- প্রচ্ছদ রচনা
- জুন ২১, ২০২২
বিরোধী জোটের সর্বসম্মত প্রার্থী যশবন্ত সিনহা ! চূড়ান্ত মনোনয়ন ঠিক হবে আজই । যশবন্ত-কে নিয়ে আপত্তি নেই বামপ্রন্থীদের ।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী হিসেবে যশবন্ত সিনহার নাম প্রায় চূড়ান্ত । আজ ২.৩০ নাগাদ তাঁর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে। শরদ পাওয়ার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর ফারুক আবদুল্লা ও গোপাল কৃষ্ণ গান্ধীর নাম উঠে আসছিল । ফারুক সরাসরি তাঁর অসম্মতি জানিয়ে দেন। গোপাল কৃষ্ণ গান্ধীও আগ্রহ প্রকাশ করেন নি। এরকম আবহে বিরোধীরা যশবন্ত সিনহাকে বেছে নেন। তৃনমূল ছাড়াও তিন বিরোধী দল সঙ্গে সঙ্গে তাদের হ্যাঁ-সূচক মতামত জানিয়ে দেয়। তৃনমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যশবন্তকে প্রস্তুতি শুরু করার পরামর্শ দেন । যশবন্ত দলীয় দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে আজ টুইট করেছেন, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কৃতজ্ঞ । তিনি আমাকে টিএমসির সঙ্গে যুক্ত যথাযথ সম্মান জানিয়েছেন । এবার বিরোধী ঐক্যের খাতিরে এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থের জন্য কাজ করতে হবে।
স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বসম্মত বিরোধী প্রার্থীর জয়ের দূষ্টান্ত বিরলতম ঘটনা। সবসময় শাসক গোষ্ঠির মনোনীত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। রাজেন্দ্রপ্রসাদ থেকে রামনাথ কোবিন্দ পর্যন্ত একই ধারা অব্যাহত। এবার বিজেপি প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। কিন্তু শাসক দলের সংখ্যাগত অবস্থান খানিকটা দুর্বল। বিজেপি কাকে প্রার্থী করবে আজই তা জানা যেতে পারে। যাঁকেই প্রার্থী করুক না কেন, তাঁর জয় নিয়ে সংশয় ঝুলছে। একারণেই বিজেপির সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচার তৃনস্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া হবে। সবসময় বিধায়ক ও সাংসদদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তৃনস্তরে প্রচারের প্রয়োজন পড়ে না। এ ব্যাপারে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের গুরুত্ব সাধারণ মানুষকে জানানো দরকার। তাদের প্রার্থীর জয় নিয়ে কিছুটা সন্দীহান বলেই সম্ভবত বিজেপি সাধারণ মানুষের সায় চাইছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্বেও কখনও কখনও শাসকও তাদের সমর্থকেরা সংশয়মুক্ত হতে পারেন না।
I am grateful to Mamataji for the honour and prestige she bestowed on me in the TMC. Now a time has come when for a larger national cause I must step aside from the party to work for greater opposition unity. I am sure she approves of the step.
— Yashwant Sinha (@YashwantSinha) June 21, 2022
প্রণববাবুর মতো সর্বস্তরে গূহীত নেতাকেও তাঁর ভোট প্রচারে প্রবল ছোটাছুটি করতে হয়েছে। বেনজির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তাঁর জয় একটি ইতিহাস। এরকম ইতিহাসের প্রত্যাবর্তন আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নাও হতে পারে। বিজেপির ভেতরে এরকম কোনও নেতা নেই যিনি দেশে, দেশের বাইরে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় । যদি অনুন্নত শ্রেনি কিংবা জনজাতির প্রতিনিধিকে শাসক দল মনোনীত করে, তা হলে এনডিএ শরিকদের নির্বাচন থেকে দূরে সরে যাওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয়। যশবন্ত সিনহার তুলনায় বিজেপির সাম্ভাব্য প্রার্থীর ওজনে ভারী হওয়ার সম্ভাবনা কম।
আজ সকালে শারদ পওয়ারের বাড়িতে ছুটে যান সিপিএম ও সিপিআইয়ের শীর্ষনেতারা। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেন সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা। এ বৈঠকে হাজির ছিলেন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। আজ বিকেলে যে বৈঠকে হওয়ার কথা তাতে তাঁরা নাও থাকতে পারেন। এ কারণে শারদের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন । যশবন্ত-এর নাম নিয়ে এ পর্যন্ত কেউই দ্বিমত প্রকাশ করেন নি । বিরোধীদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে মনোনীত প্রার্থীকেই সমর্থন করবে সিপিএম ও সিপিআই নেতৃত্ব।
আজকের বৈঠকে ওয়েইসিকে আমন্ত্রণ জানান হয়েছে । এতে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস-সহ কয়েকটি দল। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এই ক্ষোভের ছায়া পড়বে বলে মনে হয় না। যশবন্ত সিনহা মেধাবী আর অভিজ্ঞ রাজনীতিক । তাঁর ক্যারিয়ার সবসময় বর্ণময়। কূটনীতিতে সফল ব্যক্তিত্ব। রাজনীতিতেও সমানভাবে উজ্জ্বল। অটল বিহারী বাজপেয়ী তাঁকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। দুই মন্ত্রকেই প্রশ্নাতীত দক্ষতা । মোদি জামানায় গুরুত্ব পান নি। অবহেলিত, অপমানিত বোধ করেছেন। কিন্তু রাজনীতি ছাড়েন নি। মোদি সরকারের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তাঁকে বারবার সরব হতে দেখা যায়। ২০১৮ সালে বিজেপি ছাড়লেন। ২০২১ সালে মমতার আহ্বানে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে যশবন্তকে জাতীয় সহসভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করেন মমতা । এবার প্রধানত মমতার ইচ্ছায় দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের নির্বাচনে যোগ দেবেন । দেশ তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে ।
❤ Support Us