- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- মে ৩০, ২০২৪
শেষ দফা ভোটের আগেই বাংলায় সিএএ-এর শংসাপত্র বণ্টনের প্রক্রিয়া শুরু। বিরোধিতায় অনড় মমতা , এই আইন আমাদের বৈচিত্র্য মুছে দেবে । বিভেদের রাজনীতি যুক্ত হলে বিজেপিকে একটিও ভোট নয়

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলে এসেছেন, পশ্চিমবঙ্গে তিনি কিছুতেই সিএএ, অর্থাৎ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনতে দেবেন না। বুধবারও ডায়মন্ড হারবার লোকসভার অন্তর্গত মেটিয়াবুরুজে আয়োজিত সমাবেশে মমতা বলেছেন, ‘সিএএ, এনআরসি বা ইউসিসি আমাদের বৈচিত্র্যকে মুছে দেবে। মানুষ যদি বিভেদের রাজনীতি না চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে।’
নির্বাচন চলাকালীন যে তলে তলে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে, এ কথা ভাবতেই পারেনি বিরোধী দলগুলি। প্রথম দফায় ১৫ মে ৩০০ জন আবেদনকারীকে নাগরিকত্বের শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল। দু সপ্তাহ পর, গত বুধবার থেকেই পশ্চিমবঙ্গেও সিএএ -এর শংসাপত্র বণ্টনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল । একইভাবে হরিয়ানা ও উত্তরাখণ্ডেও নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণের প্রেক্ষিতে অনুমোদন দিয়েছে দুটি রাজ্যের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কমিটি।
গত মার্চ মাসে ভারত সরকার নাগরিক সংশোধনী বিল কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ইরান থেকে ধর্মীয় কারণে কোনও ব্যক্তি (হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্শি , খ্রিস্টান) ভারতে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪-র আগে শরণার্থী হয়ে এলে, তাঁকে একটি নির্দিষ্ট পোর্টালে আবেদন করতে হবে। আবেদন পত্র যাচাই করার পর নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। আগে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব পেতে গেলে কমপক্ষে এগারো বছর শরণার্থী হয়ে থাকতে হত । ২০১৯ সালে আসা নতুন নাগরিক সংশোধনী আইনে মেয়াদ কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। এছাড়াও বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বর কিংবা তার পরে যাঁদের ভারতে জন্ম, তাঁদের বাবা-মা দু’জনেই ভারতীয় হলে, তিনিও এ দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। বাবা অথবা মায়ের মধ্যে অন্তত যে কোনও একজনকে ভারতের নাগরিক হতে হবে।
এই ইস্যুতে সবথেকে বেশি চর্চা হয়েছিল মতুয়াদের নিয়ে। বাংলায় নাগরিকত্ব দেওয়ার আগেই মতুয়া অধ্যুষিত অঞ্চলে ভোট মিটে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে , নির্বাচনের ফলাফলে এর কতটা প্রভাব পড়বে তা আগে থেকে নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, বিশ্বের প্রতিটি দেশে নাগরিক আইন ও নাগরিক পঞ্জী রয়েছে । কিন্তু কোথাও ধর্ম বা ভাষার ভিত্তিতে এই আইন চালু হয়নি । ভারতের মতো উদার ও বহুত্বময় দেশে অনেক ভেবেচিন্তে আইন প্রণেতারা বিভেদমূলক বিধি তৈরি করেননি। পাকিস্তানের সঙ্গে দেশভাগের পর যে চুক্তি হয়েছিল , তাতে সবিশেষ উল্লেখ করা হয় , দুই দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু উদ্বাস্তু হয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে আশ্রয় নিলে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। লক্ষ লক্ষ বাঙালী ও পাঞ্জাবি পাকিস্তান থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। একইভাবে বহু ভারতীয়কে প্রতিবেশী পাকিস্তানের স্মরণাপন্ন হতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই , তাদের গ্রহণ করে দুটি দেশ। এটাই অলিখিত-অঘোষিত নিয়ম। বিজেপি সরকার এক্ষেত্রে সরাসরি বিভাজন নীতি গ্রহণ করল এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে নাগরিক আইনের আওতায় নিয়ে এসে স্বীকৃতি জানাতে চাইল। বিজেপির এ কৌশলকে তার মেরুকরণের রাজনীতির অঙ্গ হিসেবে প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা । আর তাদের সমর্থন জানালেন সমাজের বিশিষ্টজন । চাপে পড়ে আইনের কিছু সংশোধনী গৃহীত হয়েছে । তবু বিষয়টি ক্লেদমুক্ত নয় । আশঙ্কা এতে বিভাজনের রাজনীতি আরও বেশি প্রশ্রয় পাবে। আখেরে মানুষের মৌলিক সমস্যা থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়ার এও আরেক ঘৃণ্য ফন্দি । আসাম , বাংলা ও অন্যান্য রাজ্যের সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক আইনকে সুনজরে দেখেননি। এখনও প্রশ্ন তুলছেন । বাংলার মুখ্যমন্ত্রী গোড়া থেকেই বিভ্রান্তিকর নাগরিক পঞ্জী ও নাগরিক আইনের বিরোধিতা করেছেন । দৃপ্ত ও সরব উচ্চারণ থেকে এক তিলও তিনি সরে দাঁড়াননি। সম্ভবত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দ্রোহ , তাঁর তীব্র বিরোধিতা নিয়ে জেগে থাকবেন । কোনও কারণে বিজেপি ক্ষমতাচ্যুত হলে আইনটি অগ্রাহ্য হতে পারে কিংবা তার সংশোধিত চেহারা সংসদে আবার উপস্থাপিত করা হবে।
❤ Support Us