রাণকেন্দ্রে এরকম মিছিল বিক্ষোভ অবস্থান দেখা যায়নি। গোটা কলকাতা সরগরম। ছোটো- বড়ো রাস্তায় যানজট। রাজনীতির কবলে পরে নগরজীবন নাজেহাল। প্রশ্ন উঠতে পারে, একই দিনে নিজ নিজ দলের কর্মসূচি নিয়ে কেন ঝাঁপিয়ে পড়ল প্রতিটি দল ? মিছিলের ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সামনে পঞ্চায়েত ভোট বলেই এত তোড়জোড় ?
❤ Support Us