- ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
- জানুয়ারি ১১, ২০২৩
পৌষালি উৎসবের নয় শুধু, ভিন্নতর সত্যেরও উদ্বোধন আজ। টানা চারদিন গানে গানে, সংযত হুল্লোড়ে রাজডাঙা শাসন করবে বাংলার চিরায়ত পিঠে-পুলি

মুখে মুখে চাউর হয়ে গেছে, অ্যাক্রোপোলিস থেকে নিউ বালিগঞ্জ, রবি ঠাকুরের মোড় থেকে বাইপাস সংলগ্ন ভিআইপি বাজার পর্যন্ত, বিস্তীর্ণ এলাকাকে প্রতিষ্পর্ধার সমূহ কাজ দিয়ে, সংস্কৃতির ধারা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন বরো ১২-র চেয়ারম্যান সুশান্ত কুমার ঘোষ। আগে ছিলেন ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুর কাউন্সিলর। এখন, তাঁর হেফাজতের ছায়া পড়েছে ওয়ার্ড নম্বর ১০৮-এ। রবি ঠাকুরের মোড় থেকে অ্যাক্রোপলিস হয়ে পশ্চিম, আরও পশ্চিম এবং সংলগ্ন উত্তর দক্ষিণ এলাকা দেখনদারিতে, নবায়নে পার্ক স্ট্রিটের সমতুল্য, সমকক্ষ হয়ে উঠছে।
সুশান্ত কর্মময় ব্যক্তি। সংস্কৃতিবোধ তাঁর স্বশাসিত। সংস্কৃতিই তাঁর রাজনীতি। তাঁর হাতের তালুর মতই পরিচিত তাঁর এলাকা। বাইপাস নোনাডাঙা হয়ে চৌবাগা পর্যন্ত এবড়ো খেবড়ো রাস্তা, জীর্ণ বস্তি , ঘরবাড়ি সবই বদলে যাচ্ছে অঘোষিত বিপ্লবের নিঃশব্দ চরণে। এরকম এক কারিগরের বসে থাকা, হাত-পা গুটিয়ে চুপ চাপ দেখে যাওয়া, অসহিসি আলস্য কি সম্ভব? না ১২ মাসের প্রচলিত ১৩ পার্বণের সঙ্গে অসংখ্য পার্বণ এসে যোগ দেবে তার সামাজিক পরিষেবা আর সংস্কৃতির সেবার যে কোনও সহজিয়া উচ্চারণে? প্রশ্নের উত্তর সহজ। নয় কারও অজানা।
তাঁরই সাংগঠনিক উদ্যোগে, ২০১১ সাল থেকে রাজডাঙা এলাকায় শুরু হয় বিরতিহীন পিঠে-পুলি উৎসব। এ কি শুধু উৎসব? না পৌষালি উৎসবকে ঘিরে জনারণ্যের রুচি আর আবহমান সংস্কৃতির পুনর্বিন্যাস। যে বিন্যাসে গান, কথা আর বঙ্গ সংস্কৃতির নানা অঙ্গ এসে নৃত্যরত পৃথিবীকে যোগান দেবে নবান্নের শাশ্বত আর নবোতর ঘ্রাণ। ২০২৩-এর পিঠেপুলি উৎসব আগের চেয়ে বহু বেশি সতেজ। এবার অনেকানেক উচ্ছ্বাসে মুখরিত হতে পারে। পূর্বপ্রস্তুতি দেখে এরকমই মনে হচ্ছে।
আমাদের অনুমান, গাঙ্গেয় উপত্যকা থেকে পদ্মার এপার-ওপার জুড়ে নবান্ন ছোঁওয়া যে সব উৎসব হয়, যে যে মেলা আর উৎসবের স্পর্শ পড়ে বরাক আর ব্রহ্মপুত্রের বাঙালি কৃষক অধ্যুষিত এলাকায়, সে সবের মধ্যে উত্তর-পূর্ব কলকাতার রাজডাঙার পিঠে পুলি উৎসব মর্মে যেমন সেরা, কর্মের আয়তনেও তেমনি বৃহত্তম। উৎসব নিয়ে রাবিন্দ্রীক সংজ্ঞা এখানে ব্যবহারিক দিক থেকে সার্থক। রবি চেতনার বিস্তারেও পান্থজনের সঙ্গী। উপচে পড়া উৎসাহ, তারুণ্যের কলরব, আড্ডা, ভুরি ভোজ আর রমণী কুলের তদারকিতে পুলি-পিঠের নৃত্যের দাপটে শীত যত দূরে আরও দূরে যায়, উৎসবের স্থপতি সুশান্ত কুমার ঘোষের সংস্কৃতি প্রেম পৌষালি প্রেমে ঠিক তেমনি, ঠিক ততটাই মিশে যায়, নেমে আসে গণ অভ্যাসের রুচি আর বাঙালির নিজস্বতাবোধের ভেতরে ও বাইরে। ব্যক্তিসত্ত্বার সংস্কৃতি চেতনার সামাজিক রূপান্তরে সুশান্ত ঘোষের ব্যক্ত অব্যক্ত মনোভাব প্রজন্মকে অবশ্যই ভাবিয়ে তুলবে। প্রাণ জোগাবে ‘বঙ্গ কালচারের’ ভিন্নতর পুনরুত্থানে। ফাস্ট ফুড হ্যাবিটের সামনেও এটি এক অনাগত চ্যালেঞ্জ।
এই আয়োজন নিছক ভোজ উৎসব নয়, নবান্নের প্রাক্ মুহূর্তে কৃষকের স্নিগ্ধ হাসি আর রাশি রাশি আনন্দের সমাবেশে সার্বিক রুচিবোধের যে ছবি আমরা দেখি, তারই পুনরুজ্জীবিত চেহারায় নবায়ন ঘটতে থাকে এরকম উৎসবে। কৃত্রিম নাগরিকতার পরাজয় সূচিত হয় এখানে। শহরকে নিয়ে যায় অতীতের শস্যভূমিতে। তাকে বলতে বাধ্য করে, দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ ‘নগর’। ফিরিয়ে দাও আমাদের সভ্যতা আর সংস্কৃতির ভিত। সুশান্ত আর তাঁর সহযোগীরা মোক্ষম ক্ষোভ আর সুদীর্ঘ বেদনাকেও প্রকারান্তরে স্পর্শ করেছেন পৌষালি আর পিঠে পুলি উৎসবকে সংযুক্ত করে। আগে যাঁদের যাত্রাপালার নগরায়নে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত, তাঁরাই আজ মেতে ওঠেন সর্বজনীন পিঠে-পুলির ছন্দে, বর্ণে ও গন্ধে। এভাবে নগর চালিত সভ্যতা অতীতে প্রবেশ করে বর্তমানে ফিরে আসে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে। এ রুচিবোধের আর এক নাম স্মৃতি উদ্ধার কিংবা নতুন আর পুরাতনের একাত্মতার নব বিন্যাস।
বাঙালি সব খায়। ভাত, হোঁচট, বকুনি, প্রহার সবই তার নিয়তি নির্দিষ্ট খাদ্য। এত খায় বলেই বিশুদ্ধ, মিশ্রিত, জীবন্ত তার ‘ফুড কালচার’। নিজে খাওয়ায় অন্যকেও খাওয়াতেও ভালোবাসে। কৃষি সভ্যতার নির্মল সন্তান সে। তার নির্মলতাবোধকে নির্মলতর করে তোলে খাদ্যকেন্দ্রিক উৎসব। শস্য রোপণের প্রাক্কালে যেরকম , ঠিক সেভাবেই ফসল তোলার মরসুমে ও। রাজডাঙার ক্লাব সমন্বয় পৌষের যে জয়ধ্বনি সাজিয়েছে, তা অন্যান্য অঞ্চলের তারুণ্যকে প্রাণিত করবে। সুশান্ত আজ ভরা চিত্তে উৎসবের ভরা মাঠে। মধ্যরাতেও স্মিত হাসির ঝলক তাঁর স্পন্দিত মুখে। আর তখনই হয়তো ঝঙ্কার তুলবেন ইন্দ্রনীল, ইমন ,নচিকেতা, স্নিগ্ধজিৎ। কণ্ঠে ছড়াবে চন্দ্রবিন্দু, কখনও বেজে উঠবে দীর্ঘাঙ্গ সুরজিতের চওড়া মধুর সুর, ‘বারান্দায় রোদ্দুর’।
এ রকম মুহূর্তে ৫০ স্টলের পাঁচ শতাধিক নারী তখন সুখাদ্যের পসরা সামলাবেন। সব স্টলে মহিলা আর মহিলা… মাতৃশক্তির এও এক সমগোত্রীয় উদযাপন।
❤ Support Us